আল্লহ’র রাস্তায় আমলের ফজিলত
আল্লহ পাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। উম্মতে মোহাম্মদীর উপরে আল্লহ পাক দায়িত্ব দিয়েছে দুটি। প্রথমত নিজে ইবাদত করা এবং দ্বিতীয়ত মানুষকে নবীগণের ন্যায় আল্লহ পাকের হুকুম তথা দীনের দিকে ডাকা। ইসলাম ধর্ম বা দীন প্রচারের জন্য আল্লহ পাকের মনোনীত পন্থা হল নবীগণের তরীকা অর্থাৎ নবীরা যে তরীকায় মেহনত করেছেন ঠিক সেইভাবে যদি আমরা মানুষকে আল্লহ পাকের দিকে ডাকি সেটাই একমাত্র ফলপ্রসূ হবে। দীন কে নিজের জীবনে আনা এবং পুরা উম্মতের মধ্যে আনার একমাত্র মাধ্যম হল, নবীজীর তরিকায় এবং সাহাবাওয়ালা জজবা নিয়ে আল্লহ পাকের রাস্তায় বের হওয়া এবং জান, মাল ও সময়ের কুরবানী দিয়ে দীনের মেহনত করতে থাকা। আল্লহ পাকের ওয়াদা রয়েছে, পরবর্তী যামানার লোকেরা যখন দীনের মেহনত করতে থাকবে, তখন আল্লহ পাক তাদের ১০ জন সাহাবার সমান সাহায্য এবং ৫০ জন সাহাবার বরাবর সওয়াব দান করবেন। সূরা মোহাম্মদের ৭ নং আয়াতে আল্লহ পাক দীনের কাজ করনেওয়ালা বা দীনের সাহায্য করনেওয়ালাদের জন্য সাহায্যের ওয়াদা করেছেন। সূরা আল-বাক্বারার ২৬১ নং আয়াতে আল্লহ পাক, তাঁর রাস্তায় খরচের বদলা ৭০০ গুন বর্ধিত করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। আল্লহ পাক আরো উল্লেখ করেন, যার জন্য খুশি আল্লহ পাক আরো বহুগুনে বর্ধিত করে দিবেন।
কোরান পাক এবং রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র হাদিস পাকে আল্লহ’র রাস্তার ফজীলতের অনেক বর্ণনা রয়েছে যা বিস্তারিত বর্ণনা করা দুঃসাধ্য। কতিপয় ফজীলতের দিকে যদি আমরা আলোকপাত করি তাহলে আল্লহ চাহে তো বুঝে আসতে পারে যে, আল্লহ পাক তাঁর রাস্তায় মেহনতকারীদের জন্য কি বিপুল পুরস্কার ও মর্তবা রেখে দিয়েছেন। নিচে আল্লহর রাসুল (সাঃ) এর একটি হাদীস ভাবানুবাদ সহকারে উল্লেখ করা হল-
عن عمران بن حصين عن رسول الله صلى الله عليه و آله قال: من أرسل بنفقة في سبيل الله و أقام في بيته فله بكل درهم سبعمائة درهم، و من غزا بنفسه في سبيل و أنفق في وجهه فله بكل درهم يوم القيامة سبعمائة ألف درهم ثم تلا هذه الآية (و الله يضاعف لمن يشاء) ...
অর্থঃ হযরত ঈমরান বিন হোসাইন (রাঃ) রাসূলুল্লহ (সাঃ) এর ইরশাদ বর্ণনা করেন যে, যদি কোন ব্যক্তি আল্লর রাস্তায় খরচ দেয় কিন্তু নিজে ঘরে অবস্থান করে তবে সে তার ব্যয়িত দিরহামের বিনিময়ে ৭০০ গুন সওয়াব লাভ করবে। আর যদি কোন ব্যক্তি নিজে আল্লহর রাস্তায় বের হয় এবং নিজের ব্যক্তিগত দরকারে এক দিরহাম খরচ করে তবে কিয়ামতের দিন প্রত্যের দিরহামের বিনিময়ে সে ৭০০,০০০ (সাত লক্ষ) গুন সওয়াব লাভ করবে। এরপরে তিলাওয়াত করেন, আল্লহ যাকে ইচ্ছা যতখুশি বর্ধিত করেন।
মুসনদে আহমদ শরীফে হযরত সাহল (রাঃ) রসূলুল্লহ (সাঃ) এর ইরশাদ বর্ণনা করেন যে, “আল্লহর জিকিরের সওয়াব এত বেশী যে, আল্লহর রাস্তায় খরচ এর চাইতে সাত লক্ষ গুন বেশী হয়ে যায়”। অর্থাৎ আল্লহর রাস্তায় নামাজ এবং জিকিরের বদলা খরচের উপরে আরো ৭০০,০০০ (সাত লক্ষ) গুন বাড়িয়ে দেয়া হয়। কোন কোন বর্ণনায় ৭০০ গুনের উল্লেখ পাওয়া যায়। কাজেই, নামাজ ও জিকিরের ফজীলত দানের উপরে ৭০০ গুন বেশী হলে হয় ৭০০ X ৭০০,০০০ = ৪৯,০০০০০০০ (ঊনপঞ্চাশ কোটি)। আর যদি আহমদ শরীফের বর্ণনা অনুসারে ৭০০,০০০ গুন ধরা হয় তাহলে আল্লহ’র রাস্তায় নামাজ জিকিরের ফজীলত হবে ৭,০০০০০ X ৭,০০০০০= ৪৯,০০০,০০০০০০০ (ঊনপঞ্চাশ হাজার কোটি) গুন। এই সংখ্যা আমাদের কাছে যত বিপুল পরিমানই হোক না কেন, মহান আল্লহ পাকের সীমাহীন ভান্ডারের কাছে এই অবারিত দান কিছুই নয়! হাদীসে কুদসী থেকে জানা যায়, বান্দা আল্লহ পাক সম্পর্কে যেমন একীন রাখবে, আল্লহ পাক তার সাথে ঠিক তেমন ব্যবহার করবেন। কাজেই আমরা পুরস্কারের ব্যপারে আল্লহ পাকের অপার রহমতের প্রত্যাশা রেখে সর্বোচ্চোটাই কামনা করবো।
বিসমিল্লাহ এর ফজীলতঃ
হাদীসের বর্ণনা হতে পাই, ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম (بسم الله الرحمن الرحيم)’ পাঠ করলে এর প্রতি হরফের বিনিময়ে ৪০০০ নেকী হয়। উক্ত কালামে মোট ১৯ টি অক্ষর আছে। কাজেই এই পবিত্র বাক্য একবার পাঠ করলে সওয়াব হয় ১৯ X ৪০০০ = ৭৬,০০০ (ছিয়াত্তর হাজার) টি। যদি আল্লহ’র রাস্তায় একবার পাঠ করা হয় তাহলে সওয়াব হবে ৭৬,০০০ X ৪৯০০০,০০০০০০০ = ৩৭,২৪০,০০০০০,০০০০০০০ (সাইত্রিশ হাজার দুইশ চল্লিশ লক্ষ কোটি) টি। শুধু ফরজ, ওয়াজিব আর সুন্নাতে মোয়াক্কাদা ধরলে দৈনিক নামাজ হয় মোট ৩২ রাকাত। যেখানে সূরার আগে এই বিসমিল্লাহ কালাম পড়া হয় মোট ৫৭ বার। কাজেই শুধু নামাজের মধ্যেই বিসমিল্লাহ বলার সওয়াব হয়ে গেলো ৫৭ X ৩৭,২৪০,০০০০০,০০০০০০০ = ২১,২২,৬৮০,০০০০০,০০০০০০০ (একুশ লাখ বাইশ হাজার ছয়শ আশি লক্ষ কোটি) টি। নফল নামাজ এবং কোরান তেলাওয়াতের হিসাব এখানে ধরা হয় নি। আলী (রাঃ) এর বর্ণনা মতে, নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় পড়লে প্রতি হরফে ১০০ নেকী হয়। বিসমিল্লাহ কালামটি কোরানের আয়াত। কাজেই, উক্ত ৩২ রাকাত নামাজ দাঁড়িয়ে পড়লে নেকী আরো ১০০ গুন বেশী হয়ে দাঁড়াবে, ২১,২২,৬৮০,০০০০০০০,০০০০০০০ (একুশ লাখ বাইশ হাজার ছয়শ আশি কোটি কোটি) টি।
সূরা ইয়াসিন এর ফজীলতঃ
হাদীসের বর্ণনা থেকে পাই, একবার সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করলে ১০ বার কোরান পাক খতমের সওয়াব পাওয়া যায়। আল্লহর রাস্তায় এই সূরা পড়লে সওয়াব দাঁড়াবে ১০ X ৪৯০০০,০০০০০০০ = ৪,৯০,০০০,০০০০০০০ (চার লক্ষ নব্বই হাজার কোটি) বার কোরান খতমের বরাবর।
সূরা ইখলাস এর ফজিলতঃ
হাদীসের বর্ণনা অনুসারে, সূরা ইখলাস একবার পাঠ করলে কোরানের এক তৃতীয়াংশ পাঠের নেকী হয় এবং ১০ বার পাঠ করলে জান্নাতে একটি মহল তৈরি হয়। আল্লহর রাস্তায় পড়লে মহল তৈরী হবে ১০ X ৪৯০০০,০০০০০০০ = ৪,৯০,০০০,০০০০০০০ (চার লক্ষ নব্বই হাজার কোটি) টি।
জান্নাতে বৃক্ষ রোপনঃ
হাদীসের বর্ণনা হতে পাই, তাসবীহের কালাম সুবহানাল্লাহ (سبحان الله) পাঠ করলে জান্নাতে একটি সুবিশাল বৃক্ষ রোপিত হয় যার ছায়া কোন তেজী ঘোড়া নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে শতবছর দৌড়িয়েও শেষ করতে পারবে না। আল্লহর রাস্তায় এই কালাম একবার পাঠ করলে গাছ রোপিত হবে কমপক্ষে ৪৯,০০০,০০০০০০০ টি বা ঊনপঞ্চাশ হাজার কোটি টি। প্রতিবার এই কালাম পাঠ করার দরুণ পাঠকারী ব্যক্তির জান্নাতের সীমানা কি পরিমান বৃদ্ধি পাবে তা অনুমান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্য একটি তাসবীহ ‘সুব’হানাল্লহিল আজিমি ওয়া বি’হামদিহ’ (سبحان الله العظيم و بحمده) এই তাসবীহ পাঠের বিভিন্ন ফজিলত বর্ণনা করা আছে। একবার পাঠ করলে জান্নাতে একটা খেজুর গাছ রোপিত হয়। আর আল্লর রাস্তায় পড়লে খেজুর গাছ হবে কমপক্ষে ৪৯,০০০,০০০০০০০ টি বা ঊনপঞ্চাশ হাজার কোটি টি। আর সকাল সন্ধ্যা ৩ বার ‘সুব’হানাল্লহিল আজিমি ওয়া বি’হামদিহ ওয়ালা হাউলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ (سبحان الله العظيم و بحمده ولا حول ولا قوة الا بالله) পড়লে ৪ টি কঠিন রোগ থেকে আল্লহ পাক মুক্তি দান করেন। এগুলো হলো- অন্ধত্ব, কুষ্ঠ, পক্ষাঘাত (প্যারালাইসিস) এবং ক্যান্সার। আল্লহর রাস্তায় এই আমল করলে প্রতিবেলায় জান্নাতে খেজুর গাছ পাওয়া যাবে ৩ X ৪৯০০০,০০০০০০০ = ১,৪৭,০০০,০০০০০০০ ( এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার কোটি) টি এবং উক্ত ভয়াবহ রোগগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ইনশা-আল্লহ।
অপর এক হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, সুবহানাল্লহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লহ, আল্লহু আকবর- এই কালাম সমুহের যে কোনটির পাঠের সওয়াব ওহুদ পাহাড়ের চাইতেও অতিশয় বড়। সহজেই বোঝা যায়, আল্লহর রাস্তায় গিয়ে এই কালাম সমূহের যত বেশী জিকির করা যাবে ততই প্রতি কালামের বিনিময়ে ঊনপঞ্চাশ হাজার কোটি টি ওহুদ পাহাড়তুল্য নেকী লাভ হবে। আল্লহর রাস্তায় সফরে গিয়ে সকাল সন্ধ্যা কেউ যদি কালিমা সুম (سبحان الله , والحمد لله , ولا إله إلا الله , والله اكبر) ১০০ বার করে পাঠের অভ্যাস করে তবে এই আমলের বিনিময়ে জান্নাতে তার গাছ লাগবে ২০০ X ৪ X ৪৯,০০০,০০০০০০০ = ৩৯২,০০০০০,০০০০০০০ (তিনশ বিরানব্বই লক্ষ কোটি) টি এবং সমান সংখ্যক ওহুদ পাহাড়ের চাইতেও বেশী নেকী হাসিল হবে।
সুবহানাল্লহি ওয়াবি’হামদিহ- পাঠের ফজীলতঃ
বর্ণনা থেকে জানা যায় “সুবহানাল্লহি ওয়াবি’হামদিহ” (سبحان الله وبحمده) এই বিশেষ তাসবীহ পাঠ করলে ১,২৪,০০০ (এক লক্ষ চব্বিশ হাজার) নেকী হয়। তাহলে আল্লহ পাকের রাস্তায় এটা পাঠ করলে নেকী হবে ১,২৪,০০০ X ৪৯,০০০,০০০০০০০ = ৬০৭৬০,০০০০০,০০০০০০০ (ষাট হাজার সাতশ ষাট লক্ষ কোটি) টি।
তাসবীহে ‘জুওয়াইরিয়া’ পাঠের ফজীলতঃ
রাসূলুল্লহ (সাঃ) উম্মুল মি’মিনিন হযরত জুওয়াইরিয়া (রাঃ) কে তাসবীহ “সুব’হানাল্লহি ওয়াবি’হামদিহী ’আদাদা খলক্বিহী, ওয়া রিদ্বা নাফসিহী, ওয়া ঝিনাতা ’আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহ” (سبحان الله وبحمده ، عدد خلقه ورضا نفسه وزنة عرشه ومداد كلماته) শিখিয়ে দিয়ে বলেন, সকাল বেলা এই কালিমা তিনবার পাঠ করা সারা সকাল তাসবীহ পাঠ করা থেকে উত্তম। আল্লহর রাস্তায় মাত্র এক সকাল এই আমল করলে ৪৯,০০০,০০০০০০০ বা ঊনপঞ্চাশ হাজার কোটি সকাল একাধারে তসবীহ পাঠ করলে যে সওয়াব হবে তার চাইতেও উত্তম। এই পরিমান সকাল একাধারে পেতে বছর (৩৬৫ দিন হিসাবে) লাগে ১৩৪,২৪,৬৫,৭৫৩ বছর (একশ চৌত্রিশ কোটি চব্বিশ লক্ষ পয়ষট্টি হাজার সাতশ তিপ্পান্ন) বছর।
নামাজে তাকবীরে উলা’র ফজীলতঃ
নামাজে তাকবীরে উলা’র ফজীলত হল ১০০০ উট দান করার ন্যায়। আল্লহর রাস্তায় গিয়ে তাকবীরে উলা’ পেলে ঊটের পরিমাণ হবে ১০০০ X ৪৯,০০০,০০০০০০০ = ৪৯০,০০০০০,০০০০০০০ টি (চারশ নব্বই লক্ষ কোটি টি)। আর খরচের হিসাবে এই সওয়াব নিরুপণ করতে গেলে উক্ত অঙ্কের সাথে একটি উটের দাম এবং আল্লহর রাস্তায় খরচের সাওয়ার আরও ৭০০,০০০ (সাত লক্ষ) গুন বৃদ্ধি পাবে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, যদি একটি ঊটের বাজার মূল্য ১০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা হয় তবে আল্লহর রাস্তায় নামাজে তাকবীরে উলার ফজীলত হবে কমপক্ষে ৪৯০,০০০০০,০০০০০০০ X ১০০,০০০ X ৭০০,০০০ = ৩৪৩০০,০০০০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০ (চৌত্রশ হাজার তিনশ কোটি কোটি কোটি) টাকা সদকা করার ন্যায়। জুমা মাসজিদে এই নামাজ আদায় করলে সাওয়াব আরো ৫০০ গুন বেশি হবে, অর্থাৎ সেক্ষেত্রে তাকবীরে উলার ফজিলত হবে ৫০০ X ৩৪৩০০,০০০০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০ = ১৭১৫ ০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০ (এক কোটি একাত্তর লাখ পঞ্চাশ হাজার কোটি কোটি কোটি) টাকা সদকা করার তুল্য। হজ্জ মেহনতের সাথে হজ্জের সফর হলে বায়তুল্লাহ তে এই সাওয়াব হবে জুমা মাসজিদের তুলনায় আর দুইশ গুন অর্থাৎ ২০০ X ১৭১৫ ০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০ = ৩৪৩, ০০০০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০ (তিনশ চৌত্রিশ কোটি কোটি কোটি কোটি) টাকা এবং মাসজিদে নববীতে এই সাওয়াব হবে জুমা মাসজিদে ১০০ গুন অর্থাৎ ১০০ X ১৭১৫ ০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০ = ১৭১৫, ০০০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০ (একশ একাত্তর কোটি পঞ্চাশ লক্ষ কোটি কোটি কোটি) টাকা সদকা করার সমতুল্য। মেসওয়াক করে নামাজ আদায় করলে এই সওয়াব আরও ৭০ গুন করে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে। সেক্ষেত্রে আল্লহ'র রাস্তায় গিয়ে মেসওয়াক করে জুমা মাসজিদে তাকবীরে উলার সাথে নামাজ আদায় করলে সওয়াব হবে ৭০ X ১৭১৫ ০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০ = ১২০০৫ ০০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০,০০০০০০০ (বার হাজার পাঁচ লক্ষ কোটি কোটি কোটি) টাকা সদকা করার মত।
জানাজা নামজের ফজিলতঃ
আল্লর রাস্তায় বের হলে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে জানাজা নামাজে শরীক হওয়ার মওকা হয় যেমন বিশ্ব ইস্তেমা, হজ্জের সফর, পুরানো সাথীদের জোড়ের মজমা ইত্যাদি। হাদীসে পাকে বর্ণিত আছে, জানাজা নামাজে শরীক হলে কেউ এক কিরাত সওয়াব লাভ করে আর এই এক কিরাত বিরাট পর্বততুল্য নেকীর বরাবর। আল্লহর রাস্তায় কোন জানাজায় শরীক হওয়া নসীব হলে তা ৪৯,০০০,০০০০০০০ বা ঊনপঞ্চাশ হাজার কোটি পর্বততুল্য বরাবর সওয়াব রাখে।
সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজের ফজিলতঃ
হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১২ রাকাত সুন্নাতে মোয়াক্কাদা নামাজ আদায় করবে জান্নাতে তার জন্য (ঐদিন গুলোতে) একটি মহল তৈরী হবে। সুন্নাতে মোয়াক্কাদা নামাজগুলো হলো- ফজরের ফরজের আগের ২ রাকাত, জোহরের ফরজের আগে ৪ এবং পরে ২ রাকাত, মাগরিবের ফরজের পরে ২ রাকাত এবং ইশার ফরজের পরে ২ রাকাত। আল্লহর রাস্তায় এ সকল সুন্নাতে মোয়াক্কাদা নামাজের এহতেমাম করলে মহল তৈরী হবে ১০ X ৪৯০০০,০০০০০০০ = ৪,৯০,০০০,০০০০০০০ (চার লক্ষ নব্বই হাজার কোটি) টি।
ইশরাক্ব নামাজের বিশেষ ফজিলতঃ
সূর্য ওঠার পরে ইশরাক্বের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত আছে, একটি কবুল হজ্জ্ব এবং একটি কবুল উমরা’র সওয়াব দেয়া হবে। আল্লহর রাস্তায় এই আমল করা অত্যন্ত সহজ এবং মাত্র দুই রাকাত নামাজ আদায় করেই ৪৯,০০০,০০০০০০০ টি বা ঊনপঞ্চাশ হাজার কোটি কবুল হজ্জ্ব এবং সমান সংখ্যক কবুল উমরা’র সওয়াব হাসিল করা যায়।
দীনী মজমার ফজিলতঃ
হাদীসে বর্ণিত আছে, দীনের এক বৈঠক ৬০ বছরের ইবাদত থেকেও উত্তম। আল্লহর রাস্তায় রোজানা বহুবার দীনী মজমা কায়েম করা হয়। আর প্রত্যেক দীনের মজমাই জিকিরের মজমা। সেক্ষেত্রে আল্লর রাস্তায় কায়েম করা প্রত্যেক দীনী মজমায় শরীক থাকলে সওয়াব পাওয়া যাবে ৬০ X ৪৯,০০০,০০০০০০০ = ২৯,৪০,০০০,০০০০০০০ (ঊনত্রিশ লক্ষ চল্লিশ হাজার কোটি) বছর ইবাদতের সওয়াব।
বাজারের দোয়া পড়ার ফজীলতঃ
আল্লহর রাস্তায় খেদমতের আঞ্জাম দেয়া, ব্যক্তিগত জরুরত এবং দাওয়াতের জন্য প্রায় রোজানা বাজারে যাবার দরজার হয়। হাদীদের বরাত অনুযায়ী, বাজারে যাবার প্রাক্কালে দোয়া পড়লে দশ লক্ষ নেকী হয়, দশ লক্ষ গুনাহ মাফ হয় এবং দশ লক্ষ মর্তবা বুলন্দ হয়।দোয়াটি হল- (لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، يحيي ويميت وهو حي لا يموت، بيده الخير وهو على كل شيء قدير) অন্য বর্ণনায় মর্তবা বুলন্দের পরিবর্তে জান্নাতে মহল তৈরির কথা বর্ণিত আছে। আল্লহর রাস্তায় গিয়ে এই দোয়া একবার পড়লে ১০,০০০০০ X ৪৯,০০০,০০০০০০০ = ৪৯০০,০০০০০০০,০০০০০০০ (চার হাজার নয়শ কোটি কোটি) নেকী হবে, এত গুনাহ মাফ হবে এবং এত মর্তবা বুলন্দ হবে।
বিশ লাখ নেকীর দোয়ার ফজীলতঃ
হাদীসে বর্ণিত আছে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লহু অয়া’হদাহু লা শারিকালাহু আ’হাদান সমাদাল লাম ইয়ালিল অয়ালাম ইউ-লাদ। ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আ’হাদ্দ” (لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، أَحَدًا صَمَدًا ، لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ) এই দোয়া পড়লে বিশ লক্ষ নেকী হয়। আল্লহর রাস্তায় গিয়ে এই দোয়া পড়লে নেকী হবে ২০,০০০০০ X ৪৯,০০০,০০০০০০০ = ৯৮০০,০০০০০০০,০০০০০০০ (নয় হাজার আটশ কোটি কোটি) টি।
দুরুদের ফজীলতঃ
একবার দুরুদ শরীফ পাঠ করলে ১০ টি নেকী লাভ, ১০ টি গুমাহ মাফ এবং ১০ টি মর্তবা বুলন্দ হয়। আল্লহর রাস্তায় গিয়ে প্রত্যেক বার দুরুদ পড়লে ৪৯০,০০০,০০০০০০০ টি অর্থাৎ চার লক্ষ নব্বই হাজার কোটি নেকী হবে, সমপরিমান গুনাহ মাফ হবে এবং ঐ পরিমাণ মর্তবা বুলন্দ হবে।
বিশেষ একটি দুরুদ “জাঝাল্লহু ’আন্না- মু’হাম্মাদাম বিমা- হুয়া আহলুহ” (جَزَى اللَّهُ عَنَّا مُحَمَّدًا بِمَا هُوَ أَهْلُهُ) পাঠ করলে ৭০ জন ফেরেশ্তা লাগাতার পাঠকারীরে জন্য ১০০০ দিন সওয়াব লিখতে থাকে। আল্লহর রাস্তায় গিয়ে এই দুরুদ পাঠ করলে সাধারন অবস্থার চাইতে আরো যদি ঊনপঞ্চাশ হাজার কোটি গুন বৃদ্ধি পায় তাহলে কত বিপুল নেকী হাসিল করা যায়!
আল্লহর রাস্তায় অবস্থানের বিশেষ ফজীলতঃ
হাদীসে বর্ণিত আছে, আল্লহর রাস্তায় কিছুক্ষণ অবস্থান করা হাজারিল-আসওয়াদের নিকট শবে ক্বদরে দাঁড়িয়ে ইবাদাত করার চাইতে উত্তম। কোরানের বর্ণনা অনুসারে, শবে ক্বদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। আর বায়তুল্লাহতে নামাজ পড়লে তা ১০০,০০০ (এক লক্ষ) গুন সওয়াব বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। কাজেই আল্লহর রাস্তায় কিছুক্ষণ অবস্থান করলে কমপক্ষে ১০০০ X ১০০,০০০ = ১০,০০০০০০০ (দশ কোটি) মাস বা তিরাশি লক্ষ তেত্রিশ হাজার তিনশ তেত্রিশ বছর চার মাস ধরে একাধারে নামাজ পড়লে যে সওয়াব হয় তার চাইতেও উত্তম সওয়াব লাভ করা যায়।
শবে ক্বদর লাভের ফজীলতঃ
মাগরিব এবং ইশা’র নামাজের মাঝে সূরা মুলক আর সূরা সিজদা পড়লে শবে ক্বদরের সওয়াব হাসিল হয়। আল্লহর রাস্তায় এই আমল একবার করলে কমপক্ষে ৪৯,০০০,০০০০০০০ বা ঊনপঞ্চাশ হাজার কোটি শবে ক্বদরের সওয়াব একবারে হাসিল করা যায়। অপর দিকে আল্লহর রাস্তায় সূরা সিজদা পড়ে ওয়াজিব সিজদা আদায় করলে ৪৯,০০০,০০০০০০০ (ঊনপঞ্চাশ হাজার কোটি) টি ওয়াজিব সিদজা আদায়ের সওয়াব লাভ হবে।
আমলে জারিয়ার ফজিলতঃ
আমলে জারিয়া বলতে বিশেষ কোন একটি আমলকা বোঝায় না বরং কোন আমলকে চালু করে যাওয়াকে বোঝায়। হাদীসে বর্ণিত আছে, কেউ যদি কোন নেক আমলের পথ দেখায় তবে সে উক্ত নেক আমলের সওয়াব লাভ করে। আর কেউ যদি কোন নেক আমলকে চালু করে দেয় তবে উক্ত নেক আমল যতদিন মানুষ করতে থাকবে তার সমুদয় সওয়াব উক্ত ব্যক্তি কেয়ামত পর্যন্ত পেতে থাকবে। আমরা নিজেরা আল্লহর রাস্তায় মেহনত করার পাশাপাশি যদি আরো মানুষকে এই মেহনতের উপরে তাশকিল করে নিয়ে আসতে পারি তাহলে এই সকল মানুষের সমুদয় সওয়াব আমরা মউতের পরেও হাসিল করতে থাকবো ইনশাআল্লহ। এই ধারাবাহিকতা যতদিন চলতে থাকবে ততদিন আল্লহ পাক আমল শুরু করনেওয়ালাকে সওয়াব দিতে থাকবেন।
আখির গুজারিশঃ
এই সমুদয় পরিমান দান করা আল্লহ পাকের শানের কাছে কিছুই না। আল্লহ পাকের দানের সীমারাখা আমাদের কল্পনার অতীত। সমস্ত নিয়ামতের চাইতে বড় নিয়ামত হল আল্লহ পাকের রেজামন্দি। আল্লহ পাক খুশি থাকলে সমস্ত কিছু হাসিল করা সম্ভব। আল্লহ পাক কোরানে বলেন, যে একটা নেক আমল নিয়ে আসবে সেটা ১০ গুন বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। হাদীসের বর্ণনায় আছে, কোন নেক আমল করলে তার সওয়াব ১০ থেকে ৭০ গুন বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। কোন নেক আমলই আল্লহ পাকের রাস্তার মেহনতের বদল হতে পারে না। অতি অল্প সময়ে আখিরাত কামাই করার মত এত বড় সুযোগ আল্লহ পাকের রাস্তা ছাড়া সম্ভব নয়। রাসূলুল্লহ (সাঃ) যথার্থই ইরশাদ করেছেন, আল্লহ পাকের রাস্তার এক সকাল অথবা এক বিকাল দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চাইতেও উত্তম। কাজেই আমরা নিয়ত করি, আমদের জিন্দেগির বেশীরভাগ সময় যেন আল্লহ পাকের রাস্তায় দীনের মেহনতের সাথে কাটে। আল্লহ পাক আমাদের কে বেশী বেশী করে দীনের মেহনত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
সহায়ক গ্রন্থাবলিঃ
১। মুন্তাখাব হাদীস
২। ছিলাহুল মু’মিন
৩। ফাযায়েলে আমল
৪। ফাযায়েলে দুরুদ
৫। অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ