বৃষ্টি পড়ার ব্যাপারটা কি ঢাকা শহরে দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে? প্রাণ শীতলকারী একটু বৃষ্টির জন্য মনের মধ্যে কেমন যেন হাহাকার লাগে। শৈশবে আমাদের বাসায় বসেই টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনতাম। সুতীব্র সেই ঝমঝম শবে একটা মাদকতা কাজ করতো। বৃষ্টি যখন পড়তো, তখন বিদ্যুৎ চলে যাওয়াও মেনে নেয়া যেত কারণ একটু পরেই তো প্রকৃতির হাড় জুড়োবে! ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ তো কাজ করবেই! কখনও বারন্দায় গিয়ে গ্রল থেকে হাত বাড়িয়ে টিন বেয়ে নেমে আসা বৃষ্টির পানি হাত দিয়ে ধরতাম! অবশ্যই বড়দের চোখ এড়িয়ে। ঠান্ডা লেগে যেতে পারে এই ভয়ে তাড়াতাড়ি আবার বাসার ভেতরে চলে আসতাম। এগুলো সব ৯০ দশকের কথা। স্কুলে পড়তাম তখন।
বৃষ্টিতে ভেজা আমার খুব পছন্দের একটা কাজ। মুশলধারে বৃষ্টি হলেই মনে হয় রাস্তায় নেমে যাই কিংবা বাসার ছাদে চলে যাই। তেমন মুশলধারে বৃষ্টি আর হয় কোথায়। শেষ বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম আমার মেয়েটাকে নিয়ে ২০১৯ সালে। এরপর আর ভেজা হয়নি। ঢাকা শহরে গাছের পরিমাণ আশঙ্কাজনক ভাবে উধাও হয়ে গেছে। আমরা সেই ৯০ দশকেও যত গাছ দেখতাম, এখন তার কিছুই নেই। যে হারে গাছপালা আমরা ধ্বংস করে ফেলছি, তাতে প্রকৃতির ভারসাম্য তো আর কি থাকতে পারে তা বলাই বাহুল্য! সেই স্কুলে পড়ার সময়ে ‘বাংলাদেশের বনাঞ্চল’ এ আমরা পড়েছিলাম, বাংলাদেশের ক্ষেত্রফলের শতকরা ১৬ ভাগেরও কম বনভুমি রয়েছে। অথচ কোন দেশের প্রাকৃতির এবং জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখতে কমপক্ষে শতকরা ২৪ ভাগ বনভুমি থাকা দরকার। এগুলো সেই সময় বইতে পড়েছিলাম। সেটাই যদি সত্যি হয়, তাহলে এই দুই যুগ কাল পার হয়ে এসে বনভুমি বলতে পারি, বনভুমি বেড়ে যাবার ক্ষীণতম সম্ভাবনাও হয়েছে কি? এর উত্তরে নিশ্চই ইতিবাচক বলার কিছু সুযোগ নেই। বাংলাদেশের বনভুমি বাড়েনি বরং আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যাচ্ছে। বনভূমি ধ্বংস করে অনেক ঠান্ডা মাথায় আমরা আমাদের ধ্বংস ডেকে আনছি। আগে ঢাকার রাস্তার ডিভাইডারে যে সব মেহগনি গাছ দেখতে পেতাম, তার কিছুই এখন আর দেখি না। আফসোস লাগে অনেক।
একটু একটু যখন বৃষ্টি পরতে দেখি, তখন নিজের নিঃশ্বাসের তারতম্য নিজেই বুঝতে পারি। বৃষ্টি হবার পরে নিঃশ্বাস নিতে অনেক ভাল লাগে। লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে, বুক ভরে বাতাস নিতে ভাল লাগে। বোঝা যায় বাতাস থেকে একটু হলেয় ধূলিকণার দূষণ বুঝি কমলো। কিন্তু গাছলাপা যদি না থাকে, তাহলে এই বাতাসে অক্সিজেনের সেই মাত্রা কোত্থেকে আসবে, যতখানি আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয়? ঢাকার বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ আদৌ কি স্বাস্থ্যকর মাত্রায় আছে? উত্তরটা আমাকে বলতে হবে না। আপনারাই জানেন।
মানুষের মন তো! কত কিছুই চায়! কত কিছুই ভাবতে ভাল লাগে নিজের মত করে। অনেক বৃষ্টি হবে। তাপদাহে পুড়ে যাওয়া শহরটা শান্ত হবে। বাতাসের দূষণ কমবে। মনে মনে আরও কিছু কাল্পনিক আশা জাগে... যদি এই বৃষ্টির পানির সাথে করোনা ভাইরাসের অভিশাপ টুকুও ধুয়ে মুছে চলে যেত... যদি আমাদের পৃথিবীটা আবার মুক্ত হয়ে যেত বৃষ্টিস্নাত হয়ে...