একবার এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিলো। নানা বিষয়েই কথা হচ্ছিলো। তখন এক প্রসঙ্গে বলেছিলাম আমরা অনেক সময় অনেক কিছু বলে থাকি কিন্তু ভেতর থেকে সেটা মানতে পারি না। তার একটা হল ক্ষমা। শর্তহীন এবং দাগহীন ক্ষমা মনে হয় শুধু সৃষ্টিকর্তাই করতে পারেন। আমাদের মানুষদের এত ক্ষমতা দেয়া হয়নি যে আমরা সবকিছু বলে ক্ষমা করে দিতে পারি। মহাপুরুষরা কতটুকু পারেন সেটাও জানি না কারণ তারাও মানুষ। নবীজী তায়েফের ঘটনায় নিঃসন্দেহে অনেক শারীরিক ও মানসিক অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন সত্য। উনি শর্তহীনভাবে সেটা ক্ষমা করে দিয়ে উলটা তাদের হেদায়েতের জন্য প্রার্থনাও করেছেন রকাক্ত শরীরে। পাথরের আঘাতে উনার পিঠে বসন্তের দাগের মত দাগ হয়ে গিয়েছিল। পরে একদিন উনার উন্মুক্ত পিঠের কিছুটা দেখতে পেয়ে যখন হযরত আয়েশা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনার কি বসন্ত হয়েছিল? তখন উনি কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলেন, যখন দাওয়াত দিয়ে গিয়েছিলাম তখন তোমার দেশের মানুষ আমাকে পাথর মেরে এই অবস্থা করেছে। আমি উনাদের কথপোকথনের কিছুটা ভাবানুবাদ উল্লেখ করলাম মাত্র। কষ্ট যে পেয়েছিলেন সেটা ভুলতে পারেন নি। অভিসম্পাত ও করেননি কখনও উনাকে বা উনার পরিবারকে কষ্ট দেয়ার জন্য। কিন্তু যখন উনার কিছু সাহাবীকে রাজী’র ঘটনায় ধোঁকাবাজি করে বিনা অপারাধে হত্যা করেছিল শত্রুরা, তখন তাদের জন্য অভিসম্পাত করেছিলেন। আমি বলতে চেয়েছি মহামানবরাও মানুষ। ক্ষমা উনারাও করতে পারেন তবে সৃষ্টিকর্তার মত দাগহীন ক্ষমা কোন মানুষ করতে পারে না। পারলে জীবনটা অনেক সহজ হতো। কিন্তু এই পার্থিব জীবনের কোন কিছুই সহজ না।
আমার এই কথাগুলোর আড়ালে অনেক কিছুই চাপা দিয়ে দিলাম। উল্লেখ আর করলাম না। হয়ত সেগুলো আসবে আবার কোন না কোন প্রসঙ্গে। আসুক মানা নেই। শুধু এইটুকুই নিজেকে বলতে চাই, জীবন চলার পথে, প্রতিপদেই হোঁচট খেতে হয়। অনেক রাস্তা সামনে আসে। অনেক বাধাও থাকে। কিন্তু দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অন্তত যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তো এভাবেই চলতে হবে। আর সেই কন্টকময় চলার পথে কত মানুষ কত কথা বলবে! সেগুলাতে কি কান দিলে চলবে? নিজের গতি থামিয়ে দেয়া মানে তো মৃত্যু। চলার গতি কমানো যাবে না। আমি নিজে সবসময় মনে একটা কথা পোষণ করি। আমি যদি ধর্মবিরোধী, দেশবিরোধী কোন কাজ না করি, তাহলে চোখ বন্ধ করে সেই কাজে অগ্রসর হওয়া উচিত। কে কি বললো না বললো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। জীবনতো একটাই। অনেক কিছু ত্যাগ স্বীকার করেই চলতে হয়। কিন্তু সেই ত্যাগ স্বীকারেরও একটা সীমা আছে। ত্যাগ স্বীকার করতে করতে যদি নিজের অস্তিত্ত্বের উপরই আঘাত আসে তাহলে সেই ত্যাগ না করাই উচিত।