কোন মানুষকে যদি ক্ষমতা দেয়া হত যে সে অন্য মানুষের মনের ভেতরে চলে যাবে, তার মনের কথা সয়ারসরি বুঝতে পারবে তাহলে পৃথিবীর চেহারা কেমন হতো? ভয়ানক হতো নাকি অন্যের কাছে ভাল থাকার জন্য তাকে ভাল হয়ে যেতে হতো? ড. হুমায়ূন আহমেদের ‘কুহক’ উপন্যাসটার অডিও শুনতে গিয়ে এমন অনেক কিছুই মনে হচ্ছিলো। কিহকের ঘটনাটাও এমন বিষয়ের উপরেই লেখা হয়েছে। আমাদের মনের মধ্যে যে সব ভয়ঙ্কর চিন্তা ধারা গুলা চলে সেগুলা যদি অন্য কেউ জেনে ফেলতো, বা আমি যদি অন্য কারও মনের কথা জেনে ফেলতাম, তাহলে কি আদৌ কেউ কারও সাথে থাকতে পারতো? কোন স্বামী বা স্ত্রী কেউ কি একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করতে পারতো? আমাদের জীবনে আমরা ক্রমাগত যে সব সমঝোতা করে চলেছি, সেগুলা কি অনের চোখে ধরা পড়ে যেত না? সোজা কথা বললে, আমরা প্রতিনিয়ত যে অভিনয় করে চলেছি সেগুলো অন্যের চোখে কিন্তু মারাত্মক প্রকট হয়ে দেখা দিতো। আমাদের সব জারিজুরি কিন্তু ফাঁস হয়ে যেত!
একবার সৃষ্টিকর্তার কথাটা চিন্তা করে দেখুন তো! উনি তো অন্তর্যামী। সবার মনের কথা জানেন। সবকিছু জানেন। আমাদের মনের কলুষতা গুলাও উনি প্রতিনিয়ত জানছেন, অকপটে সহ্য করে যাচ্ছেন। এখন কিছুই বলা হবে না। বলার সময় তো রয়েই গেছে। কে বিশ্বাস করবে কি করবে না সেটা তার ব্যাপার। যা হবার সেটা তো হবেই। এখানে আমার একটা কথা প্রায়ই মনে হয়। অবিশ্বাসীদের মতে মৃত্যুই যদি শেষ কথা হয়, তাহলে তো সেও বাঁচল আমিও বাচলাম! সব শেষ বলে মহাকালের মহাশূন্যে মিলিয়ে গেলাম! আর যদি পরকাল সত্যি হয়? তখন কি হবে? তখন কি কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সুযোগ থাকলো?
আমার এলোমেলো ভাবনার মধ্যে অনেক কিছুই ধরা দেয়। আমি তো মাঝে মাঝে ভালোবাসা নিয়ে ভাবি। ভালোবাসা যে আসলে কি, কিভাবে যে শুরু হয়, কিভাবে এর গভীরতা বাড়ে আর কিভাবেই বা সেই ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়, এসব কিছুই আমার কাছে অমীমাংসিত রহস্যের মত মনে হয়। এমন কিছু বিষয় যা মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে ঠিকই কিন্তু আমি এর কোন উত্তর জানি না। আবার আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাকে যদি কেউ গভীরভাবে ভালবাসে তাহলে আমি সেই ভালবাস আউপেক্ষা করবো কি করে? ভালোবাসা কি আদৌ উপেক্ষা করা যায়? একজন মানুষ কখন ভালোবাসা উপেক্ষা করতে পারে? ভালবাসার শক্তি কি এতই দুর্বল যে উপেক্ষা করা যায়? আরেকটা প্রশ্ন আমার মধ্যে ঘুরপাক খায়, সেটা হলো, কাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত? আমি যাকে ভালবাসি নাকি যে আমাকে ভালবাসে? এই প্রশ্নটাও কিন্তু অনেক আপেক্ষিক! তবে আমি আমার নিজের কথা বলতে পারি। আমি যাকে ভালবাসি, কোন সার্থ ছাড়াই ভালবাসি। কিছুই চাই না। আমার কোন প্রত্যাশা নেই ভালবাসার মানুষটার কাছে। সে ভালও থাকুক। আর আমাকে যদি ঐ দুই অপশনের একটা বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে মনে হয় আমি তাকেই বেছে নিতাম যে আমাকে ভালবাসে! আমি বিশ্বাস করি একটা জিনিস, যে আমাকে ভালবাসে, আমি যদি তাকে আপঙ্করে নিতে পারি, তাহলে একসময় সেই মানুষটাকে ভালোবাসা আমার জন্য খুব কঠিন কিছু হবে না। আমি পারবো। এই জীবনে তো অনেক কিছুই পারলাম!
ভালবাসা কি আসলেই উপেক্ষা করা যায়? আমাকে যদি কেউ আসলেই ভালোবেসে থাকে, তাহলে কি আমি চাইলেই তার ভালোবাসা উপেক্ষা করতে পারবো? ব্যক্তিগতভাবে আমি সেটা পারবো না। যারা মনে করে তারা পারবে, ভালও করে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুক তো পারে কিনা! আমার বিশ্বাস পারে না। নিজের মনের সাথে জিদ করে যদি ভালবাসার মানুষকে উপেক্ষাও করা হয়, তাহলে সেই ভালবাসার মানুষকে নিজের অগোচরেই মনে আরও বেশী করে স্থান দেয়া হয়ে যায়। প্রকৃত ভাল্বাসায় উপেক্ষা করা যায় না। যে ভালবাসা উপেক্ষা করা হয়, তাই বেশী করে মনের মধ্যে স্থান করে নেয়। আমরা যে জিনিস ভুলে যেতে চেষ্টা করি সেটা যেমন আরও বেশী করে মনে থাকে ব্যাপারটা অনেকটা এমনই। ভালবাসার শক্তি অনেক। এটাকে উপেক্ষা করতে চাইলেও পারা যায় না। যে পারে মনে করে, সে আসলে নিজেকে না বুঝেই করছে। নিজেকে ইচ্ছাকরে কারাবন্দী করছে। নিজের সাথেই নিজে প্রতারণা করছে। এই পৃথিবীতে কিন্তু সবটুকুই অভিনয় হয় না। কিছু কিছু বাস্তব জিনিসও থাকে। কিছু কিছু সত্যি ভালবাসাও থাকে। সত্যিকারের ভালবাসার মানুষও থাকে।