কেমন যেন একটা খাপছাড়া নির্ঘুম রাত কাটিয়ে অফিসে আসলাম আজকে। রাতে অনেক চেষ্টা করেও ভালও ঘুমাতে পারিনি। মোটামুটি দিন তিনেকের ছুটি কাটিয়ে আজ অফিসে আসলাম তাও একটা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে। গত রাতে চেষ্টা করেও কোন বই পড়তে পারিনি। মাঝে মাঝে যে অডিওতে উপন্যাস পাঠ শুনি, সেটাও করিনি। ‘সাহেব বাংলো’ নামে একটা রহস্য নাটক শুনলাম বেশ কষ্ট করে। ভেবেছিলাম শুনতে শুনতে যদি ভালও ঘুম হয়! তা হল কই? নাটক শেষ হল, আমি উঠলাম এক রাজ্য মশার ভেতরে! প্রচন্ড রক্তপিপাসু মশাগুলো আমার উপরে ঝাপিয়ে পড়লো! আমি কোনরকমে প্রাকৃতিক কাজ শেষ করে আবার দৌড়ে চলে এলাম মশারির ভেতরে। ভাবলাম এবার যদি ঘুম আসে! কিছুক্ষণ পর দেখি আমার পিঠে আর পায়ে কেমন যেন চুলকানি অনুভুতি হচ্ছে! আর কি বুঝতে বাকি থাকে? মশারির ভেতররেও মশা চলে এসেছে!
শেষ হয়ে গেল আমার ঘুমের শেষ আশাটুকুও। উঠে বসলাম। কিন্তু বিধিবাম! আমি চাইলেই মশা কি আমাকে ধরা দেবে? অনেক্ষণ এপাশ ওপাশ করে বাধ্য হয়ে আবার শুলাম। একবার মশাটাকে দেখলাম। যেই মারতে গেলাম অদৃশ্য হয়ে গেল। এবার অন্য পন্থায় গেলাম। ঝিম পেরে পড়ে থাকবো। যদি পায়ে লাগে তাহলে আস্তে করে ফেরে ফেলবো! এবার সফল হলাম! মশাটা আমার পা কামড়ে দিয়ে দেয়াল বরাবর বসেছিল। এক থাবা দিয়ে মশারি আর দেয়াল বরাবর ওর ভবলীলা সাঙ্গ করে দিলাম। এবার আবার শুয়ে পড়লাম। আমি যখন একা ঘুমাই, তখন আমার ঘরে সম্পূর্ণ আলো জ্বালানো থাকে। আমি একা ঘুমালে কখনই অন্ধকারে ঘুমাই না। অন্ধকারে আমার ঘুম আসে না। মোবাইল ফোনে, ঝড়বৃষ্টির শব্দ দিয়ে দিলাম। মোবাইল থেকে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ আসছে আর সেই সাথে বৃষ্টির শব্দ। কৃত্রিম হলেও শুনতে ভালও লাগে।
একটু মনে হয় চোখ লেগে এসেছিল। ফজরের আযান হয়ে গেল। আর তো শুয়ে থাকা চলে না। তবুও আরো কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে আমি উঠে পড়লাম। নামাজ পড়ে পোষাক করে নিলাম অফিসের উদ্দেশ্যে। আজকে রাস্তায় তেমন জ্যামও ছিল না। সময়ের অনেক আগেই চলে আসলাম অফিসে। কিছুক্ষণ পরে অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট সাজ্জাদ ভাই এসে দরজা খুলে দিল। উনি আসার আগে, বাসা থেকে নিয়ে আসা ডায়রীতে একটা কবিতা লিখে ফেললাম। কবিতার শেষ লাইনটা লিখে ডায়রীটা বন্ধ করবো, তখন সাজ্জাদ ভাই যা শোনালেন এই সকাল বেলা সেটা শোনার জন্য আমি মানসিক ভাবে মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। গতকাল উনার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী (কোন এক মেডিক্যাল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্রী) আত্মহত্যা করে মারা গেছে। একটা মেয়ে আছে যার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। উনার মেডিক্যালের ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট বের হতে আর মাত্র দিন দশেকের মত বাকী আছে। এমতাবস্থায় সে নিজের প্রাণ সংহার করে নিল। অনেক অর্থবিত্তে লালিত হয়েও নিজেকে শেষ করে দিয়ে পিছপা হয়নি। শুনেই মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।
মানুষের জীবন কি এতটাই ফেলনা? মন চাইলো শেষ করে দিলাম? আত্মহত্যা করাটা কি এতই সহজ? নাকি আমরা আমাদের জীবনকে খুব তুচ্ছ মনে করছি? একটা অস্বাভাবিক মৃত্যু মানে কি শুধুই একটা প্রাণ শেষ হয়ে যাওয়া? কেমন মা ছিল সে? নিজের বাচ্চাটার কথা ভাবতে পারলো না? একটা অস্বাভাবিক মৃত্যু যখন হয়, তখন একটা মানুষই কি শুধু মরে নাকি তার সাথে জড়িয়ে থাকা অনেকগুলো সম্পর্কের মৃত্যু হয়? মৃত্যু তো আমার কাছে কখনই সহজ মনে হয় না। অনেক জল্পনা কল্পনা করেও যার কূল কিনারা করা যায় না। সেই মৃত্যুকে মানুষ এত সহজে কিভাবে নিয়ে নেয়? মৃত্যু স্বাভাবিক কিন্তু অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কখনোই প্রশ্রয় দেয়া যায় না। আজকের দিনের শুরুই হল দুঃসংবাদ দিয়ে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, মানুষের সুমতি হোক। মানুষ জীবনকে ভালবাসতে শিখুক। একদিক দিয়ে দরজা বন্ধ হয়ে গেলে আরো দশটা দরজা খোলা যেতে পারে। জীবন ভালবাসার জন্য। আমরা যেন জীবনকে, আমাদের জীবনের সাথে জড়িত সম্পির্কগুলোকে ভালবাসতে শিখি।