বাচ্চাদের খুশী করা কিন্তু অনেক সহজ। আর বাবা মা চাইলে সামান্য একটু কথা দিয়েও বাচ্চাদের মন আনন্দে ভরে দিতে পারেন। শুধু খেলনা দিয়ে, ট্যাব দিয়ে, মোবাইল আর টিভি দিয়ে নয় বরং আমরা আমাদের সময় থেকে একটু সময় দিয়ে ওদের মনে অনাবিল আনন্দ এনে দিতে পারি। এজন্য দরকার আমদের সামান্য একটু সময়, আর কিছুটা সময় ওদের মত হয়ে যাওয়া। আজকে আমি ব্যাপারটা প্রত্যক্ষ করলাম নিজেই আমার মেয়ের অনলাইন ক্লাসের সময়।
বিগত কিছুদিন যাবত আমার মেয়ের অনলাইন ক্লাসের সময় আমি ওর পেছনে বসে থাকি। দেখি মেয়ে কি করে। কিভাবে পড়া গুলো শোনে বা তুলে নেয়। আমি দেখলাম আমার এই একটু সময় বসে থাকা মেয়ের উপরে ম্যাজিকের মত কাজ করছে। আমি হয়ত রকিং চেয়ারে বসে দোল খেতে খেতে কোন গল্পের বই পড়তে থাকি বা আমার মত করে কিছু করতে থাকি, কিন্তু আমার একটু উপস্থিতি আমার মেয়ের পড়ার স্পৃহা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন সে অনেক আগ্রহ সহকারে পড়তে বসে অনলাইন ক্লাসে এবং সময় মত আমাকেও মনে করিয়ে দেয়। আমার হাজির হতে একটু দেরী হলে আমাকে ডাকাডাকি করতে থাকে। আমিও হাসি মুখে ওর পেছনে গিয়ে বসে বাচ্চাদের কাজকর্ম দেখি।
আমার নানা রকম অভিজ্ঞতা হচ্ছে। ক্লাস ওয়ানের বাচ্চা পড়ানোর কোন অভিজ্ঞতা তো আমার কোন কালেও ছিল না। কিন্তু ওই বয়সের একটা বাচ্চাকে পড়াতে গিয়ে ওদের সন্মানিত শিক্ষক মহোদয়গন যে অপরিসীম ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে যাচ্ছে, যেভাবে আদর করে বাচ্চাদের পড়িয়ে যাচ্ছে, ধৈর্য সহকারে ওদের শিশুসুলভ দুষ্টুমি সহ্য করছে, সেগুলো আমার নিজের জন্যই অনেক বড় একটা শিক্ষা। শ্রদ্ধায় আমার নিজের মাথা নুইয়ে আসে এসব সন্মানিত শিক্ষকগণের প্রতি। আমার মনে হয় শুধু মেয়েই নয়, মেয়ের বাবা হয়ে, নিজেও শিক্ষক হয়ে আমিও কত কিছু শিখে নিচ্ছি সেই ফাঁকে। মেয়ের সাথে একটু সময় দিয়ে।
আজকে অনলাইলে ক্লাস করার সময় মেয়েকে কৌতুক করে বললাম, বাবা তুমি আর আমি তো দুইজনেই ক্লাস ওয়ানে পড়ি! মেয়ে আমার দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে মিষ্টি একটু হাসি দিয়ে বললো, কিভাবে আব্বু? আমি বললাম, এই যে আমিও তোমার সাথে তোমার ক্লাস করছি। কি পড়ছো না পড়ছো সেগুলা আমিও শিখে নিচ্ছি। তখন মেয়ে আমাকে বলল, আব্বু তোমরাও কি এগুলা পড়েছো ছোটবেলায়? আমি বললাম, হ্যাঁ মা আমরাও এগুলা সব শিখেছি। তবে এখন তোমার সাথে আবার নতুন করে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়ে গেলাম। মেয়ে অনিন্দ্যসুন্দর একটা হাসি দিয়ে আবার নতুন উদ্যমে পড়ায় মন দিলো। আমার সামান্য একটু সময় আমার মেয়েটার কাছে অনেক বড় কিছুর উদ্দীপনা হয়েই থাকলো।