‘হারাম’ দিয়ে ‘ফরজ’ কাজ শুরু

রমজান মাস চলছে। মানুষের মধ্যে ধর্মীয় অনুভুতি এখন প্রবল থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন মাসজিদে মুসল্লিদের পরিমাণ অনেক বেশী থাকে। মুসল্লীদের অনেকেই মাসজিদে ওযু করেন। নিজের চোখেই আমি বহুবার দেখেছি, মাসজিদে যারা ওযু করেন, তাদের বেশীরভাগই কল খুলে রেখে ওযুর কাজ কর্ম চালাতে থাকেন এবং প্রচন্ড ভাবে পানির অপচয় করতে থাকেন। আমার চোখের সামনে এমন কেউ পড়ে গেলে আমি অনুনয় করে বলেছি কল বন্ধ করতে। উনি হয়ত নাক খোঁচাচ্ছেন বা হাত পা ডলছেন, এদিকে সম্পূর্ণ কল খুলে রাখা। লিটার লিটার পানি অপচয় হয়ে যাচ্ছে। একজন মানুষের ওজু করতে যে পরিমাণ পানি অপচয় করছেন, তা দিয়ে তো কমপক্ষে একজন দুইজনের সাধারণ গোসল হয়ে যাবার কথা। ধর্মীয় কাজ করতে এসে অপচয় করে আমরা কত বড় অধার্মিকের কাজ করছি, অন্যায় করছি সেদিকে কি আমরা দৃষ্টিপাত করেছি? ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় করা সর্বত ভাবে হারাম এবং কোরানে অপচয়কারীকে ‘শয়তানের ভাই’ আখ্যা দেয়া হয়েছে।

 

নামাজের জন্য ওযু করে বা দরকার হলে গোসল করে পবিত্র হওয়া অপরিহার্য ফরজ কাজ। কিন্তু একটা ফরজ কাজ যদি অপচয়ের মত হারাম কাজ দ্বারা শুরু হয় তাহলে সেই সেই আমলের দ্বারা কতটুকু উপকার পাওয়া যাবে সেটা সহজেই অনুমেও। একটা হাদিসের ভাবানুবাদ উল্লেখ করছি, যেখানে বলা আছে আছে, অপচয় করবে না যদি সেটা প্রবাহমান পানিতেও হয়।

 

ঢাকা শহরে হাজার নয় বরং হয়তো লাখো মানুষ এমন পাওয়া যাবে যারা পানি বা গ্যাসের কষ্টে থাকে প্রতিনিয়ত। এই মানুষগুলো জানে পানির কষ্ট কি নিদারুণ জ্বালা! আমার এলাকায় পানির কষ্ট নেই এর মানে তো এই না আমি যথেচ্ছা পানি নষ্ট করবো! অনেককেই দেখেছি, ট্যাপ খুলে রেখে উনারা দাঁত মাজতেই থাকেন বিকার শূন্য ভাবে! ঝরনা ছেড়ে দিয়ে গায়ে সাবান মাখতেই থাকেন! লিটারের পর লিটার পানি নষ্ট হতে থাকে! পানির পাম্প ছেড়ে দিয়ে অনেক বাড়িওয়ালাই বিকারশূন্য থাকেন! এমন অনেক সময় দেখেছি ট্যাঙ্কের পানি উপচায়ে রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরী হয়ে গেছে। আমরা এত বেপরোয়া কেন হয়ে যাই সবকিছু তে? এত খামখেয়ালী কেন আমরা? পরে যখন পানি শেষ হয়ে যায়, তখন হা হুতাশ আর সরকারের দোষ তাই না? আর আমরা সবাই ধোঁয়া তুলসী পাতা? একবার ওযু করতে গিয়ে আমি কত পানি অপচয় করি ভেবে দেখছি? আমার অপচয়ের কারণে কত মানুষ খাওয়ার পানি থেকেও বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে। মানবতা আর বিবেক আমাদের কোথায়? শুধু টক-শো, ঝাল-শো এসবের মধ্যে?

 

নবীজীকে বলা হয়েছে মানবের জন্য উত্তম আদর্শ। উনাকে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে দিন কাটাতে হয়েছে যে যাদের সম্পদের প্রাচুর্য আছে তারা এবং যাদের প্রাচুর্য নেই তারাও যেন উনাকে অনায়াসে অনুসরণ করতে পারে। নবীজী বসে এবং ঘটি জাতীয় কোন পাত্রে পানি নিয়ে, মাত্র এক ‘মুদ’ পরিমাণ পানি নিয়ে ওযু করতে। এক মুদ এর পরিমাণ এক লিটার থেকেও কম! গোসল করতেন তেমন অল্প পানি দিয়েই বা এক ‘সা’ পরিমাণ পানি দিয়ে। উনার আদর্শ কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়? হ্যাঁ দরকার হলে আরেকটু বেশী নেয়া যেতেই পারে, কিন্তু অপচয়? অপচয়ের অনুমোদন তো কিছুতেই দেয়া যায় না।

 

ট্যাপেও অল্প পানির ধারা ছেড়ে, একটু একটু করে ছেড়ে, অল্প পানি দিয়েও তো ওযু করা যায়, তাই নয় কি? আমরা সবাই এই ব্যাপারে একটু ভেবে দেখবো কি? পরিবারের বড়দের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আসুন আমরা সবাই আমাদের সম্পদ রক্ষার ব্যাপারে সচেষ্ট হই। বাচ্চাদের সেখাই যেন ওরাও কোন রকম অপচয় না করে। সূরা মুলকের শেষ আয়াত সবসময় মনে পড়ে। যেই আয়াতে বলা হয়েছে, “আপনি বলুন! তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূ-গর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদের সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা?”।

Author's Notes/Comments: 

৪ মে ২০২১

View shawon1982's Full Portfolio