মাশওয়ারা (استشارات)

মাশওয়ারা (استشارات)


শাব্দিক অর্থ পরামর্শ করা। সূরা আলি-ঈমরান এর ১৫৯ নং আয়াতে الله তা’য়ালা মাশওয়ারা’র হুকুম করেন এবং সূরা শুরা এর ৩৮ নং আয়াতে الله তা’য়ালা নামাজ কায়েমের সঙ্গেই মাশওয়ারা’র উল্লেখ করেন। মাশওয়ারা’র গুরুত্ব এখান থেকে বোঝা যায়। এছাড়া এটা রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم) এর সুন্নাত এবং উম্মতে মোহাম্মদি’র বিশেষ বৈশিষ্ট্য। দীনের ব্যাপারে মাশওয়ারা করা ওয়াজিব আর দুনিয়াবী কাজেও মাশওয়ারা মুস্তাহাব।

 

উদ্দেশ্যঃ কোন একটি বিষয়ের উপরে সব সাথীর ফিকির’কে একত্রিত করা অথবা সব সাথীর দিলে দীন জিন্দা করার ফিকির পয়দা করা।

 

কতিপয় ফজিলতঃ

  • الله তা’য়ালা বলেন, “…কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন……” (সূরা আলি-ঈমরান-১৫৯)
  • الله তা’য়ালা বলেন, “আর তারা তাদের রবের আদেশ মান্য করে, নামাজ কায়েম করে, পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে”। (সূরা শুরা-৩৮)
  • الله তা’য়ালা বলেন, তাদের অধিকাংশ সলা-পরামর্শ ভাল নয়; কিন্তু যে সলা-পরামর্শ দান খয়রাত করতে কিংবা সৎকাজ করতে কিংবা মানুষের মধ্যে সন্ধিস্থাপন কল্পে করতো তা স্বতন্ত্রযে একাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমি তাকে বিরাট ছওয়াব দান করব (সূরা নিসা১১৪)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “…যদিও الله আর তাঁর রসূলের জন্য পরামর্শের দরকার নেই, তথাপি الله এটাকে আমার উম্মতের জন্য রহমত স্বরুপ দান করেছেন। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে পরামর্শ করে কাজ করে সে হেদায়েত থেকে গোমরাহ হয় না, আর তোমাদের মধ্যে যে পরামর্শ করে না সে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পায় না”। (বায়হাক্বী)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “…দীন সম্পর্কে জ্ঞান রাখে এমন ইবাদতগুজার লোকের সাথে পরামর্শ করবে যারা নিজের মতামতের উপরে ফায়সালা করে না”। (তাবারানি)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি কোন কাজের ইচ্ছা করে তাতে পরামর্শ গ্রহন করে, اللهতা’য়ালা তাকে সঠিক বিষয়ের দিকে হেদায়েত করবেন”। (বায়হাক্বী)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “যতদিন অবধি তোমাদের শাসকবর্গ তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি হবে, তোমাদের বিত্তশালীরা দানশীল হবে এবং তোমাদের কাজকর্ম পারস্পারিক পরামর্শক্রমে সম্পন্ন হবে, ততদিন দুনিয়ায় তোমাদের বসবাস করা অর্থাৎ জীবিত থাকা ভাল...”। (রুহুল মা’আনী)
  • হযরত আবু হুরাইরাহ আব্দুর রহমান ইবনে সখর আদ-দাওসী (رضي الله عنه) বলেন, “আমার সাথীদের মধ্যে রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم) ব্যতীত আমি কাউকে এমন দেখি নাই যে তার সাথীদের সাথে এত অধিক পরামর্শ করে”। (তিরমিজি)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “তোমাদের কেউ যখন তার মুসলমান ভাই এর কাছ থেকে পরামর্শ চায় তখন সে যেন তাকে পরামর্শ দেয়”। (ইবনে মাজাহ)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “…যে ব্যক্তি তার ভাইকে কোন বিষয়ে পরামর্শ দিল অথচ সে জানে তার কল্যান অন্য কিছুতে আছে; সে তার সাথে প্রতারণা করলো”। (আবু দাউদ)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “…যে পরামর্শ করে সে অনুতপ্ত হয় না…”। (তাবারানি)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “পরামর্শদাতা আমানতদার”। (তিরমিজি)

 

তারতীবঃ

বিশেষ দরকার না হলে মহল্লার মাশওয়ারা ১০-১২ মিনিটের মধ্যেই শেষ করা। দুই এক মিনিট ইমানী মুজাকারা করে সাথীদের দিলকে একত্রিত করা। এরপর গত দিনের মেহনতের কারগুজারী নিয়ে আগামী দিনের মেহনতের রোখ ঠিক করে নেয়া।

বিষয়বস্তুঃ

اللهতায়ালা রাস্তায় গিয়ে যে মাশওয়ারা করা হয় তার বিষয়বস্তু মূলতঃ কয়েকটি। যথা- আমরা কিভাবে ইমানদার, ’আমলওয়ালা, মুখলেস দাঈ হতে পারি সেজন্য ফিকির করা। মহল্লা থেকে নগদ জামাত اللهতায়ালা রাস্তায় বের হবার জন্য ফিকির করা। মাসজিদের ৫ কাজের ফিকির করা অর্থা চালু করা; বা চালু না থাকলে তারগীব দিয়ে মেহনতের ক্ষেত্রে আগের বাড়ানোর চেষ্টা করা। প্রতিদিনের আমলের নজম ঠিক করে নেয়া। এছাড়া তাকাজার উপর ভিত্তি করে মহল্লার মাশওয়ারা’র নজম ঠিক করে নেয়াসংক্ষেপে এভাবে বলা যেতে পারে-

১। আমরা কিভাবে হেদায়েত পেতে পারি সেজন্য মেহনত করা

২। হিজরত থেকে হিজরত জিন্দা করা

৩। মাসজিদ ওয়ার আমল চালু করা আর তরক্কীর তারগীব দেয়া।    

 

হাসিল করার তরীকাঃ

১। দরস করা – মাশওয়ারা’র তারতীব, আদব, ফজিলত, গুরুত্ব, বিষয়াদি ইত্যাদি ভালভাবে শিখে নেয়া।

২। মশক করা – তাকাজার উপর ভিত্তি করে প্রত্যেকদিন মহল্লার মাসজিদওয়ার জামাতের সাথে মাশওয়ারা করা। ঘরের আহালদের সাথে মাশওয়ারা করা। দুনিয়াবী সব কাজও মাশওয়ারা সাপেক্ষে করা।

৩। দাওয়াত দেয়া – প্রত্যেক সাথী যেন মাশওয়ারাতে শামিল থাকে সেজন্য ইস্তেমায়ী ও ইনফেরাদী ভাবে দাওয়াত দেয়া।

 

৪। দোয়া করা – দু’আয় জামেয়া’র তারগীব।

Author's Notes/Comments: 

october 2011

View shawon1982's Full Portfolio