২১ জানুয়ারী ২০২০

পারফিউম (Perfume) এর প্রতি আমার ভাললাগা ছোটবেলা থেকেই। তখন এটাকে ‘সেন্ট’ বলতাম। এখনও বলি। এতে ব্যকরণগত কোন ভুল হয় কিনা সেটা গ্রাহ্য করি না। আমার কাছে এখনও সেটা ‘সেন্ট’ই। ছোটবেলা তো আর বুঝতাম না যে পারফিউমেরও লিঙ্গান্তর হয়। এরও ‘লিঙ্গ’ভেদের ব্যপার আছে। তখন যা পেতাম তাই চেপেচুপে স্প্রে করে গায়ে লাগাতাম। সৌদি আরবে যখন থাকতাম সেই ১৯৮৮-১৯৮৯ সালে তখন বড় খালার বাসায় গেলে উনার ড্রেসিং টেবিলে সাজানো নানা রকম পারফিউম গায়ে লাগাতাম। আমাদের বাসাতেও ছিল। একদিন উনার বাসায় অথবা আমাদের বাসার অন্য কোন রুমে যারা থাকতো, তাদের কারো রুমে আমি একটা পারফিউম দেখলাম। এটা এখনও খুব কমন এবং বেশ চেনা পরিচিত। Jeanne Arthes এর Cobra পারফিউম। গোলগাল বেগুনী রঙের একটা বোতল! কিন্তু সেটা আমার কাছে আকর্ষণের কোন ব্যাপার না। আমার নজর কাড়লো কাল রঙের ‘সাপ’ টা! কি সুন্দর বোতলের গা পেঁচায়ে আছে। আপনারা নিশ্চই জানেন, কোবরা পারফিউমের সাথে একটা মেটালিক ‘স্নেক ব্রেসলেট’ দেয়া হয় গিফট আকারে। তখন তো আর বুঝতাম না এটা ব্রেসলেট! আমার কাছে এটা খেলনা। যাই হোক, আমার জিদের কাছে নতি স্বীকার করে, সাপটা আমাকে খুলে দেয়া হল। আমার সারা দিন রাত কাটতে লাগলো একটা কালো রঙের সাপের সাথে! চোখে দুইটা লাল রঙের ক্রিস্টাল বসানো। বেশ আকর্ষণীয়।

 

ছোটবেলার কিছু জিনিস মনে হয় মনের অগোচরে থেকে যায় মনের কোথাও লুকানো। ১৯৮৮ থেকে ২০১১ অনেক লম্বা একটা সময়। তখন পড়তাম ক্লাস ওয়ানে (তাও বাসাতে বই দিয়ে পড়ানো হত) আর ২০১১ তে PhD এর চতুর্থ বছর! প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার শুরু আর শেষ বলা যেতে পারে। আব্বু গেছিলেন সেপ্টেম্বর মাসে বেড়াতে এবং আমাকে দেখে আসতেও। আব্বু দেশে আসার আগে উনাকে নিয়ে শপিং করবো কিছু। আর সিঙ্গাপুরে শপিং মানেই প্রথম চোটেই যেটা মাথায় আসবে সেটা হল Mostafa Center । কি নাই সেখানে? আমি আমার ৫ বছরের প্রবাস জীবনে কতবার সেখানে গিয়েছি গুনে শেষ করা যাবে না। আব্বুকে নিয়ে এটা ওটা কিনছি, কিনতে কিনতে চলে গেলাম পারফিউম সেকশনে। চোখ গেল কোবরা সেন্ট এর দিকে। এক ধাক্কায় ২০১১ থেকে চলে গেলাম ১৯৮৮ সালে আমার সেই হারানো শৈশবে। প্যাকেটটা হাতে নিয়ে উথাল পাথাল কত কিছু ভেবে ফেললাম। ততদিনে এটাও বুঝে গেছি, কোবরাটা হল ‘লেডিস’ সেন্ট! কি আর করা! কোবরার দামও বেশ সস্তা। মনে হয় ১১ ডলারের মত কিছু ছিল। প্যাকেটটা ফয়েল দিয়ে মোড়ানো ছিল। খুলে দেখতেও পারছি না যে এর ভেতরে সাপটা আছে কিনা! সাপ না থাকলে এই ‘লেডিস’ সেন্ট দিয়ে আমি কি করবো?

 

প্যাকেটটা হাতে নিয়ে চলে গেলাম পাশে দাঁড়ানো সেলস ম্যানের কাছে। গিয়ে বললাম, ভাই এটার মধ্যে সাপটা আছে তো? উনি বললেন, স্যার! থাকার তো কথা। তবে আমি নিশ্চিত নই। কোম্পানী যদি দিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আছে। আমি বললাম, সাপ না থাকলে তো হবে না। লোকটা সাপের জন্য আমার আকুতি দেখে হেসে ফেললো! প্যাকেটটা নিয়ে কাউন্টারে একজনকে জিজ্ঞাসা করে আসলো। পরে আমাকে বললো, আছে স্যার। ভেরতেই আছে। আহ! শুনে সে কি শান্তি আমার! আমার শৈশবের সেই চোখে পাথর দেয়া কোবরা সাপ! আমি ঝুড়ির মধ্যে উৎসাহের বাড়াবাড়িতে দুইটা কোবরা নিয়ে ফেললাম। আব্বু বললো, দুইটা দিয়ে কি করবা? আমি বললাম, একটা আমার আরেকটা নাইমা (আমার স্ত্রী) কে দিও। বাসায় এসেই প্রথমে কোবরার প্যাকেট খুললাম। দেখলাম সাপ আছে! আমার চোখ জুড়ায়ে গেল সাপ দেখে! কিন্তু এই সাপের চোখ সবুজ রঙের। তো কি হইসে! কোবরার সেই সাপ তো! উলটে পালটে কতভাবে দেখলাম। মনে হল আমার শৈশব ফেরত পেয়েছি! সেই সেন্ট কিছুদিন আগে আমার মেয়ে মেখে শেষ করে ফেলেছে যেটা ওর জন্মের ৩ বছর আগে কেনা ছিল। সাপটাকে আমি সযত্নে সরিয়ে রেখেছি অনেক আগেই। বহাল তবিয়তে আছে। আমার অফিসের ডেস্কে বসে ভাষাহীন সবুজ পাথর চোখে চেয়ে থাকে আমার দিকে!  

View shawon1982's Full Portfolio