২৩ মে ২০২০

**ভ্রুণের বিকাশে আয়োডিন

 

আমার ডক্টরাল থিসিস বা PhD থিসিস এর বিষয় ছিল পানি থেকে ক্ষতিকারক ভারী ধাতব পদার্থের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র (আয়ন) অংশগুলো দূরীভুত করা। সবটুকু বললাম না, শুধু কাজের অংশটার নাম বললাম। ভারী এবং ক্ষতিকারক ধাতব পদার্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, সীসা (লেড), পারদ (মার্কারী), আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি। যেসব ধাতুর ঘনত্ব পানির চেয়ে ৫ গুণ বা তার চেয়েও বেশী এবং দেহের জন্য ক্ষতিকারক, সেগুলোকেও বিষাক্ত ধাতব পদার্থ (Toxic Heavy Metals) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলো শুধু মানব শরীর নয়, বরং অন্য যে কোন পশু বা বৃক্ষ দেহে প্রবেশ করলে তা শরীরের কোন কাজে লাগে না, হজম হয় না কিন্তু শরীর থেকে নির্গত বর্জ্যের সাথে বের ও হয়ে যায় না। এগুলো শরীরের আভ্যন্তরীণ অর্গান যেমন, লিভার, কিডনি, ব্রেইন ইত্যাদিতে ক্রমশ জমা হতে থাকে।

 

এই জমা হবার একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ (Threshold limit) পর্যন্ত দেহে এদের ক্ষতিকারক উপসর্গ দেখা দেয় না। কিন্তু সেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেই, এদের মারাত্মক ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ, মার্কারি বা পারদ সরাসরি ব্রেইনে জমা হয় এবং ব্রেইন ড্যামেজ, স্ট্রোক থেকে শুরু নানা ধরণের মাথার অসুখ বা নিউরোলজিক্যাল ডিসর্ডার হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কোন মা যদি পারদযুক্ত কোন খাবার খেয়ে ফেলে, তবে সেই পারদের আয়ন সরাসরি জমা হতে থাকে ভ্রুনের মগজে এবং এযাবৎ কালে অনেক শিশুই এ কারণে ব্রেইন ডিফেক্ট নিয়ে জন্মাতে দেখা গেছে। তেমনি ভাবে সীসা জমতে থাকে লিভারে এবং সেটা লিভার সিরোসিস পর্যন্ত ঘটাতে পারে। ক্যাডমিয়ামের প্রভাবে হাড় বেঁকে যেতে পারে। ক্রোমিয়াম এর প্রভাবে কিডনির কার্যকারিতা সম্পুর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দুঃখের বিষয় হল, গবাদি পশু এবং হাস মুরগি বা মাছ চাষে যে খাবার দেয়া হয় পশুদের, সেগুলোরে অত্যন্ত ক্ষতিকারক মাত্রায় ক্রোমিয়াম থাকে। সেই খাদ্য থেকে তা পশুর শরীরে এবং সেখান থেকে আমাদের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়। অবস্থা কত বয়াবহ একটু ভেবে দেখুন।   

 

আমরা কি খাচ্ছি না খাচ্ছি সেটা একটু গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত। আমাদের গর্ভবতী মায়েদের খাবারের ব্যাপারেও অনেক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ গর্ভাবস্থায় খাওয়া খাবারের সারাংশই গর্ভস্থ ভ্রুণের পুষ্টি যোগায়। আমাদের শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ কিন্তু আমাদের সতর্কতার উপরে অনেকাংশে নির্ভরশীল। গর্ভবতী মায়েদের আয়োডিন যুক্ত লবন খাওয়া নিশ্চিত করতেই হবে। আয়োডিনের অভাবে শুধু যে গলগন্ড রোগ হয় তা নয়, বরং ব্রেইন বা মগজের কার্যকারিতা মারাত্মক ভাবে ব্যহত হয় এই আয়োডিয়ের অভাবে। এর ফলে সন্তানের ভেতর অটিজম, এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

 

এই বিষয়ে আমার খুব চিন্তা হয়! আমরা যখন আমাদের মায়েদের গর্ভে ছিলাম তখন আমাদের মায়েরা কি খেয়েছেন বা কি করেছেন সেটা সৃষ্টিকর্তাই ভাল জানেন। অবশ্য সেই সময়ে খাবারে ভেজাল কম ছিল সেটাও যেমন ঠিক, ক্ষতিকারক ভারী ধাতু এবং আয়োডিন নিয়েও যে কোন উচ্চবাচ্য ছিলে না সেটাও কিন্তু ঠিক। এখন উনাদের কর্মফল আমাদের উপরে প্রকাশ পেলেও, কিছু তো আর করার নেই। এজন্য আমাদের উচিত সতর্ক হয়ে যাওয়া। আমাদের আগত অনাগত সন্তানরা যেন সঠিক পুষ্টি পায় এবং ক্ষতিকর ধাতব পদার্থ খাওয়া থেকে বেঁচে যেতে পারে সেজন্য আমাদের উচিত অনেক বেশী সতর্ক হয়ে যাওয়া। গর্ভবতী মায়েদের আয়োডিন যুক্ত লবণ খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে যেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে না জন্মায়।

 

View shawon1982's Full Portfolio