১৮ মার্চ ২০২০

‘ধর্ম’ এর কাজ হল মানুষকে সুন্দর, স্বচ্ছ আর মহৎ একটা জীবনের সন্ধান দেয়া। যারা ‘ধার্মিক’ হবেন, তারাই হবেন অন্যান্য সকল সৃষ্টির পরম আশ্রয়। ধার্মিকরা হবেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার এক একজন বাস্তব প্রতিনিধি। এইটুকুই লিখবো ধর্ম সম্পর্কে। কারণ এখানেই আমি উল্লেখ করে ফেলেছি আমি আসলে যেটা বলতে চাই সেটা। ধর্মের ‘ধর্ম’ এখন আর আমাদের মধ্যে নেই। আমরা ধর্ম বলতে এখন বুঝি অন্যের উপরে প্রাধান্য বিস্তার আর আর গুটিকয়েক উপাসনার সমষ্টি। অথচ ধর্মটা ছিল একান্তই ‘আমার’ এবং একান্তই ‘আমার পালনীয়’ রীতি। এই ধর্ম হয়ে গেছে আমাদের কাছে একটা অস্ত্র। এক শ্রেণীর মানুষ এই ধর্মকে পুঁজি করে, হাতিয়ার বানিয়ে ধর্মান্ধ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। এর পেছনে তাদের কি কি স্বার্থ আছে, সেটা মনে হয় তারাই ভাল বলতে পারবেন। মানুষের ধর্মান্ধতা আর ধর্মীয় গোড়ামী মানুষকে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।

 

ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ‘আকিদা’ বা বিশ্বাস তথা ঈমান। সৃষ্টিকর্তা বা মহাশক্তিকে আরবী ভাষায় ‘আল্লাহ’ বলে। ইসলামের বিশ্বাস হল, আল্লাহ’ই হলেন একচ্ছত্র ‘সমস্ত’ ক্ষমতার অধিকারী এবং সকল কিছুর উৎস। সমস্ত কিছুই আল্লাহর সৃষ্টি এবং আল্লাহ হতেই আগত। সকল বিষয়ে সর্বাঙ্গীন পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হলেন আল্লাহ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞানী। কোথাও, কোন গুণের মধ্যে তার কোন অংশীদার নেই। অতি সংক্ষেপে কয়েকটা লাইন লিখলাম মাত্র। নতুবা সেই মহান সত্ত্বার গুনের বর্ণনা সামান্য লেখনী দিয়ে প্রকাশ অসম্ভব। কারণ আমিও তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক সৃষ্টিমাত্র। আমাদের জ্ঞানের পরিসীমায় সৃষ্টিকর্তার সম্যক উপলব্ধি আসা সম্ভব না।

 

‘ওয়াজ মাহফিল’ নামক যে ‘বিষয়’টি সম্পর্কে আমরা পরিচিত, সেটির উদ্দেশ্য হল, মানুষের মধ্যে ধর্মীয় অনুভুতিকে জাগ্রত করে তাদের নানা ধরণের সদুপদেশ দেয়া। কিন্তু এখন ওয়াজ মাহফিল গুলাতে কি হয়? সেটা আপনারা আমার চেয়ে ভাল জানেন। বেশী কিছু বলবো না, শুধু একটা মাত্র উদাহরণ দেই। একটা মাদ্রাসার ‘খতমে বুখারী’র মাহফিলে আমি নিজের কানে শুনেছিলাম জনৈক আলেম বলছেন, ‘কেমন আওয়াজে আল্লাহু আকবর বললেন? এই আওয়াজ তো আল্লাহর আরশে পৌছাবে না’। সেই আলেম কি তাহলে বিশ্বাস করেন না যে, আল্লাহ সর্বস্রোতা? মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলের নৈঃশব্দ্যও তিনি শোনেন জানেন? উনার এই কথা শুনে উপস্থিত সবাই গলার রগ ফুলিয়ে আবেগে চিৎকার করে করে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে আওয়াজ আরশে পাঠানর ব্যবস্থা করলো বার কয়েক।

 

সারা বিশ্বের মানুষ যেখানে এক মহামারী কে কেন্দ্র করে নিদারুণ এক সঙ্গীন পরিস্থিতিতে আছে, অনেকেই যেখানে জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে আছে, সেখানেও আমাদের এক শ্রেণীর মানুষ ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে মানুষের বিশ্বাস আর ধর্ম সংহারে লিপ্ত আছে। নিরীহ সাধারণ মানষের ধর্ম বিশ্বাসকে পুঁজি করে তারা এক ধরণের নোংরা খেলায় লিপ্ত আছে। কেউ এসেছেন ‘গো-মুত্র’ থিওরি নিয়ে আবার কেউ এসেছেন স্বপ্নে আদিষ্ট ‘থানকুনি’ পাতার থিওরি নিয়ে। আর আমরা? সমস্ত জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক আর ধর্ম একসাথে বিসর্জন দিয়ে ‘কান নেয়া’ চিলের পেছনে ‘বিবস্ত্র’(!) হয়ে ছুটে চলেছি। বিবস্ত্র কথাটা হয়ত কবিতায় নেই। আমি ইচ্ছা করেই উল্লেখ করলাম। একজন মানুষের বিবস্ত্র হতে যতখানিক বিবেকশূন্য হতে হয়, ধর্মের ব্যাপারে, আর ধর্মীয় গুরুদের আস্ফালনের ব্যাপারে আমরা তার চাইতে অনেক অনেক বেশী বিবেকশূন্য হয়ে গেছি অনেক আগেই।

 

একজন(!) আলেম(!) মহা সাড়ম্বরে ‘স্বপ্নে দেখা করোনা ভাইরাসের সাক্ষাতকারের কথা বয়ান করলেন। স্বপ্নটা তাও উনার দেখা না। অন্যের দেখা। সেটা উনি অনেক রসিয়ে রসিয়ে বয়ান করলেন। একজন ভাইরাসের সাক্ষাতকার নিলো, আর ভাইরাস তাকে কারণ সহ প্রতিষেধক ও বলে দিল। আর প্রতিষেধকটা একটা গাণিতিক সমীকরনের মাধ্যমে বলা হল 1.q7+6=13 । উনি এটাও বললেন, আমি যেহেতু এসব নিয়ে গবেষণা(!) করি, তাই সেই স্বপ্নদ্রষ্টা তাকে এসব জানিয়েছেন যেন উনি প্রচার করে দিতে পারেন। অনেক মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মত তার সেই ওয়াজ শুনলো এবং তাকে বাহবা দিতে লাগলো। উনি এটাও বললেন, আমি এটার মানে জানি কিন্তু সেটা এখন আমি বলবো না। কি মহৎ মনের অধিরকারী! আপাত ভাবে না হয় ধরেই নিলাম, উনি ভাইরাস থেকে নিষ্কৃতির ভ্যাক্সিন জানেন! তাহলে উনি কেমন ধর্মগুরু হলেন যে, মানুষের কল্যানে সেটা বলছেন না? সংকীর্ণ মানসিকতা? পুঁজিবাদী মানসিকতা? নাকি মানুষের ধর্মকে পুঁজি করে নিজের আখের গোছানো?

View shawon1982's Full Portfolio