নতুন পোশাক পরে নিতে তিন মিনিটের বেশী সময় নিলো না রুবেল। একটু আগের পাজামা পাঞ্জাবী পরিবর্তন করে পছন্দের একটা হাফ হাতা শার্ট আর ট্রাউজার পরে নিলো দ্রুত হাতে। কি মনে করে শিষ দিতে শুরু করলো। আগে তেমন ভাল শিষ দিতে পারতো না। প্রবাসের দিনগুলোতে বাইরে বরফ পড়া দেখতে দেখতে একদিন চেষ্টা করে দেখেছিলো ভালই শিষ দিতে পারছে। এরপর থেকে টুকটাক প্রিয় গানের সুর শিষ দিয়ে ওঠাতে চেষ্টা করে। এখন নিজেকে আয়নায় দেখতে দেখতে শিষ দিচ্ছে, পল মরিয়াট এর Love is blue এর সুরটা! একবার মনে হলো ভাল হয়নি! আবার শুরু করলো দেয়া। এই ফাঁকে চুলে চিরুনি চালিয়ে নিলো একটু। চুলে কি একটু জেল দেবে? পরক্ষণেই চিন্তাটা বাতিল করে দিলো। এখন বাজে রাত সাড়ে দশটা এর মত। একটু বাইরে হাঁটতে বের হবে। এখন চুলে জেল দেয়ার কোন মানে হয় না। হেঁটে এসে এরপর গোসল সেরে কোন একটা মুভি নিয়ে বসবে। এখন তো আর মানা করার কেউ নেই। সমস্যা কি?
ঘর থেকে বের হবার আগে এক কাপ ব্ল্যাক কফি বানিয়ে ফেললো। ফ্রেঞ্চ প্রেস দিয়ে ব্রু-কফি বানাতে গিয়ে আপনমনে মুচকি একটু হাসলো। হাতে এখন অখন্ড অবসর। কি করে যে সময়গুলো কাঁটাবে? ঘোরাঘুরি তো বেশ করলো কয়দিন। আরো কয়েকটা জায়গা অবশ্য দেখার বাকী আছে এখনও। পকেটে রাখা মোবাইল ফোনটা একটা বিশেষ ধ্বনি দিয়ে জানিয়ে দিলো একটা মেসেজ এসেছে। কফির কাপে চুমুক দিতে গিয়ে আবার সেটা নামিয়ে রাখলো রুবেল। মেসেজ এলে, সেটা না দেখা পর্যন্ত অন্য কিছু করতে ভাল লাগে না।
সেই ভার্সিটিরে পড়ার দিনগুলোতে দিন নাই রাত নাই, রিমি মেসেজ পাঠাতো। তখন থেকেই অভ্যাস হয়ে গেছে। মেসেজের উত্তর সাথে সাথে না দিলে রিমি একেবারে খেপে কাই হয়ে যেতো। রিমি নেই কিন্তু কিন্তু ওর বানিয়ে দেয়া অভ্যাসগুলো রয়ে গেছে রুবেলের মধ্যে। মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে গেলো। কোন এক অনলাইন শপের ম্যাসেজ এসেছে। মুরগির মাংস, গরুর মাংস, তেলাপিয়া মাছ এসবের কেজি প্রতি দাম লেখা আছে। সাথে আরো কি কি সব অফার জেনো। দেখেই বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে গেল রুবেলের। প্রতিদিন এসব মেসেজ দেখতে দেখতে বিরক্ত লাগে।
কয়েক চুমুকে কফির কাপটা শেষ করে ফেললো। মনের ভেতরে কেমন একটা চনমনে অনুভুতি কাজ করছে এখন ওর। রাতে হাঁটার অভ্যাস ওর হয়ে গেছে প্রবাস জীবন থেকেই। অফিসে শেষ করে প্রতিদিন প্রায় চল্লিশ মিনিটের মত হেঁটে এরপর বাসায় চলে আসতো। হাঁটতে হাঁটতে নিজের মত করে অনেক কিছু পরিকল্পনা করতে পারে। নিজের কাজগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে নেয়া যায়। যেহেতু কাউকে জবাবদিহিতা করার মত কোন ব্যাপার নেই, সেহেতু নিজের মত করেই সব গুছিয়ে নেয়।
দরজায় চাবি দিয়ে বন্ধ করতে করতে পাশের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এলেন বরকত সাহেব। বেশ হাসিখুশী একজন মানুষ। দেখা হলেই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বরকত সাহেব বেরিয়ে এলেন ময়লা ফেলার জন্য। যথারীতি রুবেলের সাথে চোখাচোখি হতে বললেন, কেমন আছেন রুবেল সাহেব? সব খবর ভাল তো।
জ্বী ভাই ভাল আছি। বলতে বলতে লিফটের বাটন টিপে অপেক্ষা করছে রুবেল।
কই চললেন ভাই? রুবেলের পেছনে এসে দাঁড়ালেন বরকত সাহেব।
একটু বাইরে হাঁটাহাঁটি করবো।
তা বেশ তো। যদি বৃষ্টি আসে?
আসুক না, সমস্যা নেই। বৃষ্টিতে ভিজতে আমার ভালই লাগে। রুবেল হেসে উত্তর দেয়। ততক্ষণে লিফট চলে এসেছে। রুবেল উঠে লিফটে চলে যেতেই বরকত সাহেব দ্বিধা করে দাঁড়িয়ে রইলেন বাইরে হাতে ময়লার টোপলা নিয়ে। বললেন। আপনি চলে যান। আমি পরে আসছি।
আরে না ভাই, আসুন তো, বলেই রুবেল লিফটের বাটন চেপে দাঁড়িয়ে রইলো বরকত সাহেবের ওঠার জন্য।
আপনার অসুবিধা হবে না? বলতে বলতে লিফটের এক কোনায় এসে দাঁড়ালেন বরকত সাহেব।
আরে নাহ ভাই। কোন সমস্যা নেই। রুবেল সহজ স্বরে উত্তর দেয়। নিচে এসে দুজন বিদায় নিয়ে যে যার কাজে চলে গেল। রুবেল গেট থেকে বের হয়ে বড় বড় করে কয়েক পা দিয়ে রাস্তায় এসে লম্বা করে একটা শ্বাস নিলো। এরপর আবার love is blue এর সুর শিষ বাজাতে বাজাতে রাস্তায় নেমে এলো। আর দুই মিনিট হাঁটলেই মেইন রোড। ওর ওপাশে গিয়ে বেশ খানিকটা জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখবে।
মেইন রোডে এসে মনে হলো, আজকে রাস্তায় কি গাড়ী কম নাকি? রাস্তা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। পরক্ষণেই নিজেকে বললো, হু কেয়ার্স! আমি বেরিয়েছি হাঁটতে। রাস্তায় গাড়ি থাকলো না থাকলো তাতে আমার কি যায় আসে? চিন্তা করতে করতে মেইন রোড পার হয়ে এলো। রাস্তা ওপাশে চলে গেল। একটানা লম্বা রাস্তা। তার দুই পাশে বিভিন্ন গলি চলে গেছে। রাস্টার দুই পাশে কত নতুন নতুন অ্যাপার্টমেন্ট হয়েছে। অথচ পাঁচ বছর আগের দেখা এই মহল্লা আর এখন দেখা এই মহল্লার মত কত তফাত হয়ে গেছে। কিছুই আর আগের মত নেই বললেই চলে। ভেতরের দিকের কিছু পুরানো বাড়ি আগের মতই রয়ে গেছে। সেগুলো দেখলে যা একটু অতীতের স্মৃতি মনে পড়ে।
দুই তিন গলি পার হয়ে এসে, সামনে যেই গলিটা পড়লো, সেখানে একটা পুলিশের গাড়ি আর বেশ কিছু মানুষের জটলা দেখতে পালো। ওর মধ্যে কয়েকজন উত্তেজিত স্বরে কথা বলছে। রুবেল কৌতূহলী চোখে এগিয়ে গেল। একজন পুলিশ কন্সটেবল কে দেখে এগিয়ে গেল। তাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে ভাই?
বোম ব্লাস্ট হইসে এখানে এখানে একটু আগে। পুলিশ কন্সটেবল নিরাসক্ত ভাবে উত্তর দিলো।
বলেন কি? বিস্মিত চোখে রুবেল জিজ্ঞাসা করলো। কিভাবে হলো? কারো কোন ক্ষতি হয়েছে?
কি হয়েছে আমরাও এখনও পুরো ঘটনা জানি না। একটা ছেলের শরীরে মনে হয় বোম্ব ছিল। সেটা ফেঁটে গেছে। একটা পা মনে হয় শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাঁচবে কি না জানি না। বলেই পুলিশ কন্সটেবল হেঁটে চলে গেল ভিড় লক্ষ্য করে। তার পেছনে পেছনে একটু দূরত্ব রেখে রুবেল ও হেঁটে গেল।
//২//
রাতে বেশ ভাল ঘুম হলো রুবেলের। পাশের মহল্লাতে আর বেশি হাঁটা হলো না গত রাতে। যে ছেলেটার গায়ে বোম্ব ব্লাস্ট হয়েছে সে ছেলেটি বেঁচে আছে না মরে গেছে তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানে না। ছেলেটির শরীরে বোম্ব কিভাবে এলো সেটাও কেউ বলতে পারছে না। এই ছেলেটির সাথে কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের তৎপরতা আছে বলেও এলাকার কয়েক জনের কাছে শুনে কিছুই জানতে পারেনি। এটা কি কোন আত্মঘাতী হামলা না অন্য কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এই ব্যাপারে পুরোটাই ধোঁয়াশার তৈরী হয়েছে। গতকাল ছেলেটির কয়েকটা বন্ধুকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে গেছে। বোম্ব ব্লাস্ট করার সময় ওরা কয়েকজন মিলে রাস্তার উপরে ক্যারামবোর্ড খেলছিল। এ সবকিছুই রুবেল কিছু দেখেছে, কিছু শুনেছে। এরপর আবার সে নিজের বাসায় ফেরত আসে। দুটো ডিমের ওমলেট খেয়ে এরপর শুয়ে পড়ে।
ঘুমটা ভাংলো সোহেলের টেলিফোন পেয়ে। সোহেল থাকে মিরপুর দুই নাম্বারে। মোবাইলে ভাইব্রেশন দেয়া থাকলেও রুবেল টের পেল কল আসছে। বালিশ সহ কাঁপিয়ে দিয়েছে মোবাইল ফোনটা। বালিশের নিয়ে হাত ঢুকিয়ে, মোবাইল টা কানে দিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো, হ্যালো!
-তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস? সোহেলের ব্যস্ত কন্ঠ ভেসে এল ওপাশ থেকে। জানিস তোমাদের মহল্লায় কি হয়েছে?
-আমাদের মহল্লায় না, পাশের মহল্লায়। খুব সাধারণ ভাবেই উত্তর দিলো রুবেল।
-তুই জানিস তাহলে?
-আরে বাবা, না জানলে বললাম কি করে? কাল রাতে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। তার একটু আগের ঘটনা। পুলিশ দেখেছি। ওরা নাকি তদন্ত করছে। বলতে বলতে একটা হাই ছেড়ে বিছানায় উঠে বসলো রুবেল।
-কি সাংঘাতিক ঘটনা বল। মহল্লার মধ্যে বোমাবাজি। পেপারে এসেছে আজকে দেখ। কত কি লিখেছে। কেউ কেউ বলছে আত্মঘাতী হামলা কিন্তু ঘটনার কারণ কেউ খুঁজে পাচ্ছে না। সোহেলের কন্ঠে উদ্বেগ স্পষ্ট।
-এত ভেবে লাভ আছে? তুই না আসবি বলেছিলি আজকে? আসবি নাকি? আসলে আয়। আমি তো ফ্রি আছি। রুবেল বললো।
-হুম আসবো। তোর কোন কাজ আছে কিনা সেটাই জানতে চাচ্ছিলাম। তোকে নিয়ে একটু ঘুরবো।
-তা আয় না চলে। আজকে তো শুক্রবার। জুমার নামাজ পড়ে এরপর না হয় বের হবো। লাঞ্চ বাইরে করে নেবো কোথাও।
-আচ্ছা তুই ফ্রেশ হয়ে নে। আমি আসছি। আমার আসতে পনেরো মিনিটের বেশী লাগবে না। আচ্ছা রাখি বলে সোহেল কল কেটে দিলো।
রুবেল এবার বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বিছানার পাশে রাখা তোয়ালে একটান দিয়ে নিয়ে কাঁধের উপরে ফেলে দিয়ে বাথরুমে চলে গেল শিষ দিতে দিতে। wind of change গানটার শিষ দেয়া অংশটা নিজেও শিষ দিতে লাগলো। শাওয়ার নিতে নিতে চললো আরো কয়েক প্রস্থ শিষ দেয়া। নিজের প্রতিভায় নিজেই মুগ্ধ হলো। রিমি একবার ঠাট্টা করে বলেছিল, শিষ তো দিতে পারো না। কেন যে অযথা চেষ্টা করো। রিমির কথা মনে হতেই শাওয়ারের পানির নিচেই দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেললো। ঝিরঝির করে ঝরে পড়া পানির আড়ালে, অব্যক্ত বেদনায় বিকৃত হয়ে যাওয়া রুবেলের মুখটা কেউ দেখতে পেল না। ও নিজেও না।
সোহেল যখন এলো, তখন রুবেল টোস্ট এ জ্যাম মাখিয়ে খাচ্ছে। সোহেলের জন্য একটা স্যান্ডুইচ আর একটা টোস্ট জ্যাম দিয়ে আগেই মাখিয়ে রেখেছে। দুই বন্ধু খেতে খেতে টুকটাক গল্প করলো। সোহেল ওর অফিসের গল্প করছিলো। এই নিয়ে সোহেল তিনটা চাকরী বদলিয়ে চার নাম্বারটা শুরু করেছে। নতুন অফিস নাকি তার ভালই লাগছে। এর আগের কোনটাই সোহেল দেড় বছরের বেশী করেনি। এসব কথা বলতে বলতে রুবেল দুই মগ কফি বানিয়ে আনলো। একটা সোহেলের সামনে রেখে ছোট একটা বাস্কেট এগিয়ে দিলো। ওখানে চিনি আর ক্রিমারের ছোট ছোট প্যাকেট রাখা আছে। সোহেল ওখান থেকে কয়েকটা ক্রিমারের প্যাকেট নিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে কফিতে মেশাতে লাগলো। বেশী করে ক্রিমার দেয়া কফি সোহেল অনেক আয়েশ করে খায়। এজন্য নিজে না খেলেও বন্ধুর জন্য সব বন্দোবস্ত আগে থেকেই করে রেখেছে রুবেল।
কফি খাওয়ার শেষ পর্যায়ে জুমার আজান দিয়ে দিলো। ওরা তখন বের হবার প্রস্তুতি নিবে। রুবেল সোহেলকে বললো, তুই একটু বস। আমি পাঞ্জাবি পরে আসি। বলেই রুবেল ঘরে চলে গেল। একটু বেশি সময় নিলো রুবেল প্রস্তুত হতে। ততক্ষণে সোহেল টেবিলে রাখা একটা ম্যাগাজিন পড়ছিলো। একটা ছোট গল্প পড়তে পড়তে প্রায় শেষ করে এসেছে এমন সময় রুবেল বের হয়ে এলো। বললো, চল মসজিদে যাই। ওখান থেকে নামাজ শেষ করে এরপর আমরা বের হয়ে পড়ি।
এই দাঁড়া এক মিনিট। গল্পটা এতো ইন্টারেস্টিং, এখনি শেষ হয়ে যাবে। সোহেলের কথা শুনে রুবেল ঘড়ি দেখলো। হাতে প্রচুর সময় আছে। বললো সমস্যা নেই। তুই পড়ে শেষ কর।
দুই বন্ধু মাসজিদের দোতালায় চলে গেল। নীচ তলা আগেই ভরে গেছে। দোতালাতেও ভীড় দেখে তিল তলায় চলে গেল। ততক্ষণে আরবী খুতবা শুরু হয়ে গেছে। ওরা মোটামুটি একটা ফাঁকা জায়গা দেখে বসে পড়লো। রুবেল পরেছে সাদা একটা পাঞ্জাবী। মোবাইলটা রেখেছে পাঞ্জাবীর বাম পকেটে। যথা সময়ে নামাজ শেষ হলো। সারা মসজিদ লোকে লোকারন্য। সালাম ফিরানোর সাথে সাথে মানুষ এমন ভাবে বের হওয়া শুরু করল মসজিদ থেকে যে একটা গেট দিতে সামাল দেয়া মুশকিল হয়ে গেল। মনে হচ্ছে শ্লথ গতিতে পানির স্রোতের মত মানুষ নেমে আসছে একের পর এক। রুবেল আর সোহেল ও এগিয়ে গেল গেটের দিকে। মানুষের সাথেক মৃদু মৃদু ধাক্কাধাক্কি করতে করতে ওরাও সিঁড়িতে বের হয়ে এলো। তিন তলা থেকে নামতে ওদের প্রায় পাঁচ মিনিটের মত সময় লাগলো। এত ভিড়!
নীচ তলা থেকে নেমে রুবেল বাম পকেটে হাত দিয়ে দেখলো। মোবাইলটা নেই। ভ্রু কুচকে গেল রুবেলের। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে সোহেল বললো, তোর কি হইসে?
বলতে বলতে ওরা মসজিদের মেইন গেট থেকে বের হয়ে আসলো। আমার মোবাইল টা নেই সোহেল।
বলিস কি? কই রাখসিলি? সোহেল আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে।
রাখসিলাম পাঞ্জাবির পকেটে। মনে হচ্ছে চলে গেল। মুখে মেঘের ছায়া রুবেলের।
তুই এটা কি করলি রুবেল? তুই জানিস না, পাঞ্জাবীর পকেটে মোবাইল রাখা আর অন্যের পকেটে মোবাইল রাখা একই জিনিস?
-আমি আসলে এতো বুঝি নি। তুই মুখ স্বাভাবিক কর। মোবাইল গেলে আমার গেছে। আমার আরেকটা আছে সাথে এই দেখ। এই বলে প্যান্টের পকেট থেকে আরেকটা মোবাইল বের করে দেখালো। এরপর হাতের ঘড়ির দিকে একবার দেখলো রুবেল। মুখটা কিছুটা ভাবলেশহীন। এরপর সামনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করলো।
-কি দেখিস? সোহেল প্রশ্ন করলো। যা গেছে তা ফিরে পাওয়ার আশা বাদ দে।
-বাদ তো দিসিই। একটা মোবাইলই তো। ধুত! এ আর এমন কি। ব্যাপার না। চল যাই বলেই রুবেল সোহেলের কাঁধ রাখে।
-চল।
মসজিদ থেকে বের হয়ে ডানে মোড় নিয়ে কেবল দুই গজের মত এগিয়েছে। এর মধ্যে ওদের পেছনে খানিটা দূরে প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দে পুরা মহল্লা কেঁপে উঠলো। শব্দের আকস্মিকতায় সোহেল তাল সামলাতে না পেরে রাস্তার উপরে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে ডান হাতের তালুতে আঘাত পেলো। রুবেলও দুই কান চেপে ধরেছে। কোন মতে সোহেলকে টেনে উঠে বসায়ে বললো, তুই ঠিক আছিস সোহেল?
-কি হলো রে? ততক্ষণে প্রচন্ড মানুষের কোলাহলে কোনমতে সোহেলের কথাটা শুনতে পেল রুবেল।
-কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে মনে হলো বোম্ব ব্লাস্ট হইসে।
-বলিস কি? এখানেও বোম্ব? হায় আল্লাহ। চল তো গিয়ে দেখি। বলে সোহেল কোনমতে রুবেলের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়।
(চলবে)