বিজ্ঞানে লেখাপড়া করলেও আমি যে খুব বিজ্ঞান মনষ্ক তা মনে হয় না। অনেকেই কল্পবিজ্ঞানের অনেক জিনিস পত্র মুভি তে দেখে বা বইতে পড়ে সেগুলা আমি বেশী না দেখলেও খুব একটা যে মন টানে তেমনও না। মাঝে মাঝে ভাল লাগে আরকি। টাইম মেশিনের ধারণা চিন্তাধারা তো কতই শুনেছি! এমন একটা ম্যাশিন যা দিয়ে সময়ের এপাশ ওপাশ করা যাবে! আমার কাছে বড় গোলমেলে লাগে ব্যাপারটা। কারণ, আমি যদি ধরে নেই, আমাদের সাপেক্ষে ভবিষ্যতে টাইম মেশিন আবিষ্কার হবে কোন এক কালে। সেটাই যদি হয়, তাহলে তো সেই ভবিষ্যতের মানুষগুলো এখন তাদের সাপেক্ষে অতীত অর্থাৎ যা আমাদের কাছে বর্তমান, এই সময়ে চলে আসার কথা। কিন্তু এমন কোন কথা কি পাওয়া গেছে যে ভবিষ্যতের কিছু অদ্ভুত মেধার মানুষ আমাদের কাছে চলে এসেছে? এমন তো কিছু শোনা যায় না। এলিয়েন নিয়ে রহস্যেরই কি কোন কূল কিনারা হয়েছে? আমাদের জানা যতই অগ্রসর হচ্ছে ততি যেন আরও বেশী করে আমরা বুঝতে পারছি যে আমাদের অজানার মাত্রাটাই কত বেশী আর কত রহস্যময়। এর কোন ঠাই তো পাওয়া যাচ্ছে না।
কয়েক মাস আগে বন্ধু কনকের দেয়া একটা ভিডিও ক্লিপ দেখে আমার মোটামুটি রাতের ঘুম হারাম হবার উপক্রম হয়ে গেছিলো। ভিডিওটাতে এমন একটা সত্যি ঘটনার উল্লেখ আছে যে রহস্যের কোন কূল কিনারা পাওয়া যায়নি। ‘টরেড’ নামীয় এক দেশ থেকে আগত একজন মানুষের দেখা পাওয়া গেল অথচ এই নামের কোন দেশ পৃথিবীতে নেই। সেই মানুষটাও আবার কোথায় কিভাবে গায়েব হয়ে গেল সেটারও কোন সমাধান কোথাও নেই। কারও দেখতে ইচ্ছা করলে Man from Taured লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন।
আমার লেখালিখির সবচেয়ে বড় দোষ হচ্ছে, ভূমিকা অতিরিক্ত বেশী হয়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু হচ্ছে না। আমি মূলত এটাই বলতে চাচ্ছিলাম যে আমার প্রায়ই মনে হয়, যদি অতীতে চলে যেতে পারতাম! যদি আমারও একটা টাইম মেশিন থাকতো, আহা তাহলে কি মজা করে অতীতে চলে যেতে পারতাম(!) আর বর্তমানে উপলব্ধি করা ভুলগুলোকে আবার অতীতে গিয়ে শুধরে আসতে পারতাম যদি! কি সব অবাস্তব আর কাল্পনিক ভাবনা। কিন্তু আমার মনে হয়, অতীতে বা ভবিষ্যতে একটু ঘুরে আসার বাসনা মনে হয় কম বেশী সব মানুষের মনেই কিঞ্চিত উদয় হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। আমার তো প্রায়ই মনে হয়। অতীতে যেতে পারলে এটা করতাম, ওটা করতাম না এমন কত কিছু মনে হয়। কিন্তু সময় তো কাউকে ছাড়ে না। বর্তমানের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে অতীতে গিয়ে শুধরে আসা তো যায় না। অতীত সবসময়ই একটা দুর্ভেদ্য অলঙ্ঘ্য দূর্গের মধ্যে বন্দী থাকে। শুধু মনের কল্পনাতেই তাকে আনা যায়, বাস্তবে নয়। অতীত সবসমই আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে। যা হয়ে গেছে তাকে আর ফেরানো যাবে না কিছুতেই, শত সহস্র সাধনা করলেও সে ফিরবে না।
আর ভবিষ্যৎ? সে তো আসবেই। কিন্তু কিভাবে আসবে আর কি হবে সেটা জানার কোন উপায় নেই। সেটার জন্য অপেক্ষা করে যেতে হবে। অতীত আর ভবিষ্যতের মধ্যে বর্তমানের অস্তিত্ত্ব কত সংকীর্ণ সেটা কি আপনা বুঝতে পারি কখনও? গণিতের ভাষায় বলতে গেলে আমার কাছে বর্তমানকে মনে হয় দুইটি তলের ছেদকের মত! সেটা শুধু মাত্র একটা রেখাই! দুইটি তলের ছেদক তো নতুন কোন তল তৈরী করছে না!
যে অতীতে যেতে পারছি না, যে অতীত কে শোধরাতে পারি না আমরা, সেটা নিয়ে চিন্তা করে বর্তমান কে নষ্ট করলে দুর্গতি বাড়া ছাড়া তো কমবে না। যা কখনও সম্ভব নয়, সেটার পিছনে ছুটে নিজের জীবন ক্ষয় করে লাভ কি? কোন লাভ নেই। বরং অতীতে করে আসা কোন ভুল যদি জীবনে প্রকট ভাবে পীড়া দেয়, তাহলে সেই ভুল যেন আর না হয়, তেমনটা চেষ্টা করে যাওয়াই তো উচিত। অতীতের কষ্টকে সামনে নিয়ে এসে বর্তমানের সুন্দর মুহূর্ত কেন নষ্ট করি আমরা? আমাদের কে বাস করতে হয় প্রতি মুহূর্তে বর্তমানে, কাজেই বর্তমান কি করে সুন্দর হয় আর কি করে আমরা ভালভাবে বাঁচতে পারি, সেটাই তো কাম্য। যা চলে গেছে, তা আরও দূরে যাক না, কি যায় আসে তাতে? আমার হাতে তো বর্তমান আছে। এই বর্তমানেই সুন্দর করে বাঁচি আর এই বর্তমানে এমন কিছু পুনরায় আবার না করে বসি যেন এগুলো অতীত হয়ে আবার আমাকে পীড়া দেয়ার কোন সুযোগ পায়। সবকিছুই মাথায় আসে। ভাবনাগুলো উঁকি মারে আর মনের আঙ্গিনায় দোলা দিয়ে চলে যায়।