আজ আমার অত্যন্ত প্রিয় ধ্রুবক ‘পাই’ ( π ) দিবস। আজকের তারিখ অর্থাৎ ১৪ই মার্চ কে আমেরিকান কায়দায় লিখলে লিখতে হয় ৩.১৪ এভাবে অর্থাৎ আগে মাস সূচক এরপর তারিখ। আর π এর যে মানটুকু আমরা লিখি তার শুরুই হয় অনেকটা এভাবে ৩.১৪১৫৯২৬৫৪ যা আমাদের সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটরে দেখায়। এইটুকু কিভাবে সহজে মনে রাখা যায় সেজন্য কলেজে থাকতে আমার বন্ধু রাকিব আমাকে শিখিয়েছিল একটা সহজ ইংরেজী বাক্য। সেটা হল ‘May I have a large container of coffee’? প্রতি শব্দের অক্ষর গুনলেই আর প্রথমে ৩ এর পরে একটা দশমিক দিয়ে দিলেই π পাই এর মান পাওয়া যাবে। কিন্তু এতে লাস্ট এর ৫৪ বাদ যায় দেখে আমি লাস্ট এ আমার প্রিয় শিল্পী Elton John এর নাম জুড়ে দিলাম। এখন আমার বাক্যটা হল May I have a large container of coffee Elton John? এত বড় একজন গুনী শিল্পীর কাছে একটা কফির কন্টেইনার চাচ্ছি! মন্দ না!
বিজ্ঞানের জগতে π এর ব্যাবহারের কোন শেষ নেই। ছোটবেলায় জ্যামিতি পড়তে গিয়ে প্রথম এর সম্পর্কে ধারণা পেলাম। বৃত্তের পরিধি আর ব্যাসের অনুপাত সর্বদা যে ধ্রুবক হয় সেটাই হল π। তখন আমাদের আপাত হিসাবে সেখানো হত এই অনুপাত হল ২২:৭। এটি π এর মানের খুব কাছাকাছি হলেও এটা সত্য নয়। কারণ ২২:৭ হল একটা মূলদ সংখ্যা আর পক্ষান্তরে π হল একটা অমুলদ সংখ্যা যেটা কখনও অনুপাতে প্রকাশ করা যায় না। আর এর মধ্যে পৌনঃপুনিক হবার মত কোন ব্যাপার নেই। একেকবার একেক রকম মান আসতে থাকে। কম্পিউটারের সফটওয়ার ব্যবহার করে এই ধ্রুবকের মান দশ লাখ বা হয়ত আরো বেশী পর্যন্ত বের করা আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোন কূল কিনারা পাওয়া যায়নি বা এর কোন পৌনঃপুনিকতাও পাওয়া যায়নি। জ্যামিতি, ক্যালকুলাস, ধারা, ত্রিকোণমিতি সহ গণিতের এমন কোন শাখা নেই যেখানে এই ধ্রুবক π এর ব্যাবহার নেই। এটি আমাকে বরাবরই বিস্মিত করে।
আজকে π কে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলাম এর মানে এই নয় যে আমি এখানে গণিতের বিশদ আলোচনা ফেঁদে বসবো। কতটুকুই আর জানি এই শাস্ত্রের! কিছুই না! একদমই কিচ্ছু না! দূর থেকেই শুধু ভালবেসে যাই। এই শাস্ত্রের একজন গুনমুগ্ধ ভক্ত আমি। এই ধ্রুবক আমাকে জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভাবতে শিখিয়েছে। সেটি হল ‘অসীমের অবস্থান সসীমের মধ্যেই’। লিখতে গেলে একটা গ্রীক অক্ষর π দিয়েই আমরা কাজ সেরে ফেলি, কিন্তু এর ভেতরে অসীম একটা ধারা লুকায়িত আছে। সৃষ্টীর সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষও যার কোন কূল কিনারা করতে পারেনি। আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার বিশালতা নিয়ে চিন্তা করলেও কোন কূল কিনারা পাই না, সেটা সম্ভবও নয়। কিন্তু সেই অসীম সত্ত্বার অবস্থান কিন্তু এই সসীম নশ্বর দেহের ভেতরে যে মন, সেখানেই। অসীমকে খুঁজতে হলে আমাদের কে সসীমের কাছেই ধরা দিতে হয়।
আরেকটু কথা তো শেষে উল্লেখ না করলেই হয়। π এর এই মানের সংখ্যা নিয়ে আমি একবার একটা কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম। এক এক ডিজিট এর সাংখ্যিক মান সংখ্যক শব্দ থাকবে এক এক লাইনে। যেখানে শূন্য আসবে সেই লাইনে কিছু না লিখে একটা ‘হাইফেন’ – চিহ্ন বসিয়ে দিতে হবে। এভাবে চলতে থাকবে ভাবের প্রকাশ। কবি এখানে চাইলে যতদূর খুশি যেতে পারে। π এর মানের যেমন কোন শেষ নেই তেমনি এই কবিতা আর গণিতের ধারাবাহিকতা ব্যবহার করে এই সাহিত্যেরও কোন শেষ নেই।