‘সিভিলিয়ান’ দের তুলা

করোনা ভ্যাক্সিন নিয়ে অনেকের অনেক রকম উপসর্গ দেখা দেয় বলে শুনেছি। আবার অনেকের কিছুই হচ্ছে না। কিছু তেমন না হওয়ার দলে আমিও আছি। তবে গতকাল থেকে বাম বাহুর ইঞ্জেকশন পুশ করার অংশটায় বেশ ব্যথা করছে আর সেই ব্যাথা হাত নাড়াতে গেলেই টের পাচ্ছি। অবশ্য এমন অসহনীয় কিছু না। এইটুক হতেই পারে। অন্য টিকা নিলেও এমন একটু আধটু উপসর্গ দেখা দিতেই পারে। অনেকের জ্বরও নাকি চলে আসে। আমার তেমন কিছু হয়নি। সেদিক দিয়ে ভালই আছি। জীবনে তো টিকা নেয়ার অভিজ্ঞতাও একেবারে কম হলো না। সুঁই ফোটানোর অভিজ্ঞতা বহুবার হয়েছে। শুধু ইঞ্জেকশন দিতে গিয়েই নয়, বরং রক্ত দেয়ার সৌভাগ্য হয়েছে বহুবার। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আরও রক্ত দিতে চাই। আমার রক্ত যদি মানুষের উপকারে আসে, সে আমার পরম সৌভাগ্য বলেই মনে করবো।

 

গতকাল ভ্যাক্সিন নিতে গিয়ে প্রথম একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার যা ইতিপুর্বে হয়নি। হলফ করে বলছি এটাই প্রথম। যে কোন অভিজ্ঞতাই কিন্তু মন্দ নয় যদি সেটা ভালভাবে জীবনে কাজে লাগানো যায় তবেই। একজন ‘সিভিলিয়ান’ হিসেবে আমার গতকালকের অভিজ্ঞতা বেশ ভালই কাজে লাগবে আমার। কারণ এরপরে ‘সিভিলিয়ান’ হয়ে আবার সুঁই ফোঁটাতে গেলে কথাগুলো আমার মাথায় রাখতে হবে। নিজের জন্য হলেও রাখতে হবে।

 

জীবনে এই প্রথম দেখলাম যে সুঁই ফোটানোর আগে স্পিরিট দিয়ে জায়গাটা মুছে নেয়া হলো না। কিছুদিন আগেও আমি মেনিঞ্জাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-বি সহ কয়েকটি টিকা নিয়েছি। সব ক্ষেত্রেই স্পিরিট দিয়ে পরিষ্কার করে এরপর ইঞ্জেকশন পুশ করে, সাথে সাথে আবার স্পিরিট দেয়া তুলা চেপে ধরেছে। রক্ত যখন দিয়েছি তখনও এমনই করেছে সব বার। কিন্তু গতকাল ‘সিভিলিয়ান’ হয়ে টিকা নিতে গেলাম যখন, হাতের কাপড় ওঠানো মাত্রই দুই সেকেন্ডের মধ্যেই ইঞ্জেকশন পুশ করে ফেলা হলো। কোন তুলা স্পিরিট কিছুই দেয়া হলো না। আগেও না পরেও না। আমাকে অতি সংক্ষেপে বলা হল, ‘যান’। আমি উঠে পাশের ওয়েটিং রুমে চলে এলাম। তখন আমার ছোট সম্বন্ধীকে টিকা দেয়া হচ্ছিলো। উনিও একজন ‘সিভিলিয়ান’! আমাদের কে একই পদ্ধতিতে টিকা দেয়া হল।

 

আমার সম্বন্ধী আমার পাশে এসে বসতেই আমার নিজের হাতের ক্ষতের দিকে নজর গেলো। সেখান থেকে রক্ত বেরিয়ে এসেছে এক ফোঁটা। আমার সম্বন্ধী দেখে বললো, দাঁড়াও তোমার জন্য তুলা নিয়ে আসি। ও সেই রুমে গিয়ে আমার জন্য ‘চেয়ে’ এক টুকরো তুলা নিয়ে আসলো। আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। উনাদের বদান্যতায় আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। আমার মত একজন ‘সিভিলিয়ান’ এর হাত থেকে বেরিয়ে আসা রক্তের ফোঁটা মুছে ফেলার জন্য একটু তুলা দেয়া হলো! হেলথ সেন্টারে প্রাপ্ত এই অভাবনীয় সুন্দর অভিজ্ঞতায় আমি মোহাবিষ্ট হয়ে গেলাম ভাল লাগায়।

 

 

স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমি অঙ্গীকার করছি, যতদিন বেঁচে থাকবো, একজন ‘সিভিলিয়ান’ হিসেবেই আমি দেশের প্রতি, দেশের জনগনের প্রতি আমার ভালবাসা এবং কর্তব্য পালন করতে সচেষ্ট থাকবো। আমার মৃত্যু পর্যন্ত দেশের সরকার এর প্রতি অনুগত থাকবো। দেশের কল্যানে, দেশের মানুষের কল্যানে যেভাবে পারি কাজ করে যাবো।   

Author's Notes/Comments: 

১৪ জুলাই ২০২১

View shawon1982's Full Portfolio