দেড় বছরের ছেলেটা রাত একটা বেজে গেলেও ঘুমাতে চায় না। প্রতিদিন রাতে প্রায় যুদ্ধ করে তাকে ঘুম পাড়াতে হয় শারমিনের। বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই একই ঘটনা। প্রথমে কিছুক্ষণ অনুনয় বিনয়, বাবা সোনা বলে পায়ের উপরে নিয়ে দোলাতে থাকে শারমিন! এতেও যখন কাজ হয় না, তখন একসময় হাল ছেড়ে দেয় সে। সি-সেকশন ওপারেশনের পর থেকে মাঝে মাঝেই ওর মেরুদন্ডে ব্যথা হয়। বেশিক্ষণ একভাবে বসে থাকতে পারে না। শারমিন যখন হাল ছেড়ে দেয়, তখন ওর ছেলে অর্কর মনে হয় যেন ইদ লেগে যায়। মশারির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে, হেঁটে, দাপিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর দুর্বোধ্য সব ভাষায় কি কি যেন বলতে থাকে। শারমিন কিছুক্ষণ তাল দিয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে নিজের অ্যানড্রোয়েড মোবাইল নিয়ে বসে। টুকটাক মেসেজের উত্তর দিতে থাকে। আর এই সুযোগে অর্ক সারা খাট জুড়ে তার কর্মমান্ড চালাতে চালাতে একসময় নিজেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমের ঘোরে ঢলে পড়ে। তখন শারমিন ওকে টেনে টুনে ঠিকমতো শুইয়ে দেয়। কিন্তু তাতে কি দস্যি ছেলে ঠিক থাকে? ঘুমের ঘোরেও সে সারা খাট জুড়ে ঘুরতে থাকে।
অর্ক ঘুমিয়ে গেলে শারমিন পা টিপে টিপে বেরিয়ে আসে। বাইরের ঘরে নাবিল কাজ করছে তার কম্পিউটারে। অনেক্ষণ সাড়া শব্দ নেই। কম্পিউটারে কাজ করা শুরু করলে নাবিলের আর হুঁশ থাকে না। ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করে চলে। কাজ করে, গান শোনে। নিজের মত করে থাকে। এই নিয়ে শারমিনের সাথে বেশ কয়েক দফা কথা কাটাকাটি হয়েও গেছে। অনলাইনে ক্লাস নেয়া, খাতা দেখা, জার্নালের কাজ করা, অনেক কিছুই করা লাগে। শারমিন যে বোঝে না তা নয়, কিন্তু দস্যি ছেলেকে সামলাতে সামলাতে, সংসার দেখতে দেখতে, মাঝে মাঝে অধৈর্য হয়ে যায় বৈকি! নাবিল যে ঘরের বসে কাজ করছে, তার দরজার কাছে আসতেই, ঝড় আর বজ্রপাতের বিকট শব্দ শুনতে পেল শারমিন। চমকে গেল! বাইরে বাতাসের ছিটে ফোঁটাও নেই, এর মধ্যে ঝড় বৃষ্টি আসে কোথা থেকে? বুঝতে এক সেকেন্ড এর মত লাগল। নাবিল ইউটিউবে ঝড়ের শব্দ শুনছে। ও এমন প্রাকৃতিক শব্দ শুনে শুনে কাজ করতে পছন্দ করে। কখনও ঝড়ের শব্দ আর কখনও ঝর্ণা থেকে কলকল করে পানি বয়ে যাওয়ার শব্দ শুনে। কি যে মজা পায় ও এসব শুনে, শারমিন ভাবতে ভাবতে নাবিলের ঘরের দরজা খুলে ফেললো। ‘ঘুমাবে না?’
-এইতো আর একটু। মনিটর থেকে চোখ না সরিয়েই উত্তর দিল নাবিল।
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো শারমিন! চোখ তো দেখি লাল হয়ে গেছে! বেশ অনেকটাই চোখ লাল। বললো, তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে নাকি? চোখ লাল কেন? প্রেসার বেড়েছে নাকি? মেপে দেখবো?
-এখন প্রেসার মেপে কি হবে? একটু আগেই তো ওষুধ খেয়ে এলাম। নাহ আমার প্রেসার বাড়েনি।
-তাহলে? শারমিন দরজায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে।
-তুমি যাও তো ঘুমাও। আমার কিছু হয়নি। আমি দশ মিনিটের মধ্যেই ঘরে আসছি। শুয়ে পড়বো। এবার শারমিনের দিকে তাকিয়ে বললো নাবিল।
-না এখন এই ভাবে কাজ করা লাগবে না। কাল করো তোমার যা কাজ। বলতে বলতে কি মনে করে নাবিলের কপালে হাত রাখলো শারমিন। সাথে সাথে উত্তাপের ছেঁকা গেল মনে হয় হাতের তালুতে। জ্বর এসেছে নাবিলের। অথচ কাউকে কিছু না বলেই কাজ করে যাচ্ছে। তোমার জ্বর এসেছে, আর এখনও তুমিও বসে আছো। ঘরে চল। গলার স্বর একটু চড়িয়ে এবার শারমিন বললো।
-তুমি মাথা ধরার তেলটা একটু এনে মালিশ করে দাও তো। আমি শুয়ে পড়বো। বলেই আবার স্ক্রীনের দিকে তাকালো নাবিল, বললো, একটা ইমেইল করা বাকি চেয়ারম্যান স্যার কে। সেটা করেই আসছি।
শারমিন ততক্ষণে হাতে এক গ্লাস পানি, মেন্থল ওয়েলের একটা শিশি, আর হাতে করে একটা প্যারাসিটামল নিয়ে এসেছে। নাবিলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, খেয়ে ঘুমাতে চল। আমি তেল মালিশ করে দিচ্ছি কপালে।
-তুমি তো জানই আমি প্যারাসিটামল খাই না। আমার ভাল লাগে না। নাবিল বললো।
-এটা কোন কথা না। প্যারাসিটামল কেউ শখ করে খায় না। আর একটা খেলে তোমার কিডনির কিছুই হবে না। বলে শারমিন ট্যাবলেটটা নাবিলের মুখের সামনে ধরলো। খেয়ে নাও। কন্ঠে অনুরোধ ওর।
-না খাবো না। বলে ওষুধটা নিয়ে টেবিলের উপরে রেখে দিল নাবিল। পাশ থেকে টুল নিয়ে শারমিন কে দিয়ে বললো, একটু বসো। তোমাকে দুইটা ছোট ছোট কথা বলবো। শুনো। এরপর কিছু বলার থাকলে বলো, আমি শুনব।
অগত্যা টুলে বসলো শারমিন। জানে নাবিলের সাথে জিদ করে লাভ হবে না। যা বলবে সেটাই করবে। বেশী বাড়াবাড়ি করলে এই রাতেও চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলতেও পারে। রাগ হয়ে গেলে হুঁশ থাকে না ওর। প্রেসার বেড়ে যেতে পারে।
-প্রথম ঘটনা শোন। নাবিল বলতে শুরু করলো।
১৯৯১ সালের ঘটনা। তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আমার ব্লাড অ্যালার্জি আছে তা তো জানই। সেই সময়ে আমাকে মারাত্মক ভাবে স্কিন ডিজিজে আক্রমন করে বসে। আমার সারা গায়ে ঘা-পাঁচড়া হয়ে ভরে যায়। আমার হাতে পায়ে এখনও কতগুলো দাগ রয়ে গেছে। এই ঘা-পাঁচড়া এত বেশী করে আমার সারা গায়ে হাতে ছড়িয়ে পড়ে যে আমি এক মাসের মত স্কুলে যেতেও পারিনি। সারা গায়ে প্রচন্ড ব্যথা থাকতো ঘা গুলায় আর সেখান থেক পুঁজের পর পুঁজ বের হত। আমার গায়ে জ্বর থাকবো সবসময় বলতে গেলে। মাঝে মাঝে জ্বরের ঘোরে গায়ের ব্যাথাও টের পেতাম না। দুই হাতের আঙ্গুলের ভাজে ভাজেও এত বেশী ঘা হয়েছিল যে আঙ্গুল গুলো ভাজ করতে পারতাম না। ভাত মেখে দিতো, চামুচ দিয়ে তাই খেতে হতো।
এর মধ্যে আমার বাবাকে কে যেন পরামর্শ দিয়েছিল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করাতে। এতে প্রথমে ঘা আরো বেড়ে যাবে, কিন্তু একেবারে শরীর থেকে সব কিছু বেরিয়ে যাবে। কষ্ট করতে হবে কিছুদিন। শুরু হলো আমার হোমিওপ্যাথ চিকিৎসা। শরীরে ঘা আরও প্রচন্ড রকম বেড়ে গেল। পায়ের তলায়ও হলো ঘা। আমি হাঁটা চলাও করতে পারতাম না এমন অবস্থা হয়ে গেল। টয়লেটে ধরে ধরে নিয়ে যেত। আমার ১১ বছরের সেই জীবনটা দুর্বিসহ হয়ে গেল। আমাকে বলতো, একটু ধৈর্য ধর। ঠিক হয়ে যাবে।
কয়েকদিন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করার পরে আমার অবস্থা যখন আরও অবনতি হলো, তখন আমার বাবাই আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না আমার অবস্থা থেকে। শরীরে ঘা, প্রচন্ড রকম বেড়ে গেল। বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন হোমিওপ্যাথি আর না। এবার অ্যালোপ্যাথি শুরু করতে হবে। আমাকে উনার মটরবাইকের সামনে বসিয়ে নিয়ে গেলেন মগবাজারে এক স্কিন স্পেশালিস্ট এর কাছে। উনি চেক করে ওষুধ দিলেন। ওইদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছিল। প্রচন্ড মানে প্রচন্ড! ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে বাইরে এসে দেখি রাস্তায় এক হাটু পানি জমে গেছে। আমার সারা গায়ে জ্বর। তখন বৃষ্টির প্রকোপ একটু কম ছিল। ঝির ঝির করে হচ্ছিলো তখনও বৃষ্টি। ওখানে থেকে পানি ভেঙ্গে আমাদের মিরপুরের বাসায় আসতে সময় লাগবে অনেক। তাই ভেবে বাবা বললো, চল তোমার ফুফু বাসায় যাই। ফুফুর বাসা শান্তিবাগে। ওখান থেকে কাছেই। বাবা আমাকে মগবাজার থেকে শান্তিবাগ নিয়ে এলেন। আমি ছোট ছিলাম। আমাকে বসালেন বাইকের সামনে। তখন বসতে পারতাম। ওখান থেকে ফুফুর বাসা পনেরো মিনিটের পথও ছিল না। কিন্তু সেটাই পানি ভেঙ্গে আর রাস্তার জ্যাম ঠেলে যেতে সময় লেগেছিল প্রায় এক ঘন্টা। যা হোক, গেলাম ফুফুর বাসায়!
সেখানে গিয়ে আরেক কান্ড! ফুফু থাকেন তিন তলায়। নিচ তলা পর্যন্ত পানি চলে এসেছে। অনেক কায়দা করে পানিতে ভিজে বাবা মটরবাইক টাকে রাখলেন। আমি নামতে গেলে আমাকে পানির ভেতরে নামতে হবে। আমার দুই পায়ের পাতা ভরা দগদগে ঘা! ওই পচা পানি সেখানে লাগলে ঘা আরও মারাত্মক হয়ে যেতে পারে। বাবা বললেন তোমার নামতে হবে হবে না। আমার গায়ে তখনও অনেক জ্বর আর ব্যথা। ঠিকমত হাটতেও পারি না।
বাবা আমাকে ছোটদের মত পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নিলেন। আমার এই ভারী শরীর বাবা কোলে তুলে নিবেন সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়ত আমাকে সিঁড়িতে গিয়ে নামিয়ে দিবেন। দেন নি। কোলে করে পুরা তিনতলা উঠে ফুফুর বাসায় একটা ঘরে আমাকে শুইয়ে দিয়ে গায়ে একটা কাঁথা দিয়ে দিলেন। শোয়ানোর আগে আমাকে একটা প্যারাসিটামল খাইয়ে দিলেন। বললেন এটা খেয়ে নাও, ব্যথা কমে যাবে, আর দেখবা জ্বরও পড়ে গেছে। আমি খেয়ে নিলাম ট্যাবলেটটা। আমার দুই হাতের আঙ্গুলে অনেক ঘা ছিল। সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় বাবার গলা জড়িয়ে ধরবো সেটাও সম্ভব ছিল না।
-এই হল আমার প্রথম ঘটনা! শুনলে? নাবিল জিজ্ঞাসা করলো শারমন কে।
-হ্যাঁ শুনলাম। এবার দ্বিতীয়টা জলদি বল। তোমাকে শুতে হবে।
-হ্যাঁ বলছি। শোন এবার দ্বিতীয় গল্পটা।
তখন ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। ২০০৬ সালের ঘটনা। আবার আমার তুমুল জ্বর। আমার এমনিতে অসুখ তেমন হয় না। হয়ত ভাইরাল ফিভারই হবে। আমার মা থার্মোমিটার দিয়ে মেপে দেখলো প্রায় ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর উঠে গেছে। জ্বরে প্রায় বেহুঁশের মত শুয়ে আছি। মা মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে। পাশে বসে। এমন সময় বাবা এলেন। ঘরে মেইন গেট থেকে ঢোকার সময় আমার মা তাকে বললেন, নাবিলের অনেক জ্বর। ১০৩ উঠে গেছে। এটা শুনেই আবার বাবা উনাকে বলে দিলেন, ‘ওরে প্যারাসিটামল খেয়ে নিতে বলো’। এই কথাগুলো বলেই গটগট করে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আমি শুয়ে শুয়ে শুনলাম। সারাদিন জ্বরে পড়ে ছিলাম। বাবা একবারও আমার ঘরে এলেন না, আমার মাথায় হাত দিয়েও দেখলেন না। আমি আশা করেছিলাম, হয়ত এসে আমার মাথায় হাত দিয়ে একবার দেখবেন আমার জ্বর। দেখলেন না।
একটু পরে মা হাতে একটা প্যারাসিটামল নিয়ে এলেন। ভাবলেন আমি ঘুমিয়ে আছি। ডাকা মাত্রই সাড়া দিলাম। বললেন প্যারাসিটামলটা খেয়ে নিতে। আমি বললাম দাও। হাতে নিলাম। মা ঘরের ঘরের বাইরে চলে গেল। জানালা খোলা ছিল। আমি ওষুধটা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে, পানিটুক খেয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। নিজেই জলপট্টিটা আমার মাথায় দিয়ে শুয়ে রইলাম।
-আমার ঘটনা শেষ শারমিন। বলতে বলতে নাবিল কম্পিউটারের সুইচ অফ করে দিলো। ওই দিনের পর থেকে আমি আজ পর্যন্ত আর প্যারাসিটামল খেয়েছি কিনা মনে পড়ে না শারমিন। খেতে ইচ্ছা করে না। কেমন যেন বিষের মত লাগে। এখন নিজে বাপ হয়েছি তো, এখন আরও বিষের মত লাগে। একটা ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলের শরীর তো আর শরীর না, তার জ্বর তো আর এমন কিছু না! তার তো আর খারাপ লাগা কাজ করতে পারে না তাই না? ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলের তো মন চাইতে পারে না যে তার বাবা তার অসুস্থতার কথা শুনে একটু দেখুক, খোঁজ নিক! অনেক বড় হয়ে গেছিলাম না তখন? অনেক দূরত্ব বেড়ে গেছিলো তখন?
বাবুর দুই মাস বয়সে যখন ওর জ্বর এলো তখন তুমি কি বলেছিলে মনে আছে শারমিন?
-কি বলেছিলাম? শারমিন আনত চোখে জিজ্ঞাসা করে?
-তুমি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলে, ওরে যদি পারতাম তাহলে আবার পেটের মধ্যে ঢুকায়ে রেখে দিতাম। তাও তো এত জ্বর আসতো না। বাচ্চাটার খারাপ লাগতো না। ওর এই কষ্ট দেখতে পারি না। তুমি এটা বলেছিলে। মনে তাই তোমার?
-হ্যাঁ মনে আছে। ছলছল চোখে শারমিন বললো।
-চল শুয়ে পড়ি শারমিন। মাথা ব্যথা করছে।
-বসো তুমি। আমার একটা কথা আছে। শারমিন আবদারের সুরে বললো। বল রাখবে?
-কি কথা?
-আমি না হয় আজকে তোমাকে একটু বিষই দিলাম! আমার মুখের দিকে তাকায়ে না হয় আজকের মত বিষটুকু খেয়ে নাও প্লিজ! এই বলে শারমিন প্যারাসিটামলটা টেবিল থেকে তুলে নাবিলের মুখের কাছে ধরলো।
নাবিল এবার আর কিছু বললো না। শারমিনের হাত থেকে নিয়ে প্যারাসিটামলটা খেয়ে নিলো। শারমিন উঠে দাঁড়িয়ে নাবিলের মাথাটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। নাবিল চোখ বুজলো। শারমিনের দিকে তাকালে দেখতে পেত, শারমিনের চোখ দিয়ে ততক্ষণে দুই ফোঁটা লবণ পানি গড়িয়ে পড়েছে।