স্মৃতিচারণ (বাণিজ্যমেলার সেই চিরকুট)

 

অনেকদিন হয়ে গেল। সেই নব্বই দশকের কথা। ঢাকায় তখন নতুন নতুন বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছে। আমি তখন স্কুলে পড়ি। ১৯৯৪-১৯৯৬ কোন এক সালের কথা। আমার হুবহু মনে নেই। তখনও একা একা ঘুরে বেড়ানোর কোন স্বাধীনতা ছিল না। আমার এক ফুফাতো ভাইয়ের সাথে বাণিজ্য মেলা ঘুরতে গেলাম। আর্থিক স্বাধীনতা যেহেতু ছিল না, তাই ইচ্ছেমত কোন কিছু কিনবো সেই উপায় ছিল না। আব্বু অবশ্য কিছু টাকা আমার ফুফাতো ভাইয়ের কাছে দিয়ে দিয়েছিলেন কিছু কিনে খাওয়ার জন্য। তখন আমার আকর্ষণ ছিল ‘মুন্নু সিরামিক’ এর একটা মগ কেনা। দাম ছিল ৩৫/= টাকা। মাত্র পয়ত্রিশ টাকায় মগ কেনা যায় এটাই ছিল আমার কাছে এক বড়ো বিস্ময়। পরপর কয়েক বছর, যতবারই গেছি, একটা মগ কিনে এনেছি। এক পাশে হয়ত একটা ‘বেগুন’ আর অন্যপাশে একটা ‘টমেটো’র ছবি দেয়া। তাতে চা খেতাম। সেটাই ছিল এক দারুণ ভাবের ব্যাপার! মোবাইল ফোন বলে যে কিছু হবে কখনও, সেটা তখন আমাদের কল্পনারও বাইরের ছিল। সায়েন্স ফিকশন টাইপ আর কি! টেলিফোন সেটে কথা বলতাম আর ভাবতাম, ইশ! এমন কি হতে পারে, যার সাথে কথা বলছি সাথে সাথে তাকে দেখতেও পাবো? আর এখন আমার চার বছরের মেয়েই আমাকে ভিডিও কল করে হুকুম দেয়, ‘বাবা! তুমি বাসায় আসার সময় আমার জন্য পিঙ্ক কালারের চুইংগাম নিয়ে আসবা’।  

 

এবার আসি চিরকুট প্রসঙ্গে। ফুফাতো ভাই এর সাথে বাণিজ্য মেলার এ স্টল সে স্টল ঘুরছি। কোন একটা দোকানে দেখই একটা মেয়ে (স্কুলের হবে হয়ত), ফ্যামিলির সাথে ঘুরছে। একি দোকানে আমরা। আমার চোখ পড়তেই দেখি, টি-শার্ট আর নীল জিন্সের প্যান্ট পরা শুকনা টাইপ একটা ছেলে (অবশ্যই আমার থেকে কিছু বড়) ঘার ঘুরিয়ে, ইশারা করে ওই মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে। মেয়েটি খেয়াল করে নি। ছেলেটা দেখলাম এক টুকরা কাগজ নিয়ে চট করে কিছু একটা লিখলো। এরপর সেটা দুমড়ে মুচড়ে বল বানিয়ে ছুঁড়ে দিল এমনভাবে যেন মেয়েটা লক্ষ্য করে। দিয়েই ছেলেটা দোকান থেকে বের হয়ে গেল। ওর দুর্ভাগ্য বলতে হয়, মেয়েটি হয়ত কাগজটা দেখেইনি। বা দেখলেও কিছুই করার ছিল না, কারণ কাগজটা এসে পড়েছিল আমার পায়ের কাছে। আমি স্যান্ডেল দিয়ে চেপে ধরি। যেন কিছুই হয় নাই। আমি একটা চরম নিষিদ্ধ জিনিষের আভাস পাচ্ছিলাম। মেয়েটা তার ফ্যামিলি সহ বের হয়ে গেল দোকান থেকে। আমি স্যান্ডেলের নিচ থেকে কাগজটা বের করে পকেটে চালান করে দিলাম। ফুফাতো ভাইয়ের সামনে সেটা দেখতে ভয় পাচ্ছিলাম, যদি আব্বুকে বলে দেয়!

 

বাসায় এসে কাগজটা খুলে দেখলাম। যা ভাবছিলাম তাই, একটা প্রেমের প্রস্তাব। ওই কাগজের কথা আমার হুবহু মনে আছে। তুলে দিচ্ছি—

 

“তোমাকে ভাল লেগেছে

@#৳%&! (৬ ডিজিটের একটা ফোন নাম্বার)

শুভকে চাইবে

 

সেই কাগজটা আমি বহুকাল সজতনে একোটা ডায়রীর ভাজে তুলে রেখেছিলাম। ডায়রীটা পেলে হয়ত দেখবো এখনও কাগজটা আছে সেখানেই। আর ঘটনার পাত্র-পাত্রীরা? কে জানে কে কোথায় চলে গেছে! দু’জনের হয়ত আলাদা আলাদা নিজস্ব জীবনগন্ডি তৈরী হয়েছে। হয়ত তারা যে যার মত ভালই আছে। ছেলেটার হয়ত এই চিরকুটের কথা আর মনেই নেই। শুধু, ভিলেনের মত আমার একটা কর্মকান্ডের জন্য একটা বাল্যপ্রেম সেদিন মাঠে মারা গিয়েছিল।

Author's Notes/Comments: 

20 march 2019

View shawon1982's Full Portfolio