তা’লিম (تعليم)

তা’লিম (تعليم)


তা’লিমের দ্বারা দীনি ঈলম হাসিল করা হয়। পরস্পর শিক্ষা গ্রহন ও শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দীনের তা’লিম করা হয়। সব জামানায়  الله তা’য়ালার হুকুমে সকল নবী (عليهم الصلاة والسلام) এর উপরে দীনের দাওয়াতের ন্যায় তা’লিমের জিম্মাদারী ন্যাস্ত ছিল। সুতরাং দীনের দাওয়াতের ন্যায় তা’লিম করাও উম্মতে মোহাম্মদীর জিম্মাদারী। কুরআন পাকের বর্ণনায় জানা যায়, الله তা’য়ালা নিজেই প্রথমে তা’লিমের ’আমল শুরু করেন। আদম (عليه الصلاة والسلام) কে সৃষ্টি করার পর الله তা’য়ালা নিজেই তাকে সমস্ত জিনিসের নাম শিক্ষা দেন। (সূরা বাকারা-৩১)

 

উদ্দেশ্যঃ আমলের একীন পয়দা করা অর্থাৎ الله তা’য়ালার এবং তাঁর রসূল এর যাবতীয় ওয়াদা’র পূর্ণ একীন দিলে পয়দা করা। (অর্থা আসবাবের দ্বারা কোন জরুরত পুরা হয় না বরং الله তা’য়ালা তাঁর রসূলের মাধ্যমে আমাদের যে ’আমল শিক্ষা দিয়েছেন তা দিয়েই জরুরত পুরা করা সম্ভব। الله তা’য়ালা আসবাবের সাথে ওয়াদা করেন নাই। সব ওয়াদা ’আমলের সাথে। তা’লিমের ওসিলায় এই একীন দিলে বসাতে হবে।)

 

কতিপয় ফজিলতঃ

  • الله তা’য়ালা বলেন, “(হে নবী) আপনি বলুন, যে জানে আর যে জানে না, তারা কি এক হতে পারে?” (সূরা ঝুমার-৯)
  • الله তা’য়ালা বলেন, “করুণাময় الله। শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন”। (সূরা আর রহমান- ১-৪)
  • الله তা’য়ালা বলেন, “তিনি (الله) মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না”। (সূরা ’আলাক্ব-৫)
  • الله তা’য়ালা বলেন, “যারা ইমান এনেছে এবং যাদেরকে ঈলম দান করা হয়েছে, اللهতাদের মর্তবা বৃদ্ধি করেছেন”। (সূরা মুজাদালাহ-১১)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “মানুষকে শিক্ষা দাও এবং সহজ আচরন করো; আর কঠোর হয়ো না”। (আহমদ)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “উত্তম দান হল, কোন মুসলমান ব্যক্তি ঈলম শিক্ষা করবে এবং তা অপর মুসলমান ভাই কে শিক্ষা দিবে”। (ইবনে মাজাহ)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “ঈলমের একটা বৈঠক, ষাট বছরের ঈবাদত থেকেও শ্রেষ্ঠ”। (তিরমিজি)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “……জিকিরের মজলিসের বিনিময় হল জান্নাত, শুধুই জান্নাত”। (আহমদ, তাবারানি)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়”। (বুখারী, তিরমিজি)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি কল্যাণের কথা শিক্ষা করা বা শিক্ষা দেয়ার জন্য মাসজিদে যায়, তার সওয়াব ঐ হাজীর ন্যায় যার হজ্জ্ব কামেল হয়েছে”। (তাবারানী)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “মানুষ তোমাদের অনুসকরণ করবে; আর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক লোক দীনের জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে তোমাদের নিকটে আসবে। তারা যখন তোমাদের নিকটে আসবে, তখন তাদের কল্যাণের দিকে খেয়াল রেখো”। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم) হযরত আবু যর জুন্দুব ইবনে জুনাদা আল-গিফারী (رضي الله عنه) কে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ ফরমান, “হে আবু যর! তুমি যদি সকাল বেলা ঘর থেকে বের হয়ে আর اللهতা’য়ালা  কিতাবের একটা আয়াতও শিখে আসো, তাহলে তা তোমার জন্য একশ’ রাক’আত (নফল) নামাজ আদায়ের চেয়ে উত্তম হবে। আর যদি তুমি সকাল বেলা বেরিয়ে গিয়ে ঈলমের একটি অধ্যায় শিখে আসো; তার উপর ’আমল করা সম্ভব হোক বা না হোক, তা তোমের জন্য এক হাজার রাক’আত (নফল) নামাজ আদায়ের চেয়ে উত্তম হবে”। (ইবনে মাজাহ)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “হে লোকসকল! দীনী ঈলম কব্জ করার আগে এবং উঠাইয়া নেয়ার আগে উহাকে অর্জন কর”। (আহমদ)
  • হাদীসে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি ঈলম শেখার জন্য বের হয়, সে ফিরে না আসা অবধি اللهতায়ালা  রাস্তায় অবস্থান করে”। (তিরমিজি)
  • হাদীসে আরো বর্ণিত আছে যার মাফহুম- ফেরেস্তারা জিকিরের মজলিসকে বেষ্টন করে রাখে, পাখা দিয়ে আসমান অবধি ঘিরে নেয়, আর اللهতা’য়ালা ঐ মজলিসে বসার ওসিলায় গুনাহ কে মাফ করে দেন আর গুনাহের যায়গা নেকী দিয়ে পূর্ণ করে দেন। এছাড়া আরো অনেক ফজিলত আছে যা, কুরআন, মুন্তাখাব হাদীস বা অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ থেকে জানা যেতে পারে।

 

হাসিল করার তরীকাঃ

১। দরস করা – গুরুত্ব সহকারে প্রতিদিন তা’লিমের হালকায় বসে ধ্যানের সাথে কথা শোনা। উলামাদের কাছ থেকে দীনের আহকাম ও মাসায়েল শিক্ষা করা। ফাযায়েলের কিতাব, মুন্তাখাব হাদীস ও অন্যান্য সহী উসুলের কিতাব থেকে ঈলম শিক্ষা করা। নবী (عليهم الصلاة والسلام) এবং সাহাবা (رضي الله عنهم) দের ওয়াক্বেয়া সহী উসুলের কিতাব থেকে শেখা। দরকারী দলিল শিখে নেয়া। সবার জন্যই ঈলমের তাহক্বীক করা শেখা। ভালোভাবে না জেনে কোন ধরণের সন্দেহজনক কথা বিলকুল না বলা।

২। মশক করা – প্রত্যেক হাদীস কমপক্ষে ৩ বার পড়া। উত্তম রুপে কুরআন-হাদীস এর কথা মনে রাখা। প্রত্যেকদিন ঈলমের মশক করা। পুরুষদের জন্যঃ ৩টি তা’লিম প্রত্যেকদিন করা (মহল্লার মাসজিদে, ঘরে মাহরাম সাথী নিয়ে, ইনফেরাদি ভাবে সহী উসুলের কিতাব পড়া)। মহিলাদের জন্যঃ প্রত্যেকদিন ঘরে তা’লিম করা, সপ্তাহে একদিন মাস্তুরাতের তা’লিমে শরীক থাকা, দরকারি মাসায়েলের জন্য মাহরাম সাথীদের উলামাদের নিকট পাঠিয়ে জেনে নেয়া, ঘরে ইনফেরাদি ভাবে সহী উসুলের কিতাব পড়া, বাচ্চাদের দীনের ঈলম শিক্ষা দেয়া। সবার জন্যই ঘরে দীনি কথা মুজাকারা করা। ঘরের তা’লিমে ৬ সিফাতের মুজাকারা করা ও তাশকিল করা।

৩। দাওয়াত দেয়া – গুরুত্ব সহকারে ঈলম ও তা’লিমের ফাযায়েল বর্ণনা করে ইস্তেমায়ী ও ইনফেরাদী ভাবে দাওয়াত দেয়া। উত্তম রুপে, হুবহু সঠিক ভাবে এবং কোন রকম কম বেশী না করে কুরআন-হাদীস এর বাণী বর্ণনা করে দাওয়াত দেয়া। মাসজিদের মধ্যে দাওয়াত-তা’লিম-ইস্তেগবাল এর ’আমল চালু করা। তা’লিমি গাস্ত করা। ভুলভ্রান্তি ইকরামের সাথে শুধরে দেয়া।

 

৪। দোয়া করা – দু’আয় জামেয়া’র তারগীব।  

Author's Notes/Comments: 

october 2011

View shawon1982's Full Portfolio