১২ নভেম্বর ২০১৯

ইদানিং কয়েক মাস ধরে কিটো ডায়েট প্লান ফলো করছি। উদ্দেশ্য একটাই, শরীরের বাড়তি ওজন (ভর) কমিয়ে ফেলা। বহুবার বহুরকমের পদক্ষেপ নিয়েও আমি তেমন কোন উপকার পাইনি। সাময়িক কমলেও পরে আবার বেড়ে গেছে ওজন। এই ডায়েট প্ল্যানে কার্বোহাইড্রেট খাওয়া প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে ফেলতে হয়। ভালই ফল পাচ্ছি। এই ডায়েট প্ল্যানের বড় সুবিধা হল আমি মাছ মাংস ডিম প্রায় অনেকটাই খেতে পারছি। কারণ প্রোটিন আর ফ্যাট খেতে মানা নেই যেহেতু শর্করা খাচ্ছি না। কিছুদিন আগে লিপিড প্রোফাইল, সুগার চেক করলাম সব কিছুই ঠিক আছে। কিন্তু HDL Cholesterol  টা দেখলাম পরিমানের চেয়ে কমে গেছে কিছুটা। কাজেই এটা বাড়াতে হবে। পরামর্শ পেলাম ডিম খেতে। দৈনিক অন্ততঃ দুই থেকে তিনটা ডিম কুসুম সহ খেয়ে ফেলতে হবে। বাহ! আমাকে আর পায় কে! একে ডিম, তার উপর আবার কুসুম! আমার যে খুব প্রিয়! একেবারে মাংসের কাছাকাছি প্রিয়। আমি এই সুবিধা পুরোপুরি নিচ্ছি। এই সুযোগে বাসায় হাঁসের ডিম কেনা শুরু করেছি। প্রায় প্রত্যেকদিন হাঁসের ডিম খাচ্ছি। হাঁসের ডিম খাওয়ার বিশেষ কারণ হল, এর মধ্যে বেশীরভাগই কুসুম যে! ছোটবেলা থেকেই ডিমের কুসুমের প্রতি আমার বাড়তি আগ্রহ। এখনও সেটা আছে।

 

শৈশবে যখন সিদ্ধ ডিম খেতাম, আগে আস্তে আস্তে করে সাদা অংশ খেতাম কুসুমটা বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে। এরপরে কুসুম একদম আলাদা করে। কারণ এর স্বাদ আমার আলাদা করে নেয়া চাই। এখনো মাঝে মাঝে করি। এতে অবশ্য কে দেখে কি মনে করলো, সেটা আমি ভাবি না। ফেরী পার হতে গিয়ে আমি খুব মজার একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি। ফেরীতে উঠলেই, অথবা লঞ্চে, অনেক ছেলেপুলে বা লোক সিদ্ধ ডিম বিক্রি করে। “ঐ ডিম, ঐ ডিম!” বলে ডাকাডাকি করতে থাকে। অনেকেই সিদ্ধ ডিম কেনে খায়, দরদাম করে। আমিও খেয়েছি বার কয়েক। কিন্তু নৌপথে যাত্রা করলেই সিদ্ধ ডিম কেন খেতে হবে অথবা সিদ্ধ ডিম কেন সেখানে বেশী বেশী বিক্রি হবে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও আমার কাছে একটা রহস্য হয়ে আছে। আমার এক আত্মীয়ের কথা জানি, ফেরীতে উঠলে সে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার জন্য রীতিমতো হা হুতাস করতে থাকে! ডিম তাকে খেতেই হবে।

 

ডিম নিয়ে আমার বেশ কিছু মজার স্মৃতি আছে। দুই একটা মনে হয় না বললেই নয়। তখন সৌদি আরবে থাকতাম। আমার বয়স পাঁচ কি ছয়। কার্টুন দেখতাম প্রচুর। আমাদের মত বয়সীদের বিনোদন মানেই তখন ছিল কার্টুন আর টিভি গেমস। কারণ আরব ছেলেপুলেদের সাথে মিশতাম না। কাজেই ঘর কেন্দ্রিক থাকতে হত। কার্টুনে দেখলাম মুরগি ডিমে তা দিচ্ছে, এরপর বাচ্চা বের হয়ে আসতেসে। ব্যাস! আমাকে আর পায় কে? গিয়েই ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে সুন্দর করে কাপড় পরায়ে, কম্বল এর নিচে রেখে আমি তার উপর আলতো করে উপুড় হয়ে বসে রইলাম। তা দেয়া শুরু করলাম। একটু পর পর কম্বল থেকে বের করে দেখি যে বাচ্চা বের হল কিনা! দিন দুয়েক চললো আমার এই তামাশা! বড়রা আমাকে প্রথমে বুঝাতে চাইলো, মুরগী ছাড়া বাচ্চা বের হওয়া সম্ভব না। কে শোনে কার কথা! আমি ডিমে-তা দেয়া কর্মকান্ড অব্যহত রাখলাম। তবে আমার নিষ্ঠা আর অধ্যবসায় দুটোরই বড় অভাব। কোন কাজই একটানা বেশীদিন করে যেতে পারি না। দুইদিন পরে আমারে ডিমে-তা কার্যক্রমে উৎসাহ কমে গেল। কিন্তু ডিম-প্রীতি কমেনি।

 

আবার ঘুরে ফিসে সেই নব্বইয়ের দশকে ফেরত যাই। স্কুলে পড়ি তখন। ক্লাস সেভেন হবে হয়ত। একদিন সকাল বেলা রুটি আলুভাজি আর সাথে একটা ডিম-পোজ নিয়ে নাস্তা খেতে বসলাম। আমার বলা ছিল, পোজ এর কুসুমটা ভাংতে পারবে না আর একটু শক্ত হতে হবে। মানে একটু কড়া ভাজা দিতে হবে। নাস্তা এল, আমি আয়েশ করে খেতে শুরু করলাম। আলু ভাজির সাথে ডিমের সাদা অংশ একটু একটু করে পাশ দিয়ে খেয়ে যাচ্ছি। সাদা অংশটা এমনভাবে সাবধানে শেষ করলাম যে শুধু কুসুমটা রইলো আমার প্লেটে। আমি বিশাল একটা আত্মতৃপ্তি নিয়ে কুসুমটার ডিকে তাকিয়ে আছি। এমনসময় আমার ছোটবোন কোত্থেকে যেন এসে চিলের মত ছোঁ মেরে আমার প্লেট থেকে খপ করে কুসুমটা নিয়ে পুরোটা একসাথে গালের মধ্যে চালান করে দিয়েই দৌড়ে পালালো! আমি আ--- করে আর্তনাদের মত একটা চিৎকার দিলাম। কিন্তু যা হবার তা হয়েই গেল। আমার এত কষ্ট করে বাঁচানো কুসুমটা গেল। গেল তো গেলই। এরপরে কত কত বছর পার হয়ে গেল। কত হাজার হাজার ডিমের কুসুম সাবাড় করে দিলাম। কিটো ডায়েট প্ল্যানের ছুতা দিয়ে একসাথে তিন চারটা ডিম খেয়ে ফেলি। এখন আমার কুসুমে কেউ ভাগ বসাতে আসে না। কিন্তু ঐদিনের ঐ কুসুমের শোক‍! আহারে! আমি যে আজও ভুলতে পারি না।  

View shawon1982's Full Portfolio