প্রিয় সায়ান, প্রিয় রাদিত-
আশাকরি তোমরা দুজনেই ভাল আছো। তোমাদের দু'জনের জার্নালের প্রতি উৎসাহ আমার উতসাহকেও বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক। নতুন প্রসঙ্গে যাবার আগে, তোমাদের দুজনকেই আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ না দিলেই নয়, তোমাদের দু'জনের এমন উদ্যোগ না থাকলে আমার জন্য 'রেজিস্টিভ সুইচিং' এর চ্যাপ্টারটা লেখা অনেক কঠিন হয়ে যেত। তোমাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন পুরো ব্যাপারটাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।
আশাকরি তোমরা ইমেইল দেখতে পেয়েছো। 'অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং' এর উপরে আমরা একটা কজা পেয়েছি। ইমেইলের ভেতরেই কিছু কিছু নির্দেশনা দেয়া আছে কোন কোন বিষয়ের উপরে লিখে হবে। ইচ্ছা করতে আমরা কোন টপিক বাড়িয়েও লিখতে পারি। প্রাসঙ্গিক এবং আধুনিক প্রসঙ্গ যত হয় ততই ভাল।
এবারের অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং এর জার্নালটায় আমি আর মুখ্য ভুমিকায় থাকবো না। সম্পূর্ণ কাজটা তোমাদের দুজনের হাতে ছেড়ে দিচ্ছি। আমি শুধু সময়ে সময়ে সহায়কের ভুমিকায় থাকবো। এর বেশী কিছু করার ইচ্ছা আমার আপাতত নেই। তোমরা দুজনেই সাঁতার দিতে পারো। পানিতে নেমে যখন সাঁতার দিতে পারোই, তখন আবার একটু চেষ্টা করে দেখো এবারো সাঁতার দিতে পারবে। যেটুকু সাপোর্ট দেয়া দরকার, আমি আছি তোমাদের সাথে। আগ্রহ নিয়ে তোমাদের কাজ দেখার জন্য বসে আছি।
মূল ডেডলাইন এর অন্তত ১০ দিন আগে তোমরা তোমাদের দুজনের ডেডলাইন ঠিক করে নাও। আমরা যেন অন্তত ১০ দিন আগেই আমাদের পেপারটা সাবমিট করে দিতে পারি আমাদের ঠিক সেভাবেই কাজটা করা উচিত। সময় আছে মনে করলে নিজের মধ্যে আলসেমি আসতে পারে। কাজেই প্রতিদিনই একটু একটু করে কাজে লেগে পড়। এতদিনে তোমাদের সম্যক ধারণা হয়েই গিয়েছে যে কিভাবে 'রিভিউ জার্নাল' লিখতে হয়। কাজেই আমি এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত তোমাদের হাতে কাজ বুঝিয়ে দিতে পেরে। তোমাদের ভবিষ্যতের গবেষক হবার বাসনায় এসব জার্নাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই আমাদের অভিজ্ঞতা বলে। আমি শুধু আমার নিজের অভিজ্ঞতাটুকু তোমাদেরকে বলে দিতে পারি। নিজের কাজটুকু সুচারুরূপে তোমরাই সুন্দর করে গুছিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, নিজের অ্যাকাডেমিক লেখাপড়ার ক্ষতি করে নয়। নিজের পাঠ্য পুস্তকের পাঠ তৈরী করে এসব জার্নালের কাজ করা উচিত। নিজের চিন্তাভাবনার বন্ধ দ্বার যেগুলো আছে সব একসাথে খুলে জার্নাল লেখার কথা চিন্তা করবে। কিছু লিখতে গেলে অবশ্যই বহুমুখী এবং কিছুটা বহির্মুখী চিন্তা ভাবনা নিয়েই লিখতে হয়।
আমার জন্য, যখন তোমাদের বয়সী ছিলাম, পাঠ্য পুস্তক পড়ার বাইরেও কত কি যে করতাম! টুকটাক চিঠি লিখতাম নিয়মিত। তবে সেটা কম্পিউটারে নয়। কাগজে কলমে। প্রচুর বই পড়তাম। গল্প উপন্যাস মুলত এগুলোই। ছাত্র জীবনের শুরু করেছিলাম নানা রকম থ্রিলার উপন্যাস দিয়ে। এখন বয়স বেড়ে যাবার সাথে সাথে জীবনের থ্রিলও মনে হয় কমেই যাচ্ছে। এখন ঠান্ডা ঠান্ডা লেখা পড়তেই ভাল লাগে। থ্রিলার পড়ি, কালে ভদ্রে। রিচফুড যেমন খাই মাঝে মাঝে অনেকটা তেমন। আমার জন্য কারিকুলামের বাইরের কোন বই আমার শিক্ষার অন্তরায় ছিল না, বরাবর সহায়ক ছিল। তোমরা তোমাদের নিজেদের প্রশ্ন করে দেখবে, তোমাদের জন্য সহায়ক কি না। যদি সহায়ক মনে করো, তো চালিয়ে নিও। নিজের উপরে বোঝা যেন না হয়। সেক্ষেত্রে চিন্তা করে খুঁজে বের করে নেবে, কি করলে তোমাদের দর্শন আর চিন্তা ভাবনার সবগুলো বন্ধ দ্বার খুলবে। এমন কিছু করা উচিত হবে না, যার জন্য তোমাদের চিন্তা চেতনার মধ্যে ছেদ পড়ে কিংবা তুমি তোমার ডেডিকেশন সম্পূর্ণ দিতে পারছো না। সবারি নিজস্ব কিছু টেকনিক আছে নিজেকে অগ্রগামী করার। গতি সবার হয়ত এক থাকে না। আর যুগের আধুনিকতায় তোমাদের চেয়ে গতিতে আমি অনেক পিছিয়ে রয়েছি এবং থাকবো সেটাও আমি অত্যুক্তি বলে মনে করি না।
ডেডিকেশন সম্পূর্ণ দেয়ার অর্থ কিন্তু এটা হয় যে এক জায়গায় ডেডিকেশন দিলে অন্য জায়গায় সেটার কমতি হয়ে যায়। জীবনে অনেক কিছুই সামঞ্জস্য বিধান করতে হয়। জীবনের গতিধারায় নিজেকে মানিয়ে চলতে হয়। আমার বিশ্বাস তোমরা মানিয়ে চলা শিখে গেছো। যদি, আরো কিছু শেখার বাকী থাকে, শিখে যাবে। যতদিন আমি ততদিন তোমাদের দু'জনের ছায়া হয়েই আছি। কিন্তু প্রকৃতি চলবে তার নিজস্ব নিয়মে। সেখানে বাঁধা দেয়ার কেউ নেই। প্রকৃতির নিয়মের সাথে আমরা যত সহজে মানিয়ে নিতে পারব, আমাদের জীবন মনে হয় তত দ্রুত সহজ হয়ে যাবে। একটা সময় কিন্তু এমন আসতেই পারে, আসাটাই স্বাভাবিক, যখন তোমাদের দুইজনকে নিরবিচ্ছিন্নত ভাগে এগিয়ে যেতে হবে। তখন তোমরা ঠিক মধ্যাহ্নের সূর্যের মত হয়ে যাবে। ঠিক মধ্যাহ্নে কিন্তু ছায়া থাকে না। তোমরা মধ্যাহ্নের আলোর প্রত্যাশী হয়ো না। নিজেরা নিজেদের মধ্যাহ্নে অধিষ্ঠান দিয়ে নিও।
তোমাদের দুইজনের জন্য আমার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি। অগ্রগামী হও নিজেদের লক্ষ্যে।
তোমাদের চিরায়ত শুভাকাঙ্খী