নতুন বছরের প্রথম লেখা। আবার শুরু হলো নতুন ইংরেজী বর্ষ ২০২২। কত রকম আশা প্রত্যাশা নিয়ে আর কত রকম দুঃখ জরাকে পেছনে ফেলে শুরু হয় নতুন এক একটি বছর। প্রতিবারই ভাবি, এই বছরে আরও ভাল কিছু হোক। আগের বছরের যত অপূর্ণতা সব পূর্ণ হয়ে যাক! আশা করতে তো দোষ নেই কিছুতেই কিন্তু নতুন বছরেও যে নতুন নতুন আশার সাথে নতুন নতুন কিছু হতাশাও যুক্ত হতে যেতে পারে সেটা কিন্তু আমরা ভাবি না। আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই ইতিবাচক ধারণা নিয়ে। নেতিবাচকতাকে যত পেছনে ফেলতে পারবো তত সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য সহজ হবে। তবুও কিছু না কিছু নেতিবাচকতা থাকবেই জীবনে। এই নেতিবাচকতাগুলো যদি না থাকতো তাহকে ইতিবাচকতার গুরুত্ব আমাদের কাছে থাকতো কি? থাকতো না। এজন্য কোন কিছুকেই এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নেই।
আমাদের এই জীবনে সবকিছুকেই “চেক অ্যান্ড ব্যালান্স” করে চলতে হয়। এটাই মনে হয় আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় নিয়তি। জীবনে যে যত বেশী চেক অ্যান্ড ব্যালান্স করে চলতে পারবে, সে তত বেশী সুখী হতে পারবে। এ সবকিছুই আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় ধরা দেয়। আর আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি, সেটা হলো, জীবনে সুখী হতে চাইলে, মানুষের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা সম্পূর্ণ ত্যাগ করা উচিত। কারণ মানুষের কাছ থেকে কিছু আশা করা মানেই হল নিজের মনের মধ্যে অপূর্ণতার অনেকগুলো ফাঁদ নিজের অজান্তেই তৈরী করে ফেলা। যে ফাঁদে নিজেরাই নিজেদের বন্দী করে কষ্ট পেতে থাকি আমরা। আসল সুখী মনে হয় সেই মানুষগুলো যারা কোন রকম বিনিময় প্রত্যাশা না করে একতরফা ভাবে মানুষকে ভালবাসতে পারে। তবে সবকিছুর উর্ধ্বে আমরা মানুষ তো! কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা তো আমাদের জীবনে ত্থাকবেই। আমি আমার জীবনের তেমনই একটা সীমাবদ্ধতা কিছুদিন ধরেই নিজেদের মধ্যে বোধ করছি। আজকে বছরের শুরুতে কলম ধরেছি সেটা লিখে রাখার জন্য। দুঃখিত, কলম না বলে কি-বোর্ড বলাই যুক্তিসঙ্গত। কারণ কাগজে তো লিখছি না। কি-বোর্ডে টাইপ করছি।
ইদানিং আমার নিজেকে ভীষণ ‘স্ব-বিরোধী’ মনে হয়। আমি সারাজীবন এটার একরকম বিরুদ্ধাচরণই করে এসেছি। এখানে স্ববিরোধী বলতে আমি বুঝিয়েছি, নিজের মনের চাহিদার বিরুদ্ধাচরণ করে। আমার মন চাইছে এক জিনিস, হয়ত ভীষণ রকম করেই চাইছে কিন্তু তবুও আমি বলছি তার উল্টোটা অথবা আমি করছি এমন কিছু যা আমার মনের চাওয়ার বিপরীত। আগে মনে হতো না এমন কিছু করে ফেললেও। এখন এগুলা মনে হয় এবং আমি বুঝতেও পারি। এটা কি বয়সের ইফেক্ট? মানে বয়স বাড়ার সাথে সাথে চিন্তা ধারার যেমন পরিবর্তন আসে ঠিক তেমনি নিজের স্ববিরোধী আচরণগুলাও আমি ধরে ফেলতে পারছি! এমন কিছু কি? জানি না! আমি যে সব প্রশ্নের উদয় ঘটাই আমার লেখায়, তার বেশীরভাগের উত্তরই আমি জানি না। পাঠকের মনে হতে পারে আমি সাসপেন্স তৈরী করি। এমন ধারণা আমার সম্পর্কে করে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি এমন উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্নগুলো তৈরী করি না। আসলে আমি নিজেও সন্দিহান থাকি। এজন্য জানতে চাই। কিন্তু কাকেই বা জিজ্ঞাসা করবো আর কেই বা উত্তর দিবে এসব উদ্ভট প্রশ্নের? এইযে আমার স্ববিরোধী আচরণে আবার চলে গেলাম। আমি জানি উত্তর দিবে না কেউ, তবুও একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে আমি উত্তর পেয়ে যাবো। অপেক্ষার ফলাফল জানা আছে কিছুই পাবো না, তবুও অপেক্ষা করেই যাচ্ছি। যদি আমার মনের মত কিছু পেয়ে যাই।
প্রিয় জিনিস কাছে পেতে কার না মন চায়? কে না চায় প্রিয় মানুষ তার হোক? তবুও সব প্রিয় কি নিজের হয়? সব পছন্দের জিনিস কি নিজের কাছে রাখা যায়? যায় না। অনেক পছন্দের জিনিসকেও আমাদের ভালবাসার কারণেও দূরে রেখে দিতে হয়। একটা খুব সাধারণ উদাহরণ দেয়া যায়। সন্তান তার বাবা মায়ের কাছে অনেক প্রিয় হবে সেটাই তো স্বাভাবিক। সন্তানকে যারা সত্যিই ভালবাসেন, সেই সব পিতা মাতা অবশ্যই চাইবেন সন্তান সামনেই থাকুক। কিন্তু লেখাপড়ার কারণে অথবা জীবিকার প্রয়োজনে সেই সন্তানকেই বিদায় দিতে হয় প্রবাসের উদ্দেশ্যে। মন চাইছে সন্তান কাছে থাকুক, অথচ দরকারের জন্য তাকেই মনের বিরুদ্ধে যেতে দিতে হচ্ছে। তেমনি অনেক ভালবাসার জিনিসও মনে হয় এমন। মন চাইছে আমার ভালবাসাটা আমার হোক। কিন্তু আমি যেমনটা ভেবেছি তেমনটা তো হয় না। তখন সেই ভালবাসা যেন অক্ষত থাকে, সেই উদ্দেশ্যে আমাদের দূরে চলে যেতে হয়। তবুও চাইবো ভালবাসাটা টিকে থাকুক। একতরফা হলেও, দূর থেকে হলেও ভালবাসাটা বেঁচে থাকুক। আমার কাছে এলে যদি ভালবাসাটা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে দূরে থেকে হলেও ভালবাসাটা ভাল থাকুক। এটা না হয় আমি বোধ করছি আর ভাবছি আমি স্ববিরোধী হয়ে যাচ্ছি। পাগলের প্রলাপের মত কিছু আগোছালো কথা লিখে যাচ্ছি। নিজেও তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। কিছু কথা বলছি আর কিছু অগোচরে রয়ে যাচ্ছে।
থাকুক কিছু ভালবাসা তার মত। সব ভালবাসা তো আর আমার মত করে আমার কাছে আসবে না। এটাই যে নিয়তি। আমাদের জানা আর প্রাপ্তির মধ্যে অনেক ব্যবধান নিজেরাই তৈরী করি। দুরত্ব বাড়াবোনা এটা ভাবতে ভাবতেও দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলি। থাকুক আমাদের কিছু প্রিয় মানুষ তাদের মত করে। থাকুক কিছু স্ববিরোধী আচরণ। আমি স্ববিরোধী হই আপত্তি নেই। শুধু এইটুকুই প্রত্যাশা, আমার ভালবাসা স্ববিরোধী না হয়ে যায়।