দাগ প্রতিরোধে বাচ্চাদের দাঁতের যত্ন

 

কয়েক মাস যাবত আমার দুই বাচ্চার দাঁতে কিছু কিছু কালো দাগ বা স্কেল লক্ষ্য করলাম। এমনকি আমার যে বাচ্চাটার বয়স মাত্র দেড় বছর, ওর সামনের দিকের দাগগুলোতেও কিছু কিছু দাগ লক্ষ্য করলাম। ব্যাপারটা আমাদের চিন্তিত করে দিলো। প্রথমে ভেবেছিলাম, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করলে হয়ত এ ব্যবস্থা থেকে প্ররিত্রান পাওয়া যাতে পারে, কিন্তু সেটা হলো না। দাঁতে যে দাগ পড়ে গিয়েছে সেটা রয়েই গেল। কাজেই আমরা দাঁতের ডাক্তারের শরণাপন্ন হলাম আমার মেয়েটাকে নিয়ে। ওর বয়স ৭ বছর হলো সদ্য। অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শগুলো আপনাদের জানাতে চাই। আশাকরি তথ্যগুলো আমাদের সবার কাজে আসবে। আমরা বুঝি দাঁত এবং দাঁতের যত্ন করা কতখানিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সচেতন বাবা মা মাত্রই বাচ্চাদের খাদ্যাভ্যাস এবং দাঁতের যত্নের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

 

ডাক্তার প্রথমেই আমাকে বললেন, বাচ্চার বয়স ১২ বছর হবার আগ পর্যন্ত, ভাইব্রেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে যে দাঁতের স্কেল বা দাগ উঠানো হয়, সেটা এই বয়সে সম্ভব নয়। কারণ এই বয়সে ওদের দাঁতের শেকড় এখনও মাড়িতে পোক্তভাবে বসেনি। কাজেই ১২ বছরের আগ পর্যন্ত ভাইব্রেশন পদ্ধতিতে স্কেল উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তাহলে এখন উপায় কি হতে পারে জিজ্ঞাসা করায় উনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বললেন। প্রথমেই বললেন, বাচ্চাদের দাঁতে এসব দাগ নানা কারনে হতে পারে। আমি কারণগুলো নিচে পয়েন্ট বা বুলেট দিয়ে উল্লেখ করছি।

 

১। বাচ্চারা যদি চা বা কফি খায় তাহলে এমন হবার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় দেখা যায় আমরা নিজেরা চা বা কফি খাবার সময় বাচ্চারা এসে আবদার করে। তখন আমরা ওদের গালেও একটু তুলে দেই। ছোট বাচ্চাদের চা বা কফি খাওয়ানো থেকে দূরে রাখাই সমীচীন। কারন সামান্য খেলেও দেখা যায় ওরা ঠিক মত কুলি করে না বা মুখ পরিষ্কার করে না। এজন্য দাঁতে দাগ হয়ে যেতে পারে।

 

২। যে সব বাচ্চারা কোল্ড ড্রিঙ্কস, আইস্ক্রিম জাতীয় খাবার বেশী খায়, তাদের দাঁতে এমন স্কেল বা দাগ পড়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। ডাক্তার সবার প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বাচ্চা কি প্রায়ই কোল্ড ড্রিঙ্কস খায় কিনা? এসব খাবার থেকে বা পানীয় থেকে শুধু বাচ্চা কেন, আমাদের সবারই দূরে থাকা উচিত। বাচ্চাদের কোল্ড ড্রিঙ্কস না দিয়ে, ফল দিয়ে ব্লেন্ডারে নানা রকম জুস বা মিল্ক-শেক বানিয়ে খাওয়ানো অভ্যাস করা যেতে পারে। এটা অনেক স্বাস্থ্য সম্মত। আর যেসব বাচ্চারা মাঝে মাঝে আইসক্রিম খাওয়ার বায়না ধরে, তাদেরকেও বাসায় ফলের রস দিয়ে ‘পপ-সিকল’ জাতীয় আইসক্রিম বানিয়ে দেয়া যেতে পারে বয়স বুঝে এবং বাচ্চার ঠান্ডা লাগতে পারে কিনা সেটা বুঝে! কখনই বেশী মাত্রায় নয়।

 

৩। যেসব বাচ্চারা এখন ফিডারে বা অন্যভাবে দুধ খায়, এবং খেয়েই বা খাওয়ার মধ্যেই ঘুমিয়ে যায়, তাদের ক্ষেত্রে তাদের গোড়ায় স্টোন বা পাথর হতে পারে। দুধ ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে ক্যালসিফায়েড হয়ে দাঁতের গোড়ায় জমে জমে দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। এজন্য বাচ্চা ঘুম থেকে ওঠা মাত্রই ওর মুখ এবং দাঁত যথা সম্ভব পরিষ্কার করে দিতে হবে।

 

৪। বাচ্চা রাতে হা-করে ঘুমায় কিনা কিংবা বাচ্চার শ্বাসকষ্ট আছে কিনা সেটা ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বাচ্চার যদি ঘুমানোর সময় কোন কারণে শ্বাসকষ্ট হয় তাহলে বাচ্চা হা-করে ঘুমাতে পারে। সেক্ষেত্রে মুখের ভেতরে বাতাসের আধিক্য থাকায় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন বেড়ে যায় এবং সেগুলো দাঁতের নানা রকম ক্ষতি সাধন করে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের কারণেও স্কেলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।  

 

৫। বাচ্চার দাঁত ব্রাশ করার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। প্রথমে আঙ্গুলে পেস্ট নিতে আগে বাচ্চার দাঁতে ভেতরে বাইরে পেস্ট মালিশ করে লাগিয়ে দিতে হবে! এরপর ব্রাশে আবার একটু পেস্ট নিয়ে বাইরে এবং ভেতরে, উপরে নিচে সবদিকে ব্রাশকে “ঘুরিয়ে ঘুরিরে” মাজতে হবে! ব্রাশকে আড়াআড়ি বা উপরে নিচে চালনা করতে ডাক্তার মানা করলেন। বললেন, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্রাশ করলে শুধু দাঁতই নয় বরং দাঁতের মাড়িও ভাল থাকে। আর দাঁত মাজার আগে দাঁতে আঙ্গুল দিয়ে পেষ্ট মালিশ করে লাগিয়ে দিয়ে দাঁতে নতুন করে স্কেল পড়ার সম্ভাবনা আর থাকে না। ঘুমের আগে তো অবশ্যই দাঁত মাজতেই হবে এবং রাতে দাঁত মাজার পরে শুধু পানি ছাড়া আর কিছুই খাওয়া চলবে না। আর সকালে উঠে মুখ পরিষ্কার করে নাস্তা করে এরপর দাঁত মেজে পরিষ্কার করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।  

 

৬। বাচ্চাদের কে বড়দের পেস্ট পরিহার করে ‘বেবী টুথপেস্ট’ ব্যাবহার করার পরামর্শ দিলেন। কারণ বড়দের টুথপেস্ট এ ফ্লোরাইডের পরিমাণ বেশী থাকায় সেটা বাচ্চাদের দাঁতের জন্য ঠিক উপযুক্ত নয়।  

 

আমরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে উপকার পাচ্ছি। আশাকরি তথ্যগুলো আপনাদেরও কাজে লাগবে।

 

লেখাঃ ড. জায়েদ বিন জাকির (শাওন)

Author's Notes/Comments: 

২৮ মে ২০২১ 

View shawon1982's Full Portfolio