প্রিয়তমেষু,
এইতো বেশ বেঁচে আছি এখনও। তবুও জীবনের নিয়মে চলছে শ্বাস প্রশ্বাস। এটার নাম যদি বেঁচে থাকা হয় তাহলে ত বেঁচেই আছি। কিন্তু তবুও কি মনে হয় না, প্রতি সেকেন্ডে ধাবিত হচ্ছি এক অনিশ্চিতের দিকে অবধারিত ভাবে? তার জন্য কি প্রস্তুত হয়েছি তুমি আমি বা আমরা কেউ? মনের অগোচরেই কি আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি না? কিন্তু কার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি? সৃষ্টিকর্তা তো অনেক দূরের ব্যাপার নবনীতা, সত্যি করে বলতো, কখনও কি নিজের কাছ থেকে পালাতে পেরেছ? কেউ কি সেটা পারে? কতটুকু সাধনা করলে তা অর্জিত হতে পারে, সেটা আজও রয়ে গেল আমার জানাশোনা চৌকাঠের বাইরের আঙ্গিনায়।
তোমার জন্য আমি একটা কবিতা লিখবো ভেবেছিলাম। যে কবিতা হবে আমার আত্মার রূপায়ন! কি এক পরাবাস্তব কথা বলে ফেললাম তাই না? আচ্ছা বলতো, জীবনটা কি কবিতার মত হতে পারে না? নাকি কবিতাগুলো জীবনের মত? এই দুটি প্রশ্নের দোলাচলে, এক অন্তহীন দুর্বিপাকে মনে হচ্ছে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি ক্রমশ। যদি অনন্ত এক পথের মাঝে হারিয়েও যাই, আমার স্বস্তি কোথায় জানো? আমাকে কেউ খুঁজতে আসবে না। যে পথে আমি ক্রমশ এগিয়ে চলেছি, সেটা কবিতার মতই কিছু নব নব উপমার সমষ্টিতে রচিত এক বৈচিত্র্যপূর্ণ বন্ধুর পথ! আমাকে যে আত্মার স্বরূপ জানতেই হবে নবনীতা!
আমার চারপাশ কেমন যেন সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। মুক্তির পথগুলো ক্রমশই দুর্গম আর দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে। যা আমি বলতে চেয়েছি সেটা এখন আর কেউ বুঝতে চাইছে না। যা আমি পার করে এসেছি সেটা কেউ দেখতে চাইছে না। সবাই যে যার অবস্থান থেকে আমাকে বিচার করতে চাইছে। কিন্তু তুমি বলতো, যে আমাকে বোঝেনি, বোঝার চেষ্টাও কখনও করেনি, সে কি করে আমাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়? কিভাবে আমার কাছ থেকে জবাবদিহিতা আশা করে?
নির্জনতার মাঝে যদি নৈঃশব্দ্যের ঠাই না হয়, তাহলে জনতার মাঝে আমার অস্তিত্ত্ব কোথায়? নেই! আমার মাঝেই আমি নেই। আমার কল্পনাতেও আমি নেই, কবিতার ছত্রে ছত্রেও আমি নেই। প্রতিবাদের পংক্তিগুলো এখন স্তিমিত হয়ে গেছে। গল্পের গতিধারা দিকভ্রান্ত হয়ে ছিটকে পড়েছে তার নিজস্ব গতিধারা থেকে। আর আমার ক্ষীন কন্ঠস্বরটুকু এখন অপেক্ষায় আছে লোকাচারের নৈবেদ্যে এক অপসৃয়মান দেবতার অর্ঘ্য হবে বলে।
ভাল থেকো তুমি নব।
শুভেচ্ছান্তে,
বিস্মৃত কবি।