২৪ মে ২০২০

যত অভিমান সব বন্ধুর সাথে

= = = = = = = = = = = = = =

 

প্রিয় বন্ধুরা,



শৈশবের সেই হারানো দিনগুলোর কথা কি মনে পড়ে তোমাদের? সেই একসাথে হাত-বাটাবটি করে খেলা? কেউ চোর তো কেউ তার পিছে ধাওয়া করছে? খেলতে খেলতে কত মান অভিমান, হাসি কান্না, আড়ি-জন্মের আড়ি, আবার একটু পরেই ভাব হয়ে যাওয়া? মনে পড়ে কি তোমাদের, একসাথে গলায় গলায় হাত দিয়ে পিঠে স্কুল ব্যাগ কাধে করে স্কুলে যাওয়া, টিফিন কাড়াকাড়ি ভাগাভাগি করে খাওয়ার দিনগুলো? আমি জানি, আমার মত করে না হলেও তোমাদের সবারই সেইসব পুরানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। আমরা মানুষরাই পারি আমাদের অতীতকে আমাদের স্মৃতিতে বাঁচিয়ে রাখতে। অথবা উল্টা করে যদি বলি, অতীতকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি বলেই আমরা মানুষ। অতীত আছে বলেই ইতিহাস আছে, আমাদের ঐতিহ্য আছে।

 

জীবনের বেশ কতগুলো বছর আমরা প্রায় পার করে এসেছি। কে কতদিন বাঁচবো সেটাও তো বলতে পারি না। বলতে দ্বিধা কি? আমরা এখন তো সেই মধ্যবয়সেই চলে এসেছি। দেখতে দেখতে কতদূর! আর কতদূর যেতে পারবো সেটাও জানি না। আমি প্রায়ই একটা কথা ভাবি। স্রষ্টা যদি আমাদের গড় আয়ুও দেন, তবুও ভেবে দেখো, অর্ধেকের একটু বেশী কিন্তু শেষ হয়ে গেল। আমি নিজেও এখন হাইপারটেনশনের রোগী। নিয়মিত প্রেসারের ওষুধ খেয়ে যেতে হচ্ছে। তবুও দুশ্চিন্তা করি না। আমি সবসময় হাসিমুখেই থাকি এবং নিজেকে বলি, আমি ভাল আছি। যখন তুমি চোখ বন্ধ করে মন থেকে বলতে পারবে, ‘আমি ভাল আছি’, তখন দেখতে আসলেই তুমি ভাল আছ। কি হবে এত দুশ্চিন্তা করে বলতো বন্ধুরা? তবুও আমি জানি আমাদের নানা রকম চিন্তা গ্রাস করেই ফেলে। তবুও এর থেকে যতটুকু বেঁচে থাকা যায়। বেঁচে থাকতে হলে আমাদের যেমন নিঃশ্বাস নিতে হয়, ঠিক তেমনই বেঁচে থাকতে হলে আমাদের বন্ধু থাকতে হয়।

 

বন্ধুতো আমার সেই যায়গা, যেই মুক্ত আকাশ, যেখানে আমি অবাধে বিচরণ করতে পারি। বন্ধু তো আমার সেই জায়গা, যে আমাকে টেনে ধরে যখন আমি অবোধের মত সীমানা পেরিয়ে চলে যেতে চাই। বন্ধু হল আমার সকল ভালবাসা, আর মান অভিমানের জায়গা। আমার অভিমান যদি বন্ধুদেরকেই না জানাতে পারলাম, তবে আর কে বুঝবে বল? সৃষ্টিকর্তার পরে, এই পৃথিবীতে মনে হয় বন্ধু একমাত্র যায়গা যার কাছে সব বলা যায়। অথচ বৈবাহিক জীবনেও এমন অনেক কিছু থেকে যায় যা নিজের জীবনসঙ্গীর কাছেও হয়ত খুলে বলা যায় না।

 

এতক্ষণ যা বলেছি আবেগ দিয়েই বলেছি। এবার বলবো আমার কিছু কথা। তোমরা অনেকেই মনে হয় গ্রুপে ইদানিং আমার কিছু কথা খুব সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলেছ, বা মনে করছ, আমি হয়ত এমন করছি কেন? লাইক কমেন্ট নিয়ে কিসব আবোল তাবোল বলছি! এগুলো আসলেই সব আবোল তাবোল কথা। এগুলাকে তোমরা মোটেই রাগ করে বা অভিমান করে দেখবে না। চূড়ান্ত অশালীন, সভ্যতা বিবর্জিত কিছু না হলে, সেটা তো করাই যায়। বন্ধুর সাথে বন্ধুর ঠাট্টা চলতেই পারে যদি না সে মনে মনে কষ্ট না পায় তবেই। হাতের পাঁচ আঙ্গুল কখনও সমান হয় না, এই প্রবাদটা আমরা কিন্তু কথায় কথায় ব্যবহার করি। পাঁচটা আপন ভাইয়ের আচরণ কি কখনও এক হয়? হয় না রে! তাহলে আমরা যারা এই গ্রুপে আছি, আমরাও ভিন্ন ভিন্ন রকম হব সেটাই তো স্বাভাবিক! কেউ রাগ হবে, কেউ হাসবে, কেউ একটু খোঁচা দিবে এই আরকি! আমরা সবাই সবাইকে একটু সহানুভুতির সাথে নিলেই তো হয়ে গেল।

 

তোমরা অনেকেই আমার দুর্বল কিছু লেখার সাথে পরিচিত। গত বছর, মনের কষ্ট থেকেই কলম ধরেছিলাম। কলম বলা ঠিক হল না, রুপকার্থে নিতে পারো। কম্পিউটারের কি-বোর্ড হাতে তুলে নিয়েছিলাম। যখনই মন খারাপ হত, তখনই কিছু না কিছু লেখা লিখি শুরু করতাম। আমার লেখা লিখির একটা বিশেষ ধারা “বৃশ্চিক অভিধান” তখন থেকেই শুরু করি। ‘ব্যাক টু স্কুল’ গ্রুপের সবার কাছে, মডারেটর বা অ্যাডমিন প্যানেলে যারা আছে, সবাই নামে অ্যাডমিন হলেও, আমাদেরই তো বন্ধু ভাই! আমাদেরই ভালবাসার এক একজন ওরাও। ওদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ আমার এই অক্ষম দুর্বল লেখাগুলোকেও ভালবেসে গ্রহন করেছে এবং আমার লেখার জন্যই বৃশ্চিক অভিধান নামে একটা পোস্ট-ট্যাগ ও খুলে দিয়েছে। প্রায় সাত আট হাজার সদস্যের একটা গ্রুপে এটা কি কম পাওয়া? আমি কখনই ভুলে যাইনি। আমি কৃতজ্ঞ। আমি ছোট বেলা থেকেই খুবই আড্ডাবাজ এবং আমোদ প্রিয়। বন্ধুরা যেমন আমাকে খোচাতো, তেমনি আমিও কম যেতাম না। তাই এখনো একটু খোচাখুচি করি। কিন্তু রাগ গোস্যা? মোটেই না। অভিমান হয়ত কখনও কখনো একটু হয়, কিন্তু সেটা কচু পাতার পানির মত। আমি আমার সারা জীবনে কারো উপরে রাগ করে বেশিদিন থাকতে পারিনি। এখনও পারি না। আর বন্ধুদের সাথে রাগ আবার কি? বাঁশ দেয়া এবং বাঁশ খাওয়া এটাই বন্ধুত্বের একটা ধারা! মন্দ কি?

 

কাজেই, তোমরা মনে করো না, যে আমি লাইক কমেন্ট নিয়ে যে ফাজলামি গুলা করছি তা আসলেই করছি বা এমন কিছু চাচ্ছি। মোটেই না। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে, আমি এত গুলো বন্ধু পাচ্ছি, সেটা বড় কথা নাকি একটা সফটওয়্যারে নীল রঙের একটা আঙ্গুল এর ছবি দেখা বড় কথা? ভার্চুয়ার এইসব লাইকের কি দাম আছে? আমার লেখা পড়ে কারো মনে যদি কোথাও একটা দাগ কাটে, অথবা নিঃশ্বাসের সাথেও কোন বন্ধুর যদি মনে হয়, ও তো ঠিকি লিখছে, তাহলে ওখানেই আমার সার্থকতা। আমি আসলে কিছুই গুছায়ে লিখি না যেভাবে ঐপন্যাসিকরা লেখেন। মনের ভেতর কিছু চলতে থাকা, একটু একটু চিন্তা করি আর কি-বোর্ড এ আঙ্গুল চালাইতে থাকি। এইতো এভাবেই চলছে!

 

এই গ্রুপ আমাদের ভালবাসার গ্রুপ, আমাদের পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতার গ্রুপ। সুখে দুখে আমরা সবার পাশে থাকবো, সেজন্য আমাদের এই গ্রুপ। এখানে কেউ কারো উপরে রাগ করে থাকবে না। রাগ হলে, সরাসরি গিয়ে তাকে বলে দিও, তোমার কথায় আমার রাগ লাগছে। আমি কিন্তু এমনই করি। আমার এসব আচরনের সবচেয়ে বড়ো ভুক্তভোগী হল অ্যাডমিন প্যানেলের গোবেচার বন্ধুগুলা! আহারে! আমার সব মান অভিমান আমি ওদের উপরে ঝেড়ে আসি। কিন্তু বন্ধুরা, বিশ্বাস কর, আমার লিখতে গিয়েও চোখ ভিজে যাচ্ছে, আমি যতবার রাগ করেছি, ওরা ততবার আমাকে বন্ধুর মত না, মা’এর মত করে বুঝিয়েছে, সান্ত্বনা দিয়েছে। আমার মত অধমের জন্য এর চেয়ে বড় স্বীকৃতি আর কিছুই চাই না।

 

আমাকে অবশ্যই লাইক কমেন্ট তোমাদের দিতেই হবে! এর থেকে আমি কাউকে পরিত্রাণ কিছুতেই দেব না। তবে সেই লাইক যদি ফেসবুকে নাও দাও কিছু যায় আসে না। মনের থেকে দিও। ভালবাসা দিও। তেমনি ভাবে অন্য সব বন্ধুদেরও ভালবাসা দিও। যে উৎসাহ চায় তাকে উৎসাহ দিও, যে একটু কেয়ার চায় তাকে কেয়ার দিও! এভাবেই টিকে থাকুক আমাদের বন্ধুত্ব। কয়দিন আর বাঁচবো বল? কিছুদিন পর পর এক একটা বন্ধুর চির-বিদায়ের কথা যখন শুনি তখন কি বুখের ভেতর মোচড় খায় না? তখন কি একবারো মনে হয় না, আমার নাম্বারও অচিরেই এসে যেতে পারে। আমি কিন্তু মরতেই চাই না। আমি সবসময় বেঁচে থাকতে চাই। পৃথিবীতে না, তোমাদের বন্ধুত্বে আর ভালবাসায়। আর কিছু না। তোমরা দোয়া করবে আমার জন্য, সবার জন্য। কোন রাগ নয়। কোন অভিমানও নয়। এই মেকী দুনিয়ায়, সব মেকী হলেও আমাদের বন্ধুত্ব খাঁটি থাকুক। আর কি চাই?

 

করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগে সবারই মন কমবেশী খারাপ থাকে। অনেক অনেক রকম কষ্ট বা ঝামেলার মধ্যেও থাকে, মন ভাল থাকে না সবসময়। কিন্তু আমরা যদি সহমর্মি হই, পাশে থাকি তাহলে সেই কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়। সাহয্য কিন্তু দু’টা ভাল পরামর্শ দিও অনেকের ক্ষেত্রে ভাল কাজে দেয়। আমরা সবাই সবার পাশে থাকবো। সুখ দুঃখ সবাই ভাগ করে নেই। আমরা সবাই দেখবো, জীবনটা আসলেই অনেক সুন্দর।

 

যারা এতক্ষণ আমার এই প্যাঁচাল পড়েছো, খবরদার ‘লাইক’, আর ‘কমেন্ট’ না করে কেউ যাবে না! আমাকে লাইক করতেই হবে। কমেন্ট না দিলে কিন্তু চলবেই না। কালকে ঈদ! সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারাক। সবার জীবন অনেক অনেক আনন্দে কাটুক। পৃথিবীতে থেকে সমস্ত বিপদ আপদের ভ্রষ্টাচারী মায়াজাল দূরীভূত হোক। স্রষ্টার কাছে সবাই সবার নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করি। সবাই ভাল থাক। ভাল থাকুক আমাদের আগামী প্রজন্ম। সবাইকে আমার ভালবাসা।

 

ইতি,

এক অধম আমি!  

View shawon1982's Full Portfolio