অসুখ বিসুখের কাছে আমি হার মানতে রাজী নই। ভবিষ্যতে আমার ভাগ্যে কি আছে সেটা আমি জানি না, কিন্তু যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন আমি খুব ভালভাবে বেঁচে থাকতে চাই। কোন মলিনতা আমাকে খুব সহজে স্পর্শ করতে পারে না। মানুষের জীবনে যেমন এক এর পর এক সুখ দুঃখ পালাক্রমে আসে, আমার জীবনও সেটার ব্যতিক্রম নয়। নানা ধরণের উত্থান পতন নিয়েই আমার জীবন চলছে। তবে জীবনের কোন পর্যায়েই আমি অসুখের সাথে আপোষ করতে রাজি নই। আমি সহজে ওষুধ খেতে চাই না। খাইও না। নিতান্তই দেয়ালে পিঠ ঠেকে না গেলে আমি ওষুধের ধার ধারি না। অনেককেই দেখেছি, সাধারণ জ্বর ঠান্ডাতেই কাতর হয়ে পড়ে। আমি এত সহজে হার মানি না। সহ্য করে যাই। জ্বর সহ্য করা ওষুধ খাওয়ার চেয়ে অনেক বেশী আরামদায়ক আমার কাছে।
জীবনে আরো কিছু কঠোর পণ করে বসে আছি আমি। ঐকান্তিক ভাবে স্রষ্টার কাছে সনির্বন্ধ প্রার্থনা করে চলি নিরন্তন, প্রভু! আমাকে ততদিনই বাঁচিয়ে রেখো, যতদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি আর নিজের সৎ উপার্জনের গ্রাস মুখে তুলতে পারি! এর বেশী একটা মূহুর্তও বেঁচে থাকার ইচ্ছা আমার নেই। অপরের গলগ্রহ হয়ে থাকার চেয়ে বড় অপমান আমি আমার জন্য আর কিছুই মনে করি না। জীবনে যত সম্পর্ক আছে, তাঁর মধ্যে আমি আজ পর্যন্ত এমন কিছু দেখিনি যেটাতে কোন না কোনভাবে স্বার্থ জড়িত নেই। যতক্ষণ আমি কারো দ্বারস্থ না হব, ততদিন আমি সবার চোখেই ভাল থাকবো। আর যখনই কারো দ্বারস্থ হব, তখনই গাঢ় সম্পর্ক গুলো ফিকে হয়ে আসতে থাকে। আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি এক সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কারো কাছে কিছুই চাই না। কারো কাছে আমার পার্থিব কিছু চাওয়ার নেই। আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ, আমার চাহিদা অতি সীমিত। আমি শুধু চাই, গাঢ় সম্পর্কগুলো গাঢ়ই থাক।
গিরগিটি রঙ বদলায়। সচক্ষে দেখিনি কিন্তু ভিডিও দেখেছি। দেখে অনেক অবাক হয়েছি। কি অদ্ভুত! কিন্তু তার চেয়েও বেশী অদ্ভুত লাগে যখন দেখি সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ, একটা সরীসৃপ গিরগিটি থেকেও অনেক দ্রুত রঙ বদলায়! গিরগিটির রঙ বাইরে থেকে দেখা যায়, আর মানুষের রঙ পরিবর্তনের উত্তাপ শুধু মনের ভেতরেই পাওয়া যায়। মনটাকে পুড়িয়ে একেবারে নিঃশেষ করে দেয়। পুড়ে শেষ হয়ে একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এজন্যই আমি চাই, আমি যেন কারো স্বার্থের পথে বাঁধা না হই। আমার জীবনের চৌহদ্দিতে আমি অনেক আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আমার সন্তানরা বড় হচ্ছে। প্রার্থনা করি ওরা ভাল থাক, ওরা জীবনে অনেক বড় মাপের মানুষ হোক। আমাকে কোন কিছুই দিতে হবে না বাবারা। আমি কিছুই চাই না তোমাদের কাছ থেকে। শুধু তোমরা মানুষের মত মানুষ হয়ো। পৃথিবীর জন্য আমার সন্তানরা যেন কল্যাণময় হয়। বাবা হিসাবে জীবনের শেষ পর্যন্ত ওদের জন্য যা করণীয় সেটা করে যাব। কোন বিনিময় চাই না। আমার সন্তানদের কাছ থেকে, আমার নিজের জন্য পার্থিব কোন কিছুর চাওয়া পাওয়া নেই। এক গ্রাস খাবার বা একটি পয়সাও নয়।