টেলিভিসনের প্রোগ্রাম নিয়ে গতকাল লিখেছিলাম। লিখতে তো ইচ্ছে করে কতকিছুই। সব তো মনে থাকেও না এক এক সময়। তবে আরো কিছু প্রোগ্রামের কথা লিখতে ভুলে গেছি গতকাল। সেগুলো মনে হয় না লিখলেই হয়। একটা হল Alif Laila। এটার সে কি জিঙ্গেল!
“দেখ সব নতুন কাহিনী...
মন ভরে দেয় তার বাণী...
পরীদের ধরে এনেছে...
জ্বীনকেও বেধে রেখেছে...”
গান শুনেই কালঘাম ছুটে যাবার যোগাড়। যতসব আজগুবী ভূত-প্রেত জ্বীন-পরীর কাহিনী আর সেগুলোর সে কি অদ্ভূত উদ্ভট চিত্রায়ন! কি তাদের সাজসজ্জা! তবে ওইসময়ে সেগুলো পড়া ফাঁকি দেবার জন্য হলেও এমন মনযোগ দিয়ে দেখতাম যেন সেগুলো না দেখলে আমার পরীক্ষায় পাস করা হয়ে উঠবে না। বড়রাও দেখতাম দেখতো। তখনও বাংলাদেশে ভারতীয় সিরিয়ালের আগ্রাসী ভূমিকা শুরু হয়নি তেমন একটা। আলিফ-লায়লা বা আরব্য-রজনীর কাহিনীতে যে সব জ্বীন-ভূতের চিত্রায়ন করা হত সেগুলো এক কথায় অনবদ্য। আর ওগুলোর যেসব নাম(!) রাখা হত, সেগুলো এখনও প্রবাদ প্রবচনের মত মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। তবে অবশ্যই এই যুগের ছেলে মেয়ের মুখে নয়। সেই নব্বইয়ের দশকে যাদের শৈশব কৈশোর কেটেছে তারাই বলতে পারবে। একটা জ্বীনের নাম ছিল “জিঙ্গালু জুংলা” আর তার রাক্ষসী এক বোনের নাম ছিল “শারারা গুল”। শারারা গুলের বয়স ছিল ৫০০ বছর। যখন তাকে পর্দার সামনে হাজির করা হল তখন যেই একটা হাসি দিয়েছিল সেটা আমার মনে এখনও শূলের মত বিঁধে আছে! জিঙ্গালু জিংলা’র ভ্রু’র কথা মনে আছে আপনাদের? অভিনেতার আসল ভ্রু চেঁছে ফেলে দিয়ে সেখানে সারা মুখে গাঢ় সবুজ রঙ আর ভ্রু’র ওখানে মনে হয় যেন আলকাতরা দেয়া! সারা ঠোঁট টকটলা লাল! জ্বীনগুলার মরে যাওয়ার দৃশ্য যে কি করুণ যে দেখলে হাসতে হাসতে মরে যেতাম প্রায়! আমি ত উদ্ভট সাজের কোন মেয়েকে দেখলেই বলি, ঐ যে শারারা গুল!
বিটিভিতে যাত্রা দেখেছেন আপনারা? যখন ডিস-অ্যান্টেনা আসেনি তখন যাত্রা দেখাতো মাঝে মাঝে। স্টেজে বিচিত্র পোষাক করে রাজা-সেনাপতি উজির কি আবেগঘন ডায়লগ দিচ্ছে চিৎকার করে করে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’, ‘চাঁদ সুলতানা’ নামে দুইটা যাত্রার কথা মনে পড়ে। যাত্রার কথা মনে হলেই আমার মনে হয়, চক্রাবক্রা ড্রেস পরে এক লোক গলায় পুতির মালা পরে হাতে তলোয়ার নিয়ে চিৎকার করে ডাকছে, ‘সেনাপতি! সেনাপতি!’। সেদিন ক্লাস নিতে নিতে কোন এক প্রসঙ্গে ছেলেপুলেদের বলেছিলাম, তোমরা কি জান ‘যাত্রা’ কি জিনিস? ওরা এমনভাবে বিস্মিত ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল যে আমার মনে হচ্ছি আমি নিজেই ওদের সামনে যাত্রা করছি! স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার আগে যখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায়, আর অন্য সবাইকে সুখী মনে হয়, সেই সময় এই বিটিভির যাত্রাগুলো দেখে সময় পার করার মধ্যেও যে কি মজা ছিল তা শুধু ঐ সময়ের স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েরাই বলতে পারবে।
নব্বইয়ের দশকে যখন এইট কি নাইনে পড়ি, তখন বিটিভিতে দেখানো হত The X-files । তুমুল জনপ্রিয় এক ইংরেজী ধারাবাহিক। ঐযে বলেছিলাম, ইংরাজী সিরিয়াল দেখে ধৈর্য্য ধরে সেটা বোঝার মত বুদ্ধি আর মানসিকতা কোনটাই ছিল না। কিন্তু আমাকে the x-files দেখতেই হবে। নাহলে আমার যে স্ট্যাটাস থাকবে না। তবে কথা শুনে বোঝার চেষ্টা তেমন একটা করতাম না কিন্তু দেখতে ভালই লাগতো। সব অমীমাংসিত রহস্য ছিল তো। এখনও YouTube ঘেটে ঘেটে দেখি মাঝে মাঝে। তবে এখন দেখা আর তখন দেখার মধ্যে কত পার্থক্য হয়ে গেছে। শৈশবে The x-files ছিল আমাদের কাছে এক বিরাট আকর্ষণ। ঐ সিরিয়াল দেখেই আমরা কয়েক বন্ধু রীতিমত Gillian Anderson (Dana Scully নামের চরিত্রে অভিনয় করা কুশলী) বা The x-files এর নায়িকার প্রেমে পড়ে গেছিলাম। যেদিন x-files দেখাতো, তার পরদিন স্কুলে আমাদের কয়েকজনের আলোচনার প্রধান বিষয় থাকতো ওটায় কি দেখলাম না দেখলাম। সবচেয়ে বেশী যে জিনিসটা মনকে এখনও আলোড়িত করে রাখে তা হল The X-files এর Theme Music টা। অন্যদের কাছে কেমন লাগে জানি না, তবে আমার ব্যক্তিজীবনে শোনা অন্যতম শ্রেষ্ঠ music এটা। এখনও নিয়মিত শুনি। মিউজিকটার মধ্যেই গেমন যেন একটা গা ছমছমে ভাব আছে। সেই ১৯৯৭ সালেই ক্যাসেট কিনেছিলাম। শুনতাম The x-files এর অনবদ্য সেই মিউজিক। আজও শুনি। ভাল লাগাটা এখনও তেমনই আছে।