১০ নভেম্বর ২০১৯

দুইদিন ধরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। সৃষ্ট নিম্নচাপ আর ঘূর্ণিঝড়ের সম্মিলিত ফল। সারাদিন সূর্যের দেখা নেই বললেই চলে। সারাদিন কেমন যেন আরামদায়ক আলস্য। মেঘে মেঘে যেমন বেলা বয়ে যায়, তেমনি বয়সও তো একটা নির্দিষ্ট অঙ্ক অতিক্রম করেই ফেলেছে। এখন চাইলেও অনেক কিছু করতে পারি না। কিন্তু মনকে ঠেকাবে কে? মন তো কোন বাধা মানে না। মন চেনে না কোন চৌহদ্দি। রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী...’ এর মতই মন চলে যায় অজানা গন্তব্যে। বৃষ্টি নিয়ে জীবনে বিলাস করার সুযোগ খুব একটা হয়নি। বৃষ্টিতে ভেজার স্মৃতিও খুব একটা নেই। তবে বৃষ্টিতে ভিজতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। তখন ক্লাস নাইন বা টেন এ পড়ি। একদিন বাসায় ফিরছিলাম কোচিং বা কোন স্যারের বাসা থেকে ফিরছিলাম। মিরপুর ১০ নাম্বার গোল চক্করের কাছে এসে দেখি ঝুম বৃষ্টি। সাথে ছাতা ছিল না। ইচ্ছে হল যা খুশি তাই করি। প্যান্ট গুটিয়ে নিয়ে, বৃষ্টির ভেতর নেমে পড়লাম। রাস্তায় কিছু পানি জমে গেল। ছোট পোলাপানের মত পা দিয়ে পানি ছিটায়ে ছিটায়ে হাটতে লাগলাম। সারা গা কাক ভেজা হয়ে গেল। রাস্তার পাশে দোকানের ছাউনিতে দাঁড়ানো লোকগুলো কিছুটা অবাক কিছুটা হতাশ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে বাসার দিকে রওনা হলাম। ঐদিনের বৃষ্টিতে ভেজার কথা খুব মনে পড়ে।


আরেকদিনের কথা যে খুব মনে পড়ে! সেদিনের সাথে যে আমার একটা স্মৃতিও জড়িয়ে আছে! তবে যাকে কেন্দ্র করে সেই স্মৃতি, যে আজ শুধুই স্মৃতি হয়ে আছে। আমি এখানে তাঁর কোন নাম উল্লেখ করবো না। আমরা একই কোচিং এ পড়তাম। বসতাম ও ফার্স্ট বেঞ্চে। একদিন সুপ্রভা (ছদ্মনাম) আমাকে একটা পার্ক চকলেট বার দিয়ে বলল, শাওন খাবি? জানিস পার্ক চকলেট আমার খুব প্রিয়! আমি বললাম, কাহিনী কি? হঠাৎ চকলেট? আমাকে সুপ্রভা বলল, আমি আমার নানার সাথে গতকাল বাজি ধরছিলাম। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে তাহলে আমাকে পার্ক চকলেট কিনে দিবে। আমি জিতছি। কালকে বৃষ্টি হয়েছিল। নানা আমাকে এটা কিনে দিয়েছে। সুপ্রভা প্যাকেট খুলে আমাকে ভাগ দিল ওর চকলেট এর। থাই স্লাইড দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি তখনও অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। আমি বললাম, আজকে বাজি ধরলেও পারতিস সুপ্রভা! আজকেও জিতে যেতি নিশ্চিত! আজ সুপ্রভা নেই, কিন্তু বৃষ্টি হলেই আমার মনে হয়, সুপ্রভা জিতে গেছে। সুপ্রভা তুই আজকে কোথায় আছিস জানি না, কিন্তু আমার মনে হয় তুই জিতে গেছিস। বৃষ্টি হলেই মনে হয় সুপ্রভা জিতে গেছে।

View shawon1982's Full Portfolio