কিছু কথা না বললেই নয়

কিছু কথা না বললেই নয়। আশাকরি মনে রাখবেন আপনারা আর ভবিষ্যতে আমাদের যেন আর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয় সেটাও খেয়াল রাখবেন। গত পরশুদিন বিকালে হঠাৎ করে জুওয়াইরিয়ার দাদাআপু বাসায় এসে পড়েন যেটা আমাদের কে যথেষ্ট বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। উনার সাথে আমার কোন রকম বাক্যালাপের দরকার আছে বলে আমি মনে করিনি, কিন্তু বাসায় এসে পড়া ‘চেনা জানা’ কাউকে তো আর ‘না’ বলে দিতে পারিনা। যাবতীয় কথা বার্তা নাঈমার সাথে হয় কিন্তু পাশের ঘরে থাকার সুবাদে আমি সেসব কথার একটা বড় অংশ শুনতে পাই।

 

সেই পুরানো কথা, সেই পুরানো স্টাইল। কিছুই বদলায়নি। উনার আচরণ, কথা বলার ধরণ, হামবড়ামি, কথায় কথায় মিথ্যাচার, সত্যকে বেমালুম অস্বীকার করা, নিজের কথাই ঠিক অন্যরা সব মিথ্যাবাদী, এই সমস্ত আচরণ এখনও আগের মতই বহাল আছে। নাঈমার সাথে বলা সমস্ত কথাই শুনেছি এবং বুঝেছি, উনি বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হন নাই। পরিবর্তন হবার নাটক করে যাচ্ছেন। মানুষ এত সহজে বদলায় না।  

 

আমার একটা কথা হলো, গত বছর জানুয়ারী থেকে, যখন আমাদের কে শূন্য হাতে বিদায় করে দিয়ে, আপনারা যখন নিজেদের হাত ঝেড়ে ফেললেন, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমি কোন বিষয়ে আপনাদের বিরক্ত করিনি, এমনকি কোন বিষয়ে কথা বলারও প্রয়োজন বোধ করিনি। আপনাদের লাইফ স্টাইলে কোন রকম হস্তক্ষেপ করার প্রশ্নই আসে না। একতরফা আপনারা যা করার করে গেছেন। মানুষের কাছ থেকে সমস্ত কথাই আমাদের কানে আসে, সবকিছুই জানি। সবকিছু জেনেও চুপ থেকে এসেছি। কিন্তু উনি আমাদের কোনভাবেই নিস্তার দিচ্ছেন না। আমরা এসবের থেকে পরিত্রাণ চাই। আমরা যেমন আপনাদেরকে আপনাদের ছেলে মেয়ে বৌ জামাই সহ নিজেদের মত থাকতে দিয়েছি, দয়া করে আমাদেরও আমাদের মত করে থাকতে দিন। দুটা বাচ্চাকে পালতে আর সামলাতে আমাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। সেই তুলনায় আপনাদের তো সম্পদ আর প্রতিপত্তির কোন তুলনা নেই। যথেচ্ছা বিলিবন্টন করেছেন। কাউকে তাঁর শরয়ী হক থেকে বঞ্চিত করে দিতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নি। তাহলে আমাদের কাছে উনার আসার প্রয়োজনই বা কি? আমার বোধগম্য হয় না।

 

উনি যাবার সময় নাঈমাকে বলে গেছেন, উনি আবার আসতে চান। নাঈমা উত্তর দিয়েছে, বাচ্চাদের বাবা সেটা ভাল বুঝবে। আমি উত্তর দিচ্ছি, উনার আগমন আমি আর কোন অবস্থাতেই আশা করি না। যে মানুষ পরিবর্তনের ভাব ধরে আবার সেই পুরানো কৌশলে অবতীর্ণ হতে পারে, তাকে আগমনের যথেচ্ছা সুযোগ দিয়ে আমি আমার জীবনকে আর দুর্বিসহ করতে ইচ্ছুক নই কোনভাবে। কথাটা উনাকে ভাল করে বুঝিয়ে দিবেন আশাকরি। এবার উনার কথার কিছু অংশ ধরে কিছু বিষয় উল্লেখ করছি-

 

১। উনি বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে কিছু চাইতে আসিনি, ভয় পেও না’। উনাকে ভয় করার কোন দরকার আমাদের আর আছে কি? আর ভয় করতে যাবই বা কেন? আমাদের কে বিতাড়িত করে, সব রকম বঞ্ছিত করে, উনি তো উনার ছেলে মেয়ে ছেলের-বৌ জামাই নিয়ে ভালই আছেন। তাহলে আমাদের মত বিতাড়িতদের শুধু শুধু টানাটানি করাই বা কেন? আমাদের কে দয়া করে আমাদের মত থাকতে দিন।

 

২। ‘বিশেষ করে জুওয়াইরিয়া’- এই কথাটা অনেকের মুখে শুনেছি উনার বরাতেএই কথাটা আর শুনতে চাই না। আমার দুটা সন্তান আমার কাছে সমান। আপনারা সারাজীবন সন্তানদের মধ্যে নানা রকমের বৈষম্য আর পার্থক্য করে এসেছেন সেটা আপনাদের ব্যাপার। আমরা আমাদের সব সন্তানকে এক রকম ভাবেই দেখি। কাজেই জুওয়াইরিয়া কে ‘বিশেষ’ ভাবে বিষেশায়িত করার কিছু নেই। উনি এই বিশেষ শব্দ বলে মানুষের কাছে কি জাহির করতে চান? উনি জুওয়াইরিয়া কে বেশী আদর(!) করেন? কারণ জুওয়াইরিয়া প্রথম নাতি বলে? এসব কিছুই উনার অনেক নাটকের মধ্যে একটা। কেন জানেন? প্রথম নাতি বলে যদি জুওয়াইরিয়ার আদর বেশী হয়, তাহলে প্রথম সন্তান হিসেবে আমার আদর আর কদর বেশী হওয়ার কথা ছিল। মনে পড়ে আপনাদের, যে বাকী ছেলে মেয়ের তুলনায় আমার কাছে থেকে বেশী আনুগত্য পেয়েছিলেন? মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশী সন্মানিত হয়েছিলেন আমার মাধ্যমে? যদি সেগুলোকেও মিথ্যার আড়ালে না লুকিয়ে ফেলেন, তাহলে তো আমারই আদর পাওয়ার বেশী কথা ছিল! আর আমার কদর বেশী হলে আমাকে লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, অপমানিত করার মানসিকতা হয় কি করে আপনাদের? কেন হয় জানেন? কারণ উনার এই ‘বিশেষ’ টাও মিথ্যা। এগুলো বলে লোকের সিম্প্যাথি পাওয়া যায়। আপনারা যে ছেলে মেয়ের মধ্যে পার্থক্য করে এসেছেন সারাজীবন, সেই জন্যই এখন জুওইরিয়ার ব্যাপারেও “বিশেষ” শব্দ বলা লাগে। এসমস্ত কথার সামান্য মূল্যও নেই আমার কাছে। কারণ বড় হওয়া সত্ত্বেও আমার উপরে যেভাবে জুলুমবাজি করেছেন আপনারা শেষ পর্যন্ত, তার নজির আসলেই দুর্লভ।

 

৩। উনি নাকি নাঈমার কাছে এসে উনার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ‘ক্ষমা’ও চেয়েছেন। আমি উনার অধিকাংশ কথাই শুনেছি। উনার আচরণে আমি কোথাও ‘অনুতাপ’ দেখেছি বলে মনে হয়নি। উনি ক্ষমা চেয়েছেন শুধুমাত্র উনার “দ্বিতীয় শুভ বিবাহ” (ছিঃ!) এর জন্য। কারন উনি কোন মিথ্যা দিয়েই সেটা ঢাকতে পারছেন না। যদি পারতেন তাহলেও সেটাকেও মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতেন এক ফুঁ দিয়ে। সেটা পারছেন না বলেই মানুষের কাছে এখন “ক্ষমা” চাই বলে নাটক করে যাচ্ছেন। উনার ইতিপূর্বের কোন জুলুমবাজির জন্য উনি বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নন এবং এখনও উনি আমাদেরই দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছেন সবকিছুতে। আমাদের বলা প্রতিটি কথাকে উনি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। এত মিথ্যাচার একজন মানুষ কিভাবে করে? নাঈমার বলা প্রতিটি সত্য কথাও উনি অবলীলায় অস্বীকার করেছেন এবং উনার কৃত কোন কাজের জন্য অনুতপ্ত হননি। উনার কাছ থেকে আমাদের কোন কিছুর প্রত্যাশা নেই। কিছুই না। মানুষ যা চেনার চিনে নিয়েছি। যথেষ্ট হয়েছে। উনার এই সব ‘দুর্বল হয়ে যাওয়া’ আর অভিনয়, আগেও দেখেছি, এখনও দেখছি। সত্যকথাকে উনি যত খুশি মিথ্যাচার করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করুণ না কেন, সেটা উনার ব্যাপার, আমাদের কিছুই যায় আসে না। দয়া করে আমাদের নিষ্কৃতি দিন।

 

৪। উনার ‘ক্ষমা চাওয়া’র নাটকে আমাদের কিছুই যায় আসে না। উনি সারাজীবন সেটাই করেছেন যা উনার মন চেয়েছে। আমার শৈশবকে উনি সুকৌশলে ধ্বংস করেছেন। আমাকে যৌন সহিংসতা থেকে আপনারা কেউ রক্ষা করতে পারেন নি। উনি মানুষের সামনে নিজেকে যতই ভাল ‘পিতা’ বলে উল্লেখ করুণ না কেন, আমি জানি উনি আসলে কতখানিক ভাল(!)। আমার সাথে হওয়া যৌন সহিংসতা, ধর্ষণ, কোন কিছুই আপনাদের দুইজনের মনে বিন্দুমাত্র রেখাপাত করেনি। উলটে সেই ধর্ষকদের একজন আপনাদের পরম আপনজন(!) হয়েছে এবং একই টেবিলে বসে তার খাবারের তদারকি করতেও আপনারা দ্বিধাবোধ করেন না। এই জাতীয় নোংরামি আমি মেনে নিতে পারি না। এগুলো আপনাদের দ্বারা সম্ভব।

 

৫। উনার মধ্যে যে ভয়াবহ মিথ্যাচার এর মাত্রা আমি দেখলাম, তার আসলেই কোন পরিবর্তন হয় নি আগেই নিজের সুবিধা মত মিথ্যাচার করতো এবং এখনও তাইই করে যাচ্ছেন। মিথ্যাচারের এবং সত্য অস্বীকারের একটা সীমা থাকা উচিত। উনি এ ব্যাপারে কোন কিছুই মানছেন না। আমাদের কথা, আমাদের অভিযোগের প্রতি বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করার কোন ইচ্ছা উনার যেমন আগেও ছিল না, এখনও নেই। কাজেই, এহেন মিথ্যাচারীর সাথে আমার সন্তানের কোন রকম সংস্রব আমি মেনে নিতে পারবো না। কথাটা ভাল করে মাথায় রাখবেন।  

 

আশাকরি আমার লেখা এইটুকু থেকেই বুঝে গেছেন উনার ব্যাপারে আমার মনোভাব। আমার স্পষ্ট কথা, উনার আমাদের বাসায় আসার কোন প্রয়োজন নেই, এবং সম্পূর্ণ অনাবশ্যক একটা ব্যাপার। আমার সন্তানের সাথেও উনার কোন প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আমরা একদমই চাই না। আমরা যেমন আপনাদেরকে আপনাদের মত করেই থাকতে দিয়েছি, বিরক্ত করছি না, আমাদেরকেও দয়া করে আমাদের মত থাকতে দিন। দয়া করে আমাদের কে বাঁচতে দিন।      

Author's Notes/Comments: 

২৬ জুলাই ২০২১

View shawon1982's Full Portfolio