ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রকোপ চলছে গত দুইদিন ধরে। ঢাকাতেও সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে। ঘর থেকে বের হবার উপায় নেই। সেই সাথে ঠান্ডা বাতাস বইছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলাতে সতর্কতা সঙ্কেত মেনে চলতে বলা হয়েছে। আজকে থেকে বাসায় আবার দৈনিক খবরের কাগজ রাখা শুরু করলাম। হেডলাইন দেখে চোখ আটকে গেল। ‘সুন্দরবনের বাধায় দুর্বল ‘বুলবুল’’। একটা দেশের বনভূমি সেই দেশের জন্য প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় কেমন ঢাল হয়ে কাজে দিল। আর আমরা? প্রতিনিয়ত সেই বনভূমিকে ধ্বংস করে চলেছি। একমাত্র মানুষ ছাড়া আর কোন প্রাণী কি আছে যারা স্বেচ্ছায় নিজেরা নিজেদের ধ্বংসের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে? নানা রকম উদ্যোগ নিয়ে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে? বাংলায় একটা প্রবাদ শুনেছিলাম, ‘আপনি শুতে ঠাঁই পায় না, শংকরকে ডাকে’। প্রবাদগুলো আসলেই অনেক অর্থবহ। একটু চিন্তা করলেই কি এই প্রবাদের মধ্যে বাংলাদেশের কিছু প্রেক্ষাপট ফুঁটে ওঠে না? বাংলাদেশের সমূদ্র উপকুলবর্তী অঞ্চলের কি অবস্থা সেটা মনে হয় বলাই বাহুল্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য আমাদের যে হাতিয়ার দকার ছিল, সেই হাতিয়ার, আমাদের মূল্যবান বনভূমি আমরা দিনে দিনে শেষ করে ফেলছি।
১৯৯২ সালে সেই যখন ক্লাস ফোরে পড়তাম, তখন আমাদের কে পরিবেশ পরিচিতি তে পড়ানো হয়েছি, একটি দেশের জলবায়ুর ভারসাম্য রাখতে তার মোট ক্ষেত্রফলের ২৫% বনভূমি থাকতে হয়, কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের আছে মাত্র ১৬%। তাহলে এখন এই ২০১৯ সালে এসে বাংলাদেশের ক্ষেত্রফলের মোট কত শতাংশ বনভূমি? কেউ জানেন? নিশ্চই সেটা কমে যাওয়া ছাড়া বাড়ে নি? গত সপ্তাহেই যমুনা রসোর্টে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ওখানে বেশ সুন্দর একটা যাদুঘর আছে। বাংলাদেশ এর জীব-বৈচিত্র্য নিয়ে। মৃত পশু পাখিগুলোকে স্টাফ করে রাখা হয়েছে। ওখানে একটা বই দেখলাম। বাংলাদেশের পাখি নিয়ে। কয়েক পৃষ্ঠা উল্টে দেখলাম। কয়েকটা পাখির বর্ণনায় দেখলাম, এরা আগে বাংলাদেশে ছিল কিন্তু এখন বাংলাদেশে ওদের বসবাসযোগ্য পরিবেশ নেই। ওরা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে। আর আসার কোন সম্ভাবনা নেই। পার্বত্য অঞ্চলের হাতি, সুন্দরবনের বাঘ? শেষ হবার অপেক্ষায় মাত্র! এমন দিন যেন দেখতে না হয়, বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। দোয়েল চোখে পড়ে না কবে থেকে আমার মনে নেই। আমি তো শহরে এখন কোন কাকও দেখি না। আমাদের বাসার বারান্দায় আর কোন চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শুনি না। চড়ুই আমার খুব পছন্দের একটা পাখি ছিল। আমাদের আগের বাসার বারান্দার ফাঁকফোকরে ওরা বাসা বানাতো। বাচ্চা ফুটাতো। ওদের কিচিরমিচির শুনে ঘুম ভাংতো। মা চড়ুই যখন মুখে করে খাবার নিয়ে আসতো, তখন বাচ্চাগুলো একসাথে তারস্বরে ডেকে উঠতো। শহরে থেকেও তখন পাখি দেখেছি। কাকের কা কা ডাক কত শুনেছি। কাকের বাসা দেখেছি। শররে থেকে কাকের নীল রঙের ডিম ও দেখেছি। আর এখন একটা কাক ও চোখে পড়ে না! শালিক পাখি নিয়ে কত মজা করেছি। সেই শালিক ও নেই। কিছুই নেই। সব শুন্য। চারিদিকে শুধু যান্ত্রিকতা। প্রাণের স্পন্দন স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যের মানবিকতার জায়গায় স্থান করে নিচ্ছে পাশবিকতা আর হিংস্রতা।