লিওনার্দো দা ভিঞ্চি শুধুমাত্র একজন চিত্রশিল্পীই ছিলেন না বরং আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক সার্থক আবিস্কারের রূপকার ও দার্শনিকও ছিলেন। শুধু বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপরেই তাঁর ত্রিশটি জার্নাল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচাইতে বহুল আলোচিত এবং সবচাইতে ব্যয়বহুল হল ‘কোডেক্স লেসিস্টার’। সম্পূর্ণ গ্রন্থটি হাতে লেখা। গ্রন্থটির নাম ‘কোডেক্স’ দেন থমাস কোক এবং পরবর্তিতে ১৭১৯ সালে এটা ‘আর্ল অব লেসিস্টার’ ক্রয় করেন এবং তখন এর নাম হয় ‘কোডেক্স লেসিস্টার’। মাইক্রোসফট এর কর্ণধার বিল গেটস এটিকে ১৯৯৪ সালের ১১ই নভেম্বর, নিউ ইয়র্কের স্বনামধন্য নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টি থেকে তিন কোটি আট লক্ষ দুই হাজার পাঁচশত ($ ৩,০৮,০২,৫০০) মার্কিন ডলারে ক্রয় করেন। এটাই এখন পর্যন্ত সর্বাধির মূল্যে বিক্রিত গ্রন্থ।
কোন নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপরে নয় বরং বিজ্ঞানের বহুবিধ বিষয়ের উপরে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এই গ্রন্থে আলোকপাত করেছেন। তন্মধ্যে জ্যোতিষশাস্ত্র, পানি, ভূ-গর্ভস্থ প্রস্তর, ফসিল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। লিওনার্দো বিশ্বাস করতেন যে, পর্বতের উৎপত্তি সমূদ্রতটের মাটি স্তরে স্তরে জমে হয়েছে। এ থেকে তিনি পর্বতে ফলিসের উপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করেন।
পানি এবং এর গতিবিধির উপরে আলোকপাত এই গ্রন্থের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়। তিনি নদীর পানির প্রবাহ এবং প্রবাহের বাধা কি কারণে হয় তা পর্যবেক্ষণ করেন। এ থেকে নদীর উপর সেতু তৈরী এবং স্রোতের কারণের সেতুতে যে ক্ষয়ের সৃষ্টি হয় এ ব্যপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।
লিওনার্দো ধারণা করতেন, চাঁদের পৃষ্ঠদেশ পানি দ্বারা আবৃত এবং তা থেকে সূর্যের আলোর প্রতিফলন ঘটে। পানির তরঙ্গ সূর্যের আলোকরশ্মিকে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দেয়, যার ফলশ্রুতিতে চাঁদের আলোর তীব্রতা সূর্যের মত প্রখর নয়। তিনি আরো ব্যাখ্যা করেন, অপূর্ণ চাঁদের কালো অংশের ভেতর যে হাল্কা হলুদ রঙের আভা দেখা দেয় তা আসে পৃথিবী থেকে প্রতিফলিত সূর্যরশ্মি থেকে। তিনি এই ঘটনা জার্মান জ্যোতিষশাস্ত্রবিদ জোহান্স কেপলারের প্রমাণ করার একশত বছর পূর্বেই ব্যাখ্যা করেন।
প্রায় বাহাত্তর পৃষ্ঠায় রচিত এই গ্রন্থটি প্রথমে বাঁধাই করা ছিল কিন্তু বর্তমানে এর পৃষ্ঠাগুলো বিচ্ছিন্ন করে প্রদর্শনী কথা হয়। এটি ইতালীয় ভাষায় রচিত এবং উল্টোকরে লেখা যেন আয়নার সামনে ধরলে ঠিক করে পড়া যায়। এতে শুধু বর্ণনাই নয় বরং আনুষঙ্গিক চিত্রও সংযোজিত আছে।
১৯৮০ সালে শিল্পপতি আরমান্ড হ্যামার গ্রন্থটি লেসিস্টার স্টেট থেকে ক্রয় করে এর নাম দেন ‘কোডেক্স হ্যামার’। প্রায় ছ’জন মালিকের হাতবদল হয়ে এটি বর্তমানে বিল গেটস এর তত্ত্বাবধানে আছে। যাদের নিকট এই গ্রন্থটি ছিল তাদের নাম ও সময়কাল উল্লেখ করা হল-
১। জিওভানি ডেলা পোর্টা (সময়কাল অজ্ঞাত)
২। গুইসেপ গেজি (১৭১৯ পর্যন্ত)
৩। থমাস কোক (১৭১৯-১৭৫৯)
৪। লেসিস্টার এস্টেটে ছিল ১৭৫৯ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত
৫। আরমান্ড হ্যামার (১৯৮০-১৯৯০)
৬। ১৯৯০-১৯৯৪ (অজ্ঞাত)
৭। বিল গেটস (১৯৯৪-বর্তমান)
বিল গেটস গ্রন্থটির পৃষ্ঠাগুলো স্ক্যান করে ডিজিটাল ইমেজ তৈরি করে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ এর ওয়ালপেপার ও স্ক্রীন সেভার হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। মূলগ্রন্থের পৃষ্ঠাগুলো বছরে একবার বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২০০০ সালে এটি সিডনি পাওয়ার হাউজ যাদুঘরে প্রদর্শিত হয়। ৩১শে অক্টোবর ২০১৫ থেকে ১৬ই জানুয়ারী ২০১৬ পর্যন্ত এই মূল্যবান গ্রন্থটি নর্থ ক্যারোলিনা আর্টস মিউজিয়ামে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে।
[সূত্রঃ ইন্টারনেট]