TO WHOM IT MAY CONCERN
আজ একটু মজার কিছু হোক। চারিদিকে শুধু কষ্ট আর দুঃখের কথা শুনতে শুনতে আমি কেমন যেন ভীতু হয়ে যাচ্ছি। এখন বাসার সবাই খবর শুনলেও আমি খুব একটা খবর শুনতে আগ্রহী হই না। মনের অগোচরে মন আমাকে সান্ত্বনা দেয়, সব ঠিক আছে! সব ঠিক হয়ে যাবে অচিরেই। মানুষ আশায় আশায় বেঁচে থাকে, আমিও তার ব্যতিক্রম নই। কিছুদিন আগে এক ছোট ভাইর সাথে কথা হচ্ছিল। কথা শেষে বললাম, ‘ইনশাআল্লাহ আবার দেখা হবে’। যেমনটা সাধারণত বলি সবাইকে কথা শেষ করার পরে। এটা শুনে ও বললো, ‘ভাই আগে বেঁচে তো থাকি, যা শুরু হইসে, বাঁচি কিনা আল্লাহ জানে’! আমার চেয়ে অনেক ছোট একজন মানুষ যখন এত ভয় পেতে পারে, তখন আমি এত উদাসীন কি করে থাকি আমি নিজেও জানি না। এটা আসলে এক ধরনের হঠকারিতা বলা যেতে পারে। নিজেই নিজেকে একটু ধোঁকা দিয়ে ভাল থাকার চেষ্টা আর কি। দেশের এই জরুরী পরিস্থিতি, সার্বিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে, কবে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে, সেটা মনে হয় কোন জ্ঞানী মানুষই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। যা কিছুই আমরা শুনছি সবই ধারণার উপরে ভিত্তি করে।
যাহ! দিলাম তো বিরক্ত করে আবার সেই হতাশার কথা বলে! Sorry! Extremely Sorry! পাঁচ অক্ষরের এই শব্দ Sorry এর মধ্যে অনেক শক্তি আছে! অনেক ক্ষেত্রে মানুষের পাথুরে মনকেও সহজেও গলিয়ে দিতে পারে। আমি অবশ্য কোন পাথর গলাতে আসিনি আজকে। আমার কথায় পাথর নাও গলতে পারে। আমি এসেছি মূলত আমার একান্ত নিজস্ব কিছু জবানবন্দী বা Confession দিতে। এখন তো ছেলেপেলেদের মধ্যে নানা রকম কনফেশন পেজ দেখি ইন্টারনেটে। সেখানে নানা ধরণের প্রেমের ইঙ্গিতবাহী কথা বার্তাই বেশী থাকে। আমাদের সময় ইন্টারনেট এভাবে ছিল না, আর ফেসবুক তো এসেছে যখন তখন ভার্সিটি প্রায় শেষ!
আমি ফেসবুকে জয়েন করি ২০০৭ সালের দিকে আমার বন্ধু রেজা’র উৎসাহে। অ্যাকাউন্ট একটা খোলার দরকার, খুলে রেখে দিয়েছিলাম। এটা দিয়ে আসলে যে কি করতে হয় বুঝতাম না। এর আসল প্রয়োগ আর উপকারিতা বুঝতে পেরেছিলাম ২০০৮ এর জানুয়ারীতে সিঙ্গাপুরে যাবার পরে। একাকীত্ব যে কি কঠিন জিনিস হতে পারে, সেটা সিঙ্গাপুর না গেলে হয়ত বুঝতামই না। তখন এই ফেসবুক, আর Yahoo Messenger এ বন্ধুদের সাথে রাতদিন যোগাযোগ করতাম। সময় পার হত। এক অদ্ভুত স্বপ্নের মধ্যে দিন চলে যেত। ভালই লাগতো। নানা বৈরি পরিবেশে প্রবাস জীবনে ফেসবুক আর বন্ধুদের সাথে ভার্চুয়াল আড্ডাটাই অনেক প্রিয় হয়ে ওঠে। কিছু করার ছিল না কারণ বিদেশে চাইলেও দেশের মত আড্ডাবাজি তো করতে পারতাম না। তাও আমার সৌভাগ্য শুধু না পরম সৌভাগ্য বলতে হবে কারণ আমি এবং আমার বন্ধু সুদীপা একই ল্যাবে একই সুপারভাইজরের অধীনে কাজ করেছি। সুখে দুখে দুই বন্ধু কত আলাপ করেছি!
এবার আসি Confession প্রসঙ্গে। মাঝে মাঝে কিছু প্রশ্ন আমি নিজে নিজে চিন্তা করি। উত্তরগুলা তো আমার জানাই আছে। কেন জানি মনে হল এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি আমি শেয়ার করি, মন্দ তো কিছু হয় না। আমারই তো কনফেশন! এগুলো মূলত ফেসবুক কেন্দ্রিক কিছু কনফেশন। কারো ইচ্ছা হলে দেখুক! কেউ যদি আমার উপরে ভুল ধারণা করে বসে থাকে, যদি সে পড়ে হয়ত তার ভুল ধারণা ভেঙ্গে গেলেও যেতে পারে। আমার কনফেশনে সত্যি বলতে কি, প্রেম বলে কিছু নেই। কারণ জীবনে প্রেম করিনি যে! সেই প্রসঙ্গে না হয় আরেকদিন বিস্তারিত বলবো। আজ থাক!
মাঝে মাঝে নিজে নিজে যে প্রশ্নগুলো নিয়ে কিঞ্চিত ভাবি সেগুলোর কিছু নিচে তুলে দিয়ে নিজেই উত্তর দিয়ে দিচ্ছি। পাঠক, আপনারা হতাশ হবেন না। যদি আপনাদের আরো কিছু এই অধম নিকৃষ্টের কাছে জানতে ইচ্ছে করে, জিজ্ঞাসা করবেন। আশাকরি হতাশ হবেন না। কিছু প্রশ্ন যেগুলো আমি ভেবেছি অনেকটা এমন-
১। বন্ধু সংখ্যা কত? কারা কারা বন্ধু হয় তোমার?
২। স্বল্প পরিচিত/অপরিচিত/বন্ধুর আত্মীয় স্বজনকে অ্যাড কর কিনা?
৩। ফেসবুকের আচরণ আর ব্যক্তিজীবনের আচরণ একরকম কিনা?
৪। নিজে কি ধরনের ফেসবুক পোস্ট পছন্দ কর?
আপাতত এগুলোই থাক। আগেই বলেছি, পাঠকের যদি আরো অন্যকিছু বা আমার সম্পর্কে অন্য কোন জিনিস জানতে ইচ্ছা করে নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। অবশ্য আমি কিছুই না! আমার সম্পর্কে কারো কৌতুহল হবে না জানি। আশা করতে দোষ কি? আমি উত্তরগুলো দেয়ার চেষ্টা করছি।
১। বন্ধু সংখ্যা কত? কারা কারা বন্ধু হয় তোমার?
উত্তরঃ বাস্তব জীবনে বন্ধু সঙ্খ্যা খুবে বেশী নয়। হাতে গুনে বলা মুশকিল। কারণ আমি নানা বয়সী মানুষের সাথেই বন্ধুর মত মিশি। বয়সে বড় যেমন আছেন তেমনি নিজের থেকে ১৬-১৭ বছরের ছোটরাও আছে। ছোটরা ভাই বললেও আমাদের সম্পর্ক বন্ধুর মতই। আমার অনেক ছাত্র আছে যাদের সাথে আমার সম্পর্ক একদম বন্ধুর মতই। ওরাও আমাকে স্যার বলে সম্বোধন করলেও, জানে এই স্যারের কাছে বিনা দ্বিধায় মনের কথা বলে দেয়া যায়। বলেও অনেকে। অনেকে নিজের মত করে পরাপর্শ চায়। যতটুকু সাধ্যে কুলায় বলি।
আর ফেসবুকে বন্ধুর সংখ্যা এখন মনে হয় ৪৫০০+ এর মত হতে পারে। কিভাবে এত হল? কমন ফ্রেন্ড থেকে হতে হতে অনেক হয়ে গেছে। স্কুল, কলেজ, ব্যাচমেট, ভার্সিটি, ছাত্রছাত্রী, সাহিত্য, মূদ্রা সংগ্রাহক এমন নানা ধরনের সার্কেলের সাথে জড়িত আমি। সেই ৪৫০০ এর সবাইকে কে যে আমি চিনি তা হয়। সার্কেলের মাধ্যমে অনেকের সাথেই ফেসবুকে জড়িত আছি। আমার বন্ধুর তালিকায় এক বড় অংশ হল মূদ্রা সংগ্রাহকরা। কারণ আমি অনেক ছোট বেলা থেকেই ধাতব মূদ্রা এবং ব্যাংক নোট সংগ্রহ করি। এজন্য সারা বিশ্বের অনেক দেশের অনেক সংগ্রাহক আমার লিস্টে আছেন। আর ভার্সিটির এক বড়ো সার্কেলের সাথে তো যোগাযোগ কোন না কোন ভাবে হয়েই যায়।
আবার যেহেতু এই অক্ষম হাতে টুকটাক কিছু লেখালিখি করি এবং এই অধমের কিছু কিছু প্রকাশনাও আছে বিগত কয়েক বছরে নানা রকম বই এবং ম্যাগাজিনে, সেই সুবাদে সাহিত্যিক, প্রকাশক এবং সাহিত্যানুরাগী অনেকেই আছেন আমার বন্ধুর তালিকায়। এভাবেই সংখ্যাটা বেড়ে চলেছে।
২। স্বল্প পরিচিত/অপরিচিত/বন্ধুর আত্মীয় স্বজনকে অ্যাড কর কিনা?
উত্তরঃ এই উত্তরটা আমাকে কয়েক ভাবে দিতে হবে। স্বল্প পরিচিত হলে বা অপরিচিত হলে আমি আগে বোঝার চেষ্টা করি তার সাথে আমার যোগসূত্রটা কি। দেখি কোন কমন ফ্রেন্ড আছে কিনা। থাকলে তাকে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হয়ে নেই। এরপর যুক্ত করি বন্ধু তালিকায়। অন্যথায় না। যদি দেখি কোন কমন ফ্রেন্ড নেই, কোন যোগসূত্রও পাচ্ছি না, সন্দেহ জনক বা ফেক আইডি বলে মনে হয়, সেগুলো আমি কখনই যুক্ত করি না।
যদি কোন পরিচিত বন্ধুর আত্মীয় স্বজন বা তাদের বন্ধু সুহৃদ কেই অ্যাড করে, তাহলে কনফার্ম করার আগে, আমি কার আত্মীয় সেটা জেনে নেই। জিজ্ঞাসা করি অমুককে চিন কিনা। যাচাই হয়ে গেলে আমি মেসেঞ্জারে অ্যাড-দাতাকে আবার জিজ্ঞাসা করি, আমাকে কিভাবে চেনে, যোগসূত্র কি। উত্তরে সন্তুষ্ট হলেই কেবল মাত্র অ্যাড করি। আমি কখনই ‘ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস’ খাওয়ার দলের কেউ না। যার আত্মীয় আমাকে অ্যাড দিল, তার কাছ থেকে নিশ্চিত না হয়ে আমি কাউকে যুক্ত করি না। অর্থাৎ আমাকে নিশ্চিত ভাবে যোগসূত্র জানতেই হবে।
এখানে একটা উদাহরণ মনে হয় দিলে ভাল হবে। কিছুদিন আগে আমার কাছে দুইটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। তাদের কাউকে আমি সরাসরি চিনি না। ১ম জনের প্রোফাইলে গেলাম। অনেক স্ক্রল করে দেখলাম, একজন পরিচিত আছে। তার নাম মিহির। মিহির একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমার বেশ জুনিওর। আমি মিহিরকে ভাল করেই চিনি। যে আমাকে অ্যাড দিয়েছে সে মিহিরের আপন চাচাতো ভাই। যেহেতু মিহিরের সাথে আমার বেশ ভাল সম্পর্ক আছে, তাই আমি মিহিরের ভাইকে যুক্ত করার আগে জানতে চেয়েছি, মিহির কি হয়? কিসে পড়ে? কে বড় কে ছোট ইত্যাদি। জানতে পেরেছি, মিহিরেরই আপন চাচাতো ভাই আর মিহিরের চেয়ে চার বছরের ছোট সে। এঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। আমাকে সে মিহিরের বেশ কিছু পোষ্ট এ দেখে মনে হয়েছে আমাকে অ্যাড করা যেতে পারে, সেটা ভেবে সে আমাকে অ্যাড দিয়েছে। এই কথা বলার পরে, মিহিরের সেই ছোট ভাই যে কিনা আমার চেয়ে প্রায় ২০ বছরের ছোট, অ্যাড না করার কোন কারণ দেখিনি।
এবার আসি শোভনের ভাইয়ের প্রসঙ্গে। শোভন কেও আমি চিনি খুব ভাল করে, এবং শোভন ও একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। শোভনেরও এক চাচাতো ভাই, যে কিনা শোভনের প্রায় ১২ বছরের বড়ো (আমার ছোট তথাপি) আমাকে অ্যাড দিয়েছে বেশ কিছুদিন আগেই। সেও একজন এঞ্জিনিয়ার এবং চাকরী করছে। প্রথমে আমি বুঝতেই পারিনি কারণ তার সাথে আমার শোভন ছাড়া আর কোন কমন ফ্রেন্ড নেই যে। প্রথমে বুঝি নি দেখে অনেকদিন ঝোলানো ছিল। কিন্তু ফেসবুকে বার বার সামনে আসতে থেকে। কৌতুহলী হয়ে তার ফ্রেন্ডলিস্ট ঘেটে শোভনকে দেখতে পেলাম। আমি সরাসরি মেসেঞ্জারে শোভনকে জিজ্ঞাসা করলাম, একে চেন? বললো হ্যা আমার চাচাতো ভাই, আপন। আমি তাকে জানালাম আমাকে অ্যাড দিয়েছে। পরে অ্যাড করা ব্যাক্তিকে শোভন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তার ভাষ্যমতে সেও শোভনকে আমার সম্পর্কে জানতে চেয়েছে এবং শোভন আমার অনেক প্রসংসা করেছে। একইভাবে জানতে চাইলাম আমাকে কিভাবে খুঁজে পেল? জানালো শোভনের বিভিন্ন পোস্ট এ আমার কমেন্ট থেকে সে আমার সম্পর্কে উৎসাহী হয়েছে। যেই দুটা উদাহরণ দিলাম, পাঠক নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন, আমি কাদের কে অ্যাড করি? আমি করি আর সে করুক, আগে নিশ্চিত ভাবে জেনে বুঝে আমি অ্যাড করি। আর যে দুটা উদারহণ দিলাম তা বিগত কয়েকদিনের ঘটনা। দুই ক্ষেত্রেই আমি তাদের অ্যাড করিনি। উনারাই করেছিলেন।
৩। ফেসবুকের আচরণ আর ব্যক্তিজীবনের আচরণ একরকম কিনা?
উত্তরঃ জ্বী একদম এমনই। আমি ঘরেও হাসিঠাট্টা করতে পছন্দ করি এবং ফেসবুকের কমেন্টে আমাকে যেমন আপনারা অনেকটা বিন্দাস দেখেন, বাস্তবেও আমি এমনই। আমি আমার অফিসেও হাসি ঠাট্টা করি। আমার সব কলিগরা, বন্ধু বান্ধবরা আমাকে এভাবেই চেনে। আমি আমার বসের সাথেও হাসি ঠাট্টা করি। কলিগদের সামনেও সেভাবেই জোরে জোরে হাসি বা হালকা রসিকতা করি যেভাবে আমি আমার বন্ধু বান্ধবদের সামনে বা ঘরের মানুষদের সামনে হাসি বা কথা বলি।
আমার কোন বাড়তি খোলস নেই। আমি এমনই। আমি সুযোগ পেলে, ক্লাসের ভেতরও আমার ছাত্রদের সাথে হাসিঠাট্টা করি। আমি বিশ্বাস করি, যেখানে আনন্দ নেই, যেখানে প্রাণের উচ্ছ্বাস নেই, সেখানে প্রাণের বিকাশও নেই। আমার হাসিখুশি থাকাটাই আমার প্রাণ সঞ্জীবনী শক্তি বলতে পারেন। আমি বেশীক্ষণ মন খারাপ করে থাকতে পারি না।
৪। নিজে কি ধরনের ফেসবুক পোস্ট পছন্দ কর?
উত্তরঃ যেগুলোর সাথে বুদ্ধিমত্তা বা সাহিত্যের যোগ আছে সেগুলো বেশী। অবশ্য ফান পোস্ট কে তো বাদ দিতেই পারবো না। ধাঁধা, কবিতা, গল্প, ফান, বন্ধুদের মজার কমেন্ট, বাঁশমারা কমেন্ট, স্মৃতিচারণ, সবকিছুই আমার পছন্দ। বীভৎস, খুন যখম, এগুলো দেখতে ভাল লাগে না, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে দেখি বা দেখতে হয়, অনেকটা বাধ্য হয়ে।